- SCHOOL BOARDS
- WBBSE/WBCHSE
- CLASS 9
- HISTORY
- ১. ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক
- প্রথম অধ্যায় ফরাসি বিপ্লব,ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক- রচনাধর্মী বড়ো প্রশ্ন উত্তর
প্রথম অধ্যায় ফরাসি বিপ্লব,ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক- রচনাধর্মী বড়ো প্রশ্ন উত্তর
Language : Bengali
The Note contains Textual Question Answers from WBBSE Class 9 History Chapter 1 Forasi Biplob O Forasi Biplober Koyekti Dik (প্রথম অধ্যায় ফরাসি বিপ্লব, ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক). Read the Question Answers carefully. This Question Answer set from the WBBSE board provides quality Multiple Choice Questions (MCQ), Short Answer Type Questions (SAQ), and Long Answer Type Questions from the above chapter. By reading these, students will get a clear idea about that chapter. It will enhance their knowledge and enable them to get good marks in the board exams.
Class 9 History Chapter 1 Forasi Biplob O Forasi Biplober Koyekti Dik (ফরাসি বিপ্লব)
Short Answer Type Question (SAQ) from Farasi Biplob O Forasi Biplober Koyekti Dik,
Long Answer Type Question from Forasi Biplob O Farasi Biplober Koyekti Dik,
Class 9 History Chapter 1 French Revolution,
নবম শ্রেণি ইতিহাস প্রথম অধ্যায় ফরাসি বিপ্লব , ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক ,
নবম শ্রেণি ফরাসি বিপ্লব সম্পূর্ণ আলোচনা ও অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর,
নবম শ্রেণি ইতিহাস ফরাসি বিপ্লব থেকে সংক্ষিপ্ত, রচনাধর্মী ও ব্যাখ্যা ধর্মী প্রশ্নোত্তর
প্রথম অধ্যায় ফরাসি বিপ্লব, ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক
রচনাধর্মী বড়ো প্রশ্ন উত্তর :
1. ফরাসি বিপ্লবের সামাজিক কারন লেখ।
উঃ - ফ্রান্সের অধিবাসী ফরাসিরা 1789 খ্রিষ্টাব্দে যে বিপ্লব ঘটিয়েছিল তা ফরাসি বিপ্লব নামে পরিচিত। ফরাসি বিপ্লব ছিল বিশ্ব ইতিহাসের এক যুগান্তকারী ঘটনা। এই বিপ্লবের মাধ্যমে ফরাসি জনগণের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ -এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
সামাজিক কারন : ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম প্রধান কারন ছিল ফরাসি সমাজে বৈষম্য ও শোষণ। শ্রেণিবিভক্ত ফরাসি সমাজ ব্যবস্থা মধ্যযুগীয় সামন্ততন্ত্রের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল , ফরাসি সমাজে এই সময় প্রধান তিনটি শ্রেণি বর্তমান ছিল।
প্রথম শ্রেণী - ধর্ম যাজক সম্প্রদায় ফ্রান্সের সমাজে প্রথম শ্রেণি ভুক্ত ছিলেন। এরা ছিলেন সুবিধাভোগী এবং সংখ্যায় ফরাসি জনগনের 1 শতাংশ। এদের মোট সংখ্যা ছিল 1 লক্ষ 20 হাজার অথচ এদের দখলে ছিল ফ্রান্সের মোট জমির 10%, এই জমির জন্য তারা রাজাকে কোনো কর দিত না, জমি ও ধর্ম কর নিয়ে গির্জার আয় হত প্রায় 10 কোটি লিব্র। প্রথম শ্রেণির মধ্যে আবার উচ্চ যাজক ও নিম্ন যাজকদের মধ্যে বৈষম্য ছিল। এরা সম্পত্তি ভোগ ও বিলাস ব্যসনে জীবন যাপন করত।
দ্বিতীয় শ্রেণি - অভিজাত সম্প্রদায় ছিল ফ্রান্সের দ্বিতীয় শ্রেণি। বিপ্লবের সময় ফ্রান্সে অভিজাতদের মোট সংখ্যা ছিল 3 লক্ষ 50 হাজার। অভিজাতরা সংখ্যায় সামান্য হলেও ফ্রান্সের কৃষি জমির 12 অংশ ছিল অভিজাতদের হাতে। এই জমির জন্য তারা সরকারকে কোনো ভূমিকর দিত না। অভিজাতরা তাদের বংশ মর্যাদার জোড়ে বিভিন্ন ধরণের সুযোগ সুবিধা আদায় করত। প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগের উচ্চপদগুলির তাদের হাতেই ছিল।
তৃতীয় শ্রেণি - ফরাসি সমাজ ব্যবস্থায় দুঃস্থ কৃষক, দিনমজুর, প্রমুখ দরিদ্র জনগোষ্ঠী তৃতীয় সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ধনী বুর্জোয়ারা ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ -সম্পদের মালিক হলেও তারা কখনোই অভিজাতদের সমান সামাজিক মর্যাদা ও অধিকার পেত না। তৃতীয় শ্ৰেণীর একটি বড়ো অংশের মানুষ ছিল দরিদ্র কৃষক, কারিগর, দোকানদার, দিনমজুর প্রমুখ। অনাহার, অর্ধাহার, অত্যাচার ও শোষণে অতিষ্ট হয়ে এই দরিদ্ররা ফ্রান্সের প্রচলিত সমাজব্যবস্থার উপর ক্ষুব্ধ ছিল।
2. বিপ্লবের আগে ফ্রান্সের বৈশম্য মূলক কর ব্যবস্থার পরিচয় দাও।
অর্থনীতিবিদ আডাম স্মিথ বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সকে ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর বলে অভিহিত করেছেন। এই ভ্রান্ত অর্থনীতির অন্যতম দিক ছিল দেশের বৈষম্য মূলক ও বিভ্রান্তিমূলক কর ব্যবস্থা, কেননা কর ব্যবস্থায় অধিকারভোগী যাজক ও অভিজাত সম্প্রদায় এবং অধিকারহীন তৃতীয় সম্প্রদায়ের কৃষকদের জন্য পৃথক নীতি ছিল।
অধিকারভোগী শ্রেণি - অধিকারভোগী যাজক ও অভিজাতদের হাতে ফ্রান্সের 50 % -এর বেশি কৃষি জমি ছিল। অথচ এই বিপুল পরিমান জমির জন্য তারা সরকারকে কোনো প্রকার কর প্রদানে বাধ্য ছিল না। তারা রাষ্ট্র ও সমাজ থেকে যেসব বিশেষ সুবিধা ভোগ করত, তার জন্যেও তাদের কোনো কর দিতে হত না।
অধিকারহীন শ্রেণি - অধিকারভোগী সম্প্রদায়গুলি কর প্রদান থেকে অব্যহতি পাওয়ায় দরিদ্র কৃষক সম্প্রদায়কে করের বিপুল বোঝা বহন করতে হতো। ঐতিহাসিক লাব্রুজ বলেছেন, যে অষ্টাদশ শতকে ফ্রান্সের কৃষকরা ছিল সর্বাপেক্ষা শোষিত শ্রেণি। দেশের সমগ্র রাজত্বের 96% তৃতীয় সম্প্রদায়কে দিত।
বিভিন্ন কর - রাষ্ট্র, সামন্ত প্রভু ও গির্জা তৃতীয় শ্রেণির কাছ থেকে বিভিন্ন ধরণের কর আদায় করত। যেমন - টাইলে বা ভূমিকর, ক্যাপিটেশন বা উৎপাদন কর, ভিটিংয়েমে বা আয়কর, গ্যাবলা বা লবণকর, টাইদ বা ধর্মকর, করভি বা বাধ্যতামূলক বেগারশ্রম প্রভৃতি। এত রকম কর মিটিয়ে কৃষকদের হাতে তার মোট আয়ের মাত্র 15 অংশ অবশিষ্ট থাকত। তা দিয়ে তাদের ভরন -পোষন চলত না।
3. ফরাসি বিপ্লবের জন্য দার্শনিকরা কতটা ভূমিকা পালন করেছিল ?
উঃ - অষ্টাদশ শতাব্দী ছিল ইউরোপীয় দার্শনিকদের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত শতাব্দী। এই শতাব্দীতে ফরাসী দার্শনিক ও লেখকদের লেখনী ফরাসি বিপ্লবের মানসিক ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল। তাঁরা সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্ম, সবক্ষেত্রে অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করে পুরাতন ব্যবস্থার ভীত নাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
দার্শনিকদের ভূমিকা -
মন্তেস্কু - ফরাসি দার্শনিক, পেশায় আইনজীবি মন্তেস্কু রচনা করেন ‘দ্য পার্সিয়ান লেটার্স’ এবং ‘দ্য স্পিরিট অব লজ’ গ্রন্থ। পার্সিয়ান লেটার্স গ্রন্থে তিনি দেখিয়েছেন যে, অভিজাতরা অন্যায়ভাবে সকলকে বঞ্চিত করে। সমাজের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। আবার ‘দ্য স্পিরিট অফ লজ’ গ্রন্থে তিনি রাজার ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতা ও স্বৈরাচারী শাসনের তীব্র সমালোচনা করেছেন। এছাড়া তিনি ফ্রান্সের শাসন, বিচার ও আইন বিভাগের সম্পূর্ণ পৃথকীকরণের দাবীও জানিয়েছেন এই গ্রন্থে।
ভলতেয়ার - ভলতেয়ার ছিলেন একাধারে দার্শনিক, সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক, প্রাবন্ধিক ও কবি প্রতিভার অধিকারী। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল ফ্রাঁসোয়া মারি আরোয়েৎ, তাঁর রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ হলো ‘কাঁদিদ’ ও ‘লেতর ফিলজফিক’ এই গ্রন্থ দুটিতে তিনি ধর্মীয় অনাচার ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি ক্যাথোলিক গির্জাকে বিশেষ অধিকার প্রাপ্ত উৎপাত বলে অভিহিত করেছেন।
রুশো - ফ্রান্সের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় দার্শনিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ছিলেন ফরাসি বিপ্লবের জনক নামে খ্যাত জাঁ জেকুইস রুশো, তাঁর রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ হল - ‘সামাজিক চুক্তি’ এবং ‘অসাম্যের উৎস’ প্রথমোক্ত গ্রন্থে তিনি দেখিয়েছেন যে রাজা ঈশ্বরের প্রতিনিধি নন, চুক্তির মাধ্যমে রাজপদের সৃষ্টি হয়েছে। জনগণই হলো ক্ষমতার উৎস এবং প্রকৃত শক্তির অধিকারী।
দিদেরো ও এলেমবার্ট - ফরাসি দার্শনিক দিদেরো ও দ্য এলেমবার্ট 35 খন্ডের একটি বিশ্বকোষ সংকলন করেন। দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, সাহিত্য প্রভৃতিতে সমৃদ্ধ এই বিশ্বকোষ পাঠ করে ফরাসিদের চিন্তাধারায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। দিদেরো বলেছেন মানুষ তার চারপাশের অবস্থার পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বলেই জীবজগতের শ্রেষ্ঠ। তার কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ফরাসি জাতি নিজ ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে তৎপর হয়ে ওঠে।
ফিজিওক্রাটস - ফরাসি বিপ্লবের প্রাক -কালে ফিজিওক্রাটস নামে একদল অর্থনীতিবিদদের আবির্ভাব হয়। এরা অর্থনীতিক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে অবাধ বাণিজ্য ও শিল্পে বেসরকারিকরণের পক্ষপাতী ছিলেন।এই গোষ্ঠীর নেতা ছিলেন কুয়েসনে।
4. ফরাসি বিপ্লবের নারীদের অংশ গ্রহণের বিবরণ দাও।
উঃ - 1789 খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি রাজা ষোড়শ লুই স্টেটস জেনারেলের অধিবেশন ডাকলে বুর্জোয়ারা সেখানে তিন সম্প্রদায়ের একত্রে অধিবেশনে বসে এবং সদস্যদের মাথাপিছু ভোটের দাবি জানায়। বিপদগ্রস্থ রাজা বাধ্য হয়ে তা মেনে নিলেও খুব শীঘ্রই মূল্য বৃদ্ধি, খাদ্যাভাব প্রভৃতি ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃতীয় শ্রেণির লোকেরা বিপ্লবে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
খাদ্যাভাব -1789 খ্রিষ্টাব্দের দ্বিতীয় ভাগে ফ্রান্সের গ্রামাঞ্চলে খাদ্যাভাব চরম আকার ধারণ করে। খাদ্যের দাবিতে প্যারিসে দাঙ্গা -হাঙ্গামা শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে খাদ্যের দাবিতে প্রায় 6000 মহিলা 5 ই অক্টোবর প্রবল বৃষ্টিপাত উপেক্ষা করে মিছিল করে ভার্সাই রাজপ্রাসাদ অভিযান করে। ‘রুটি চাই’ ধ্বনিতে মিছিল মুখরিত হয়।
রাজতন্ত্রের শবযাত্রা - আন্দোলনকারী নারীরা 6 ই অক্টোবর রাজপ্রাসাদের রক্ষীদের হত্যা করে এবং সমগ্র রাজপরিবারকে বন্দী করে প্যারিসে আসতে বাধ্য করে। ঐতিহাসিক রাইকার এই ঘটনাকে রাজতন্ত্রের শবযাত্রা বলে উল্লেখ করেছেন।
5. সন্ত্রাসের রাজত্ব চালু হওয়ার কারণ কী ?
উঃ - ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুইএর মৃত্যু দণ্ডের পর থেকে বিপ্লবী ফ্রান্স আভ্যন্তরীন ও বৈদেশিক উভয় দিক থেকে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। এই পরিস্থিতিতে তিনি এক জরুরি শাসন চালু করেন যা সন্ত্রাসের শাসন নামে পরিচিত।
অভ্যন্তরীন কারন - অভ্যন্তরীন ক্ষেত্রে ফ্রান্স নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়। রাজতন্ত্রের সমর্থনে এবং বিপ্লবের বিরুদ্ধে দেশে বিপ্লব বিরোধী আন্দোলন ক্রমে জোরদার হয়।
কিছু লোক সরকারি আইন অগ্রাহ্য করে এবং সরকারকে কর প্রদান বন্ধ করে দেন।
ফরাসি যুবকরা সেনাদলে যোগ দিতে অস্বীকার করে। এরকম সংকটের পরিস্থিতিতে ফ্রান্সে বিপ্লবী সরকারের পতনের সম্ভাবনা দেখা দেয়।
বৈদেশিক কারণ - ইউরোপের বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি ফ্রান্সে বিপ্লবের প্রসারে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে।
ইংল্যান্ড, অষ্ট্রিয়া, প্রাশিয়া, স্পেন, পর্তুগাল প্রভৃতি দেশ ফ্রান্সের বিপ্লবী সরকারকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে 1793 খ্রিস্টাব্দে প্রথম শক্তিজোট গঠন করে।
শত্রুপক্ষ ফ্রান্সের সীমানা অতিক্রম করে দ্রুত প্যারিসের দিকে ছুটে আসে।
এইসময় বিপ্লবী ফ্রান্সের সেনাপতি ডুমুরিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করে অষ্ট্রিয়ার পক্ষে যোগ দেয়।
6. ফরাসি বিপ্লবের অর্থনৈতিক কারণ লেখ।
ফরাসি বিপ্লব (1789 খ্রি:) আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ঐতিহাসিক কোবান ফরাসি বিপ্লবকে অসংখ্য ছোটো বড়ো খরস্রোতা নদীর সমন্বয়ে ছড়িয়ে পড়া ভয়ানক বন্যার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
সরকারি অপব্যয় - ফরাসি রাজপরিবার অকাতরে অর্থব্যয় করে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক শক্তিকে দুর্বল করেছেন। চতুর্দশ লুই (1643-1715 খ্রি:), পঞ্চদশ লুই (1715 - 74 খ্রি:) ও ষোড়শ লুই -এর আমলে সম্রাট সহ রাজপরিবার অমিতব্যয়ী ও বিলাসিতা চরমে পৌঁছায়। ফলে ফরাসি রাজকোশ শুন্য হয়ে যায়।
ব্যায়বহুল যুদ্ধ - চতুর্দশ ও পঞ্চদশ লুই বিভিন্ন ব্যায়বহুল যুদ্ধে অংশ নিয়ে বিপুল অর্থ ব্যায় করেন। ষোড়শ লুই আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিলে প্রচুর লোক ও অর্থ ব্যয় হয়।
অধিকারভোগীদের আয় - ফ্রান্সের প্রায় অর্ধেক কৃষিজমি ছিল যাজক ও অভিজাতদের হাতে। জমি থেকে বিপুল আয় সত্বেও তারা সরকারকে টাইলে বা ভূমিকর, ক্যাপিটেশন বা আয়কর দিত না। তা সত্বেও তারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ -সুবিধা ভোগ করত।
তৃতীয় শ্রেণির করের বোঝা - রাষ্ট্র, গির্জা ও জমিদাররা তৃতীয় শ্রেণির কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের কর আদায় করত। টাইলে, ক্যাপিটেশন, ভিংটিয়েম, লবণ কর, ভোগ্য পণ্যের উপর কর, যাজকদের টাইদ বা ধর্মকর, এইদস বা মদ, তামাক প্রভৃতির কর, করভি, অন্যান্য অতিরিক্ত কর প্রভৃতি দিতে বাধ্য হতো। এতরকম কর মিটিয়ে কৃষকদের হাতে উৎপন্ন ফসলের 20 শতাংশ পড়ে থাকত।
মধ্যবিত্তদের দুরাবস্থা - অর্থনীতিবিদ আডাম স্মিথ মনে করেন যে বিপ্লবের আগে ফ্রান্স ছিল ‘ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর’, ত্রুটিপূর্ণ অর্থনীতির জন্য দেশে দ্রব্যমূল্য ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেলে, দরিদ্র মানুষ সীমাহীন দুর্দশার মুখে পড়ে। খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্যের মূল্য গরীব মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। অন্যদিকে ধনী বুর্জোয়া ব্যবসায়ী, শিল্পপতিরা স্বাধীন ও অবাধ বাণিজ্যের জন্য শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণ লোপের দাবি জানায়।
এই সমস্ত বিভিন্ন কারনে ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল।
7. সন্ত্রাসের রাজত্বের গুরুত্ব লেখ।
ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসনের বিভিন্ন কৃতিত্ব বা সাফল্য ছিল। যথা -
১) সন্ত্রাসের শাসনের ফলে ফ্রান্সের প্রতিবিপ্লবী কার্যকলাপ দমিত হয় এবং অরাজকতা ও গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে। বিদেশী শক্তিগুলির আক্রমনের হাত থেকেও বিপ্লবী ফ্রান্স রক্ষা পায়।
২) গির্জাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
৩) প্রচলিত খ্রিস্টান কর্মপন্জী বাতিল করে প্রজাতান্ত্রিক কর্মপন্জী চালু করা হয়।
৪) নতুন মাপ, ওজন ও মুদ্রা ব্যবস্থায় দশমিক প্রথা চালু করা হয়।
৫) বিভিন্ন দ্রব্যের সর্বোচ্চ মূল্য ও মজুরির সর্বনিন্ম হার বেঁধে দেওয়া হয়।
৬) অভিজাতদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তা কৃষকদের মধ্যে বিলি করা হয়।
৭) দাস প্রথার অবসান ঘটানো হয়।
৮) খাবারের জন্য রেশন কার্ড চালু করা হয়।
৯) অবৈতনিক সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হয়।
১০) 10 লক্ষ সেনার এক বিশাল সেনাবাহিনী গড়ে তোলা হয়।
1) অভিজাত বিদ্রোহ - অর্থনৈতিক সংকট দূর করার উদ্দেশ্যে ফরাসি রাজা ষোড়শ লুই 1788 খ্রিস্টাব্দে দেশের সমস্ত প্রাদেশিক পার্লামেন্ট মুলতুবি করেন এবং সকল সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কর আদায়ের উদ্যোগ নেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সুবিধাভোগী অভিজাত শ্রেণি রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। এই ঘটনাকে ঐতিহাসিক জর্জ রুডে “অভিজাত বিদ্রোহ” বলে উল্লেখ করেছেন।
2) প্যারি কমিউন - বাস্তিল দুর্গের পতনের পর বিপ্লবী জনতা প্যারিস শহরের পৌরশাসন পরিচালনার উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করে -এটি প্যারি কমিউন নামে পরিচিত।
3) সেপ্টেম্বর হত্যাকান্ড - 1792 খ্রিষ্টাব্দে 2-6 সেপ্টেম্বর উন্মত্ত ও হিংস্র জনতা জেকোবিন নেতা ম্যারাটের নেতৃত্বে কারাগার গুলিতে যে হত্যাকান্ড চালায় তা সেপ্টেম্বর হত্যাকান্ড নামে পরিচিত।
8. ফরাসি সংবিধান সভার কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা করো।
ফরাসি জাতীয় সভা 1789 খ্রিস্টাব্দের 9 ই জুলাই সংবিধান সভায় রূপান্তরিত হয়। এই সভার সংখ্যা গরিষ্ঠ সদস্যরা ছিলেন মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রতিনিধি।
সংবিধান রচনার আগের কাজ :
i. সামন্ততন্ত্রের বিলোপ - ফরাসি জাতীয় সভা 1789 খ্রি: 4 ই আগষ্ট থেকে 11 ই আগষ্টের মধ্যে ফ্রান্সে সামন্ততন্ত্রের বিলোপ ঘোষণা করে। এর দ্বারা সামন্ত প্রথা, ভূমিদাসপ্রথা, বেগার খাটা, ধর্মকর আদায় ইত্যাদি বিলুপ্ত হয়।
ii. ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারপত্র - আগে 2nd পাতায় লেখা আছে।
সংবিধান দ্বারা বিভিন্ন কাজ -
i. শাসনতান্ত্রিক সংস্কার - সংবিধানের মাধ্যমে বিভিন্ন শাসনতান্ত্রিক সংস্কার করা হয়। শাসন, আইন - বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ পৃথক করা হয়। রাজার ক্ষমতা খর্ব করে ফ্রান্সে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। রাজার দেব অধিকার বাতিল করে তাকে ফরাসি জাতির রাজা বলে ঘোষণা করা হয়। সম্পত্তির পরিমানের ভিত্তিতে জনগণকে সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় দুইভাগে ভাগ করে সক্রিয় নাগরিকদের ভোটাধিকার দেওয়া হয় এবং ফরাসি প্রদেশকে 83 টি ডিপারমেন্ট -এ ভাগ করা হয়।
ii. অর্থনৈতিক সংস্কার - দেশের তীব্র অর্থ সংকট দূর করার উদ্দেশ্যে সবরকমের পরোক্ষ কর তুলে দেওয়া হয়। জমি ও অস্থাবর সম্পত্তির উপর কর আরোপ করা হয়। গির্জার যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। শ্রমিকদের ধর্মঘট ও Trade Union করার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়।
iii. বিচার বিভাগের সংস্কার - সামন্ত প্রভুদের বিচারালয় গুলি বিলুপ্ত হয়। জনগণের নির্বাচনের দ্বারা বিচারক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফৌজদারী মামলায় ‘জুরি’ প্রথা চালু হয়। বিনা বিচারে কাউকে বন্দী করা নিষিদ্ধ হয় এবং নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালত আপিল করার সুযোগ দেওয়া হয়।
iv. গির্জা ব্যবস্থার সংস্কার - গির্জার যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে, সেই সম্পত্তির আমানতের ভিত্তিতে কাগজের মুদ্রা আসাইনেট চালু করে। সিভিল কনস্টিটিউশন অব দ্য ক্ল্যার্জি নামক দলিল দ্বারা গির্জার ওপর পোপের আধিপত্য খর্ব করা হয় এবং যাজকদের বেতন প্রদানের নিয়ম চালু করা হয়।
v. মূল্যায়ন - ফরাসি সংবিধান সভা বিপ্লবকালে পুরাতনতন্ত্রের ব্যাপক ধ্বংসসাধন করে। ঐতিহাসিক কার্লটন হেইজ বলেছেন, এত অল্প সময়ে এত ব্যাপক ধ্বংসসাধন আর কোনো আইনসভা করতে পারে নি।
অক্টোবরের ঘটনা : ফরাসি বিপ্লবের পরবর্তীকালে রাজতন্ত্রের সমর্থক উন্মত্ত জনতা 1795 খ্রি: 5 ই অক্টোবর ফরাসি জাতীয় সভা আক্রমণ করলে ফরাসি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নেপোলিয়ান অল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করেন এবং জাতীয় সভা রক্ষা করেন যা “অক্টোবরের ঘটনা” নামে পরিচিত।
9. গ্রান্ড ডাচি অব ওয়ারশ’- কী ?
নেপোলিয়ান প্রাশিয়ার অধীনস্ত পোল্যান্ড এবং রাশিয়ার কিছু অংশ নিয়ে গ্রান্ড ডাচি অব ওয়ারশ’ প্রতিষ্ঠা করেন।
10. ফরাসি বিপ্লবের স্থায়ী ফলাফল গুলি লেখ।
ফরাসি বিপ্লবের স্থায়ী ফলাফল : ফরাসি বিপ্লব যেমন একটি যুগান্তরকারী ঘটনা তেমনি এর ফলাফলও ছিল সুদূরপ্রসারী। এই বিপ্লব ইউরোপের এক নতুন সূর্যের উদয় ঘটিয়েছিল।
1. পুরাতনতন্ত্রের অবসান - এই বিপ্লব বহু জীর্ন, পুরাতন ব্যবস্থাকে ঝেঁটিয়ে ফেলে এক নতুন ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করেছিল। স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের পতনের সঙ্গে সঙ্গে রুশোর মতবাদের প্রভাবে প্রজাতন্ত্রের প্রতি জনগণের আস্থা দেখা দিল।
2. জাতীয়তাবাদী ভাবধারার পরিবর্তন - ফরাসি বিপ্লবে যে জাতীয়তাবোধ ও দেশপ্রেমের উন্মেষ ঘটেছিল তা থেকে জাতীয়তাবাদী ভাবধারার বিকাশ ঘটে। এই বিপ্লবের অনুপ্রেরণায় জার্মানি, ইতালি, বেলজিয়াম, গ্রীস প্রভৃতি দেশে জাতীয় রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়।
3. সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতার আদর্শ : ফরাসি বিপ্লবের সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতার বাণী ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিস্তার লাভ করে। এরফলে ওইসব দেশগুলির শাসনতন্ত্রে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখা যায়। সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতার বাণীর প্রেরণায় সকল ব্যক্তিই রাষ্ট্রের প্রজা বলে স্বীকৃত হয়। নেপোলিয়ানের অভ্যুত্থানের ফলেই বিপ্লবের বাণী সমগ্র ইউরোপে দ্রুত ছড়িয়েছিল।
4. গণতান্ত্রিক শাসনের প্রতিষ্ঠা : শাসনতান্ত্রিক বিভিন্ন সংস্কারের ফলে গণতান্ত্রিক নীতি ক্রমশই জনপ্রিয় হয়। স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ফলে জনগণের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়। বাক -স্বাধীনতা, বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা, ধর্ম নিরপেক্ষতা, মৌলিক অধিকার প্রভৃতি আদর্শ গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করেছিল।
5. আধুনিক যুগের সূচনা - ফরাসি বিপ্লবের ফলে ফ্রান্সের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এক ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছিল। এভাবে সেখানে মধ্যযুগের অবসান ঘটে ও আধুনিক যুগের সূচনা হয়। ঐতিহাসিক কোবানের মতে অষ্টাদশ শতকই ছিল ফ্রান্সের ক্ষেত্রে আধুনিক যুগের সূতিকাগার।
উপসংহার : ফরাসি বিপ্লব সমগ্র ইউরোপ তথা বিশ্বের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। ফরাসি বিপ্লবের সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার বাণী যে আদর্শের উদ্ভব করেছিল আজও তা পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে যায়নি।
11. বাস্তিল দুর্গের পতন কবে হয় এবং এর গুরুত্ব কী ?
বাস্তিল দুর্গ ছিল ফরাসি স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের প্রাণকেন্দ্র। ১৭৮৯ খ্রি: ১৪ জুলাই বিক্ষুব্ধ জনতা বাস্তিল দুর্গ দখল করে এবং ধ্বংস করে। বাস্তিল দুর্গের পতন ইতিহাসে যে গুরুত্বগুলির সূচনা করে তা নিম্নরূপ -
i. ফরাসি রাজতন্ত্রের স্বৈরাচারের প্রতীক ছিল বাস্তিল দুর্গ। এই দুর্গে রাজা এবং রাজতান্ত্রিক বিরোধী ব্যক্তিদের বন্দি করে রাজক্ষমতা জাহির করা হত। এই দুর্গের পতনের ফলে ফরাসি রাজতন্ত্রের প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়।
ii. বাস্তিল দুর্গের পতন একথা প্রমান করে যে রাজধানী প্যারিসের উপর ফরাসি রাজার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
iii. বাস্তিল দুর্গের পতনের পর প্যারিস শহরের নিয়ন্ত্রণ বিপ্লবীদের হাতে চলে যায়। ফলে ফরাসি বিপ্লব অনেকগুলি ধাপ অতিক্রম করে।
iv. বাস্তিল দুর্গের পতনের পর ফ্রান্সের রাজা এবং অভিজাতরা তাদের মনবল হারিয়ে ফেলে। প্রায় ২০, ০০০ অভিজাত দেশত্যাগী হয়।
v. বাস্তিল দুর্গের পতনের ফলে রাজা জাতীয় পরিষদকে স্বীকৃতি দেন এবং রাষ্ট্রের প্রকৃত ক্ষমতা আইনসভার হাতে চলে যায়।
12. টেনিসকোর্টের শপথ কী ?
- ১৭৮৯ খ্রি: ২০ জুন ফ্রান্সের জাতীয়সভার প্রতিনিধিরা টেনিসকোর্টের মাঠে সমবেত হয়ে যে শপথ গ্রহণ করে, তা টেনিসকোর্টের শপথ নামে পরিচিত। এস্টেট জেনারেল বা জাতীয় সভার অধিবেশনে প্রতিটি সম্প্রদায়কে একটি করে ভোটের অধিকার দেওয়া হয় কিন্তু তৃতীয় সম্প্রদায়ের মানুষ এই প্রস্তাব অস্বীকার করে এবং মাথাপিছু ভোটাধিকারের দাবি জানায়। তারা, মিরাব, আবেসিয়ের নেতৃত্বে টেনিসকোর্টের মাঠে শপথ গ্রহণ করে -
i. ফ্রান্সে একটি নতুন সংবিধান রচনা না করা পর্যন্ত তারা এই স্থান ত্যাগ করবে না।
ii. তাদের মাথাপিছু ভোটাধিকারের দাবি মেনে নিতে হবে।
iii. নতুন সংবিধান রচনায় তাদের অধিকার দিতে হবে।
ফলাফল : এরপরে প্রথম দুই শ্রেণী গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে, তৃতীয় শ্রেণীর সদস্যরা জাতির নেতৃত্ব গ্রহণ করে। তৃতীয়শ্রেণির দাবি ষোড়শ লুইকে মেনে নিতে হয়।
13. ফরাসি বিপ্লব সৃষ্টিতে নারীদের ভূমিকা কী ছিল ?
1789 খ্রি: বিপ্লবে ফ্রান্সের নারীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। ফরাসি বিপ্লবে তাদের সক্রিয়তা যেভাবে ধরা পরে তা নিম্নরূপ।
i. রাজা ষোড়শ লুইকে ভারসাই প্রাসাদ থেকে ধরে আনার ক্ষেত্রে নারীরা গুরূত্বপূর্ন ভূমিকা নেয়।
ii. যুদ্ধরত সৈনিকদের জন্য তাঁবু তৈরী, ইউনিফর্ম সেলাই-এর ক্ষেত্রেও তারা সিদ্ধহস্ত ছিল।
iii. নারীরা নিজেদের ভোটাধিকারের প্রশ্নে সোচ্চার হয়েছিলেন। সমাজে পুরুষের আইনত প্রাধান্যের বিরোধিতা করেছিলেন। এক্ষেত্রে মেরিকুর ও এত্তাপালম প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।
iv. ফার্সি নারীরা এস্টেট জেনারেলে নিজেদের প্রতিনিধিত্বের দাবি জানায়, বাস্তিল দুর্গ অভিযানেও অংশগ্রহন করে।
v. ফরাসি বিপ্লবে অংশগ্রহন করে নারীরা রাজনৈতিক ক্লাব গঠনের অধিকার লাভ করেন।
14. ফরাসি বিপ্লবের পর যাজকদের অবস্থা কি ছিল ?
1789 খ্রি: ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে যাজকরা ছিল ফ্রান্সের প্রথম শ্রেণির নাগরিক। ফ্রান্সে যাজকরা নিরঙ্কুশ / প্রচুর অধিকার ভোগ করত। কিন্তু বিপ্লবের পরে তাদের অবস্থা খারাপ হয়।
i. চার্চের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তাকে জাতীয় সম্পত্তিতে রূপান্তরিত করা হয়।
ii. যাজকদের ধর্মকর আদায়ের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়।
iii. চার্চের সম্পত্তি বিক্রি করে যাজকদের সরকারি কর্মচারীরূপে গণ্য করা হয়।
iv. ঠিক হয় সরকার যাজকদের খরচের ব্যবস্থা করবে এর বিনিময়ে যাজকরা সরকারের নিয়মকানুন মেনে চলবে।
15. সংবিধান সভা কবে তৈরি হয় ? সংবিধান সভার কার্যাবলী কি কি ছিল তা আলোচনা করো।
জাতীয় সভা টেনিসকোর্টের শপথ অনুসরণ করে সংবিধান রচনায় অবতীর্ন হয়। প্রায় দু-বছরের চেষ্টায় এই সংবিধান রচনার কাজ শেষ হয়। ফরাসি সংবিধান সভার সাথে যুক্ত প্রথম শ্রেণির নেতাদের মধ্যে ছিলেন লাফায়েৎ, মিরাবো, রোবস্পিয়ার প্রমুখ।
সংবিধান সভার কার্যাবলি -
i. সংবিধান সভা এক ঘোষণার দ্বারা ফ্রান্সের সামন্তপ্রথা ও বেগারশ্রমের বিলোপ ঘটায়।
ii. ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার ঘোষণার মাধ্যমে বলা হয় স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার এবং আইনের চোখে সবাই সমান।
iii. শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের ক্ষেত্রে ফ্রান্সকে 83টি প্রদেশে ভাগ করা হয়। রাজার ক্ষমতা খর্ব করা হয় এবং শাসন, আইন ও বিচার বিভাগকে আলাদা করা হয়।
iv. বিচার সংস্কারের ক্ষেত্রে দেখা যায় আইনের চোখে সকলকে সমতা দেওয়া হয়, নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের আপিলের অধিকার দেওয়া হয় এবং বিচারপতিদের যোগ্যতা অনুযায়ী নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।
v. গির্জার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে যাজকদের বেতনভুগি কর্মচারীতে রূপান্তরিত করা হয় এবং অ্যাসাইনেট নামক একধরণের কাগজের মুদ্রা চালু করা হয়।
16. সন্ত্রাসের রাজত্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।
- ষোড়শ লুই-এর মৃত্যুর পর ফ্রান্সে বৈদেশিক আক্রমনের আশঙ্কা দেখা যায়। এসময়ে ফ্রান্সের জ্যাকোবিন দলের নেতৃত্বে যে শাসনব্যবস্থাকে কায়েম করা হয়, তা সন্ত্রাসের শাসন নামে পরিচিত। 1793 সালের 2 রা জুন থেকে সন্ত্রাসের শাসন শুরু হয়। 1794 সালের 27 জুলাই পর্যন্ত সন্ত্রাসের শাসন চালু ছিল।
পটভূমি - ষোড়শ লুই-এর মৃত্যুর পর ইংল্যান্ড, অষ্ট্রিয়া, প্রাশিয়া, পোর্তুগাল প্রভৃতি দেশগুলি একজোট হয়ে ফ্রান্সের বিরোধিতা করে। ফ্রান্সের অভ্যন্তরেও বিদ্রোহ শুরু হয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বেকার সমস্যা, বিশ্বাসঘাতকতা প্রজাতান্ত্রিক সরকারের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তোলে। এই অবস্থায় প্রজাতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য রোবসপিয়ার সন্ত্রাসের শাসন চালু করেন।
উদ্দেশ্য- সন্ত্রাসের শাসনের উদ্দেশ্য ছিল -
i. ফ্রান্সের জাতীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করা।
ii. কালোবাজারি বন্ধ করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম স্বাভাবিক রাখা।
iii. অভিজাত, ভূস্বামীদের জমি বাজেয়াপ্ত করে কৃষিকদের মধ্যে বন্টন করা।
iv. ফ্রান্সকে সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী করে তোলা।
সন্ত্রাসের নৃশংসতা- এইসময় প্রায় 50, 000 নরনারীকে গিলোটিনে হত্যা করা হয়। সন্দেহের আইনে তিন লক্ষ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। আরও অনেক নিখোঁজ হয়। সন্ত্রাসের এই পর্ব ইতিহাসে লাল সন্ত্রাস নামে পরিচিত।
1794 খ্রি: 27 জুলাই রোবসপিয়ার ও তার অনুগামীদের বন্দি করা হয়, 28 জুলাই তাদের গিলোটিনে হত্যা করা হয়। রোবসপিয়ারের মৃত্যুর সাথে সাথে ফ্রান্সে সন্ত্রাসের রাজত্বের অবসান ঘটে।
17. ফরাসি বিপ্লবের ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করো।
1789 খ্রি: ফরাসি বিপ্লব ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বৃহত্তর প্রভাব ফেলেছিল। পৃথিবীর বিভিন্নদেশে স্বাধীনতা সংগ্রামে ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব অপরিসীম।
i. ফরাসি বিপ্লবের মূল আদর্শ ছিল সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা। ফ্রান্সের গন্ডি ছাড়িয়ে কালক্রমে এই আদর্শ বিভিন্ন দেশের জনগনের অধিকার সংগ্রামের প্রতিষ্ঠানের প্রেরণা জোগায়।
ii. ফরাসি বিপ্লবে যে জাতীয়তাবাদ-এর যে উন্মেষ ঘটেছিল তা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকে প্রভাবিত করেছিল। জার্মানি, ইতালি, গ্রিসের জাতীয় রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ঘটেছিল।
iii. ফরাসি বিপ্লব প্রগতিশীল চিন্তার বিস্তার ঘটায়। রুশো, ভলতেয়ার, মন্তেস্কু প্রমুখ দার্শনিকদের চিন্তাধারা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল।
iv. ফরাসি বিপ্লবের ফলে মৌলিক অধিকার, বাক স্বাধীনতা, বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা, ধর্ম নিরপেক্ষতা প্রভৃতি গণতান্ত্রিক আদর্শগুলি জনগণকে অনুপ্রাণিত করে।