প্রলয়োল্লাস - কাজী নজরুল ইসলাম - সংক্ষিপ্ত ও রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

Language : Bengali

প্রলয়োল্লাস - কাজী নজরুল ইসলাম - সংক্ষিপ্ত ও রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর 

1. “তোরা সব জয়ধ্বনি কর”- কবি কাদের জয়ধ্বনি করতে বলেছেন ?

কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় পরাধীন দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষদের জয়ধ্বনি করতে আহ্বান করেছেন। 

2. “কালবৈশাখীর ঝড়” -বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম “কালবৈশাখীর ঝড়” বলতে বৈশাখ মাসের বিকাল বেলায় আকাশ কালো করে যে ভীষণ ঝড়ের লীলা চলে তাকে বুঝিয়েছেন, এই কালবৈশাখীর ঝড় ধ্বংসের বার্তাহীন। 

3. “সিন্ধুপাড়ের সিংহদ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল”-কথাটির মর্মবস্তু লেখ। 

‘সিন্ধুপাড়’ অর্থাৎ সাগরতীরের ভারত ভূমিকে এখানে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে ধ্বংসসাধনকারীর দল ভীমনাদ করে ব্রিটিশ শাসনের আগল অর্থাৎ সিংহদ্বার ভেঙে নতুনের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। 

4. “বজ্রশিখার মশাল”- বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?

“বজ্রশিখার মশাল”- বলতে দধীচি মুনির অস্থি নির্মিত প্রস্তুত বজ্রকে বোঝানো হয়েছে। 

5. “দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা”-বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?

কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা বলতে বোঝানো হয়েছে ভাবী প্রলয়ের তীব্রতাকে। নবযুগের সূচনাকারী ভয়ংকর প্রলয় সূর্যের বারোটি অংশের ন্যায় দীপ্ত  ও তীব্র। সূর্যের এই বারোটি জ্যোতির মিলিত শক্তি এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে। 

6. বিশ্বমায়ের আসন কোথায় পাতা আছে ?

কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ধূমকেতুর মতো ধ্বংসাত্মক শক্তিসম্পন্ন প্রলয়কারীর বিশাল বাহুর ওপর বিশ্বমায়ের আসন পাতা আছে। 

7. কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ?

‘অগ্নিবীণা’ (1922 খ্রী:), এটি তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ। 

8. ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থটি কবি কাকে উৎসর্গ করেন ?

বিপ্লবী বারীন্দ্র কুমার বসু। 

9. “তোরা সব জয়ধ্বনি কর’- কথাটি কবিতায় কতবার ব্যবহৃত হয়েছে ?

19 বার। 

10. কবিতাটির মূল ভাব কী ?

ধ্বংসের মধ্য দিয়ে সৃষ্টির বার্তাবহ আনন্দের প্রকাশ। 

11. “মৃত্যু গহন অন্ধকূপে” - বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?

উদ্ধৃত বাক্যটির মধ্যে রয়েছে দুটি অর্থ -

i. মৃত্যুর মতো পরাধীনতার গভীর অন্ধকার। 

ii. আমাদের মনে অজ্ঞানতার গাঢ় অন্ধকার। 

12. “মহাকালের চন্ডরূপে” - কী বোঝানো হয়েছে ?

মহাকাল হলেন -সত্য -শিব -সুন্দরের প্রতীক। দেবাদিদেব মহাদেবের চন্ডরূপ হল সেই ভীতিপ্রদ  মূর্তি যা সবকিছুকে নিমেষে ধ্বংস করতে পারে। 

দ্বাদশ রবি  = i.বিবস্বান , ii. অর্যমা , iii. পূষা , iv. তৃষ্টা , v. সবিতা , vi. ভগ , vii. ধাতা , viii. বিষ্ণু , ix. বরুণ , x. মিত্র , xi. ইন্দ্র , xii. অরুণ 

1. দুধ, দই, ক্ষীর, ঘি, লবণ, সুরা, জল এই সাতটি অংশ নিয়ে পৃথিবী গঠিত। 

জরায় - মরা মুমুর্ষ -আশাহীন মানুষ 

13. মাভৈ: মাভৈ: - কথাটি কেন ব্যবহার করা হয়েছে ?

মাভৈ: শব্দটি হল অভয়সূচকবাণী। সমগ্র পৃথিবীর পরাধীন জাতি নিজেদের প্রচেষ্টায় স্বাধীন হয়েছে। সুতরাং ভারতবাসীকেও এগিয়ে যেতে হবে পুরাতনকে ধ্বংস করে নতুনের বিজয় পতাকা ওড়ানোর জন্য। দেশবাসীর মনে সাহস সঞ্চারিত করার জন্যই একথা বলা হয়েছে। 

14. ‘জরায় মরা মুমূর্ষদের’ - বলতে কাদের বলা হয়েছে ?

দীর্ঘ ২০০ বছরের দাসত্বের বন্ধনে আমাদের শরীরের রক্ত শান্তি নিঃশেষিত হয়ে আমরা বার্ধক্যে উপনীত হয়েছি। আমাদের লোম -চর্ম অশক্ত বপু তাই কবি উক্তো কথার মধ্য দিয়ে পরাধীন ভারতবাসীদেরই নির্দেশ করেছেন। 

15. “দিগম্বরের জটায় হাসে শিশু চাঁদের কর’ - বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?

‘দিগম্বর’ শব্দের অর্থ হল বস্ত্রহীন অবস্থা। তবে এখানে মহাদেবকে বোঝানো হয়েছে। তাঁর জটায় যেন শিশু চাঁদ আশ্রয় নিয়েছে। সে স্বাধীনতার, পরাধীনতার বন্ধ বা মুক্তির হাসি নিয়ে যেন দেশবাসীর সামনে প্রকাশিত হবে। 

16. “এই তো রে তার আসার সময়’ -কার আসার সময় কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে ?

কবি জানিয়েছেন যে তার অর্থাৎ মহাকালের আগমন বার্তা শোনা যাচ্ছে। কেননা আমাদের কানে এসে পৌঁছেছে রথের চাকার ঘরঘর শব্দ এবং ঘোড়ার খুঁড়ের ধ্বনি। আকাশ -বাতাস মুখরিত হয়ে উঠেছে তাঁর আগমন বার্তায়। 

17. ‘প্রলয় নুতন সৃজন -বেদন’ - একথা বলার কারণ লেখ। 

কালবৈশাখীর ঝড়ে প্রকৃতি তছনছ হলেও তারই পরে জন্ম নেয় নব নব কিশলয়। ঠিক তেমনি ধ্বংস সাধন অন্তঃবেদনার সৃষ্টি করলেও এরই ওপর গড়ে উঠবে নূতনের ইমারত। তমশাময় দিবসের অবসানে তাই আবার দেখা দেবে নবারুণ আগমন বার্তা ধ্বনিও হবে নূতনের। 

18. ‘আসছে নবীন -জীবনধারা অ -সুন্দরে করতে ছেদন’- এই নবীন কারা ?

‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম যে সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছেন তা সংঘটিত করবে তরুণ বিপ্লবীরা। এরাই কবির ভাষায় ‘নবীন’ কবি সমাজ পরিবর্তনের দায় -ভার নবীনদের সমর্পণ করেছেন। 

19. ‘বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর’ - “বজ্রশিখার মশাল” -বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? ভয়ংকরের আগমনের কারণ কী ?

কাজী নজরুল ইসলামের “প্রলয়োল্লাস’ কবিতা থেকে সংগৃহীত আলোচ্য অংশে “বজ্রশিখার মশাল” বলতে পথ প্রদর্শনের আলোকবর্তীকাকে বোঝানো হয়েছে। দধীচি মুনির অস্থি নির্মিত বজ্রনামক অস্ত্র যেমন -আসুরিক শক্তির বিনাশে দেবরাজ ইন্দ্রকে সহায়তা করে ঠিক তেমনই এই আলোকদন্ড তার বজ্রসম তেজে অচলায়তনকে ধ্বংস করে নূতনের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করবে। 

শান্ত সমাহিত পুকুরে তরঙ্গ সৃষ্টির জন্য যেমন বাইরে থেকে আঘাত হানতে হয় ঠিক তেমনই প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় ব্রিটিশ রাজত্ব পরাধীনতার শৃঙ্খলে ভারতবাসী নির্জীব বস্তুতে পরিণত হওয়ায় তারা আনাহত হয়ে পড়েছে। তাই দেশবাসীর প্রদর্শনের জন্য প্রথাগত সামাজিকতাকে প্রদর্শনের জন্য এইরূপ আগমনের পরিকল্পনা করেছেন কবি। 

20. “সর্বনাশী জ্বালামুখী ধূমকেতু তার চামর ঢুলায়”-তার বলতে কার কথা বলা হয়েছে ? তার চামর ঢুলানোর প্রসঙ্গে কী বোঝানো হয়েছে ?

সাম্যের পূজারি কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশে তার বলতে পুরাতনের ধ্বংসকারী নূতনের পূজারি তথা দেশমুক্তি পথের অগ্রদূতদের বোঝানো হয়েছে। 

সাধারণত চর্মিগাইদের লেজের লোম থেকে তৈরি হয় চামর যা মঙ্গলকারক বস্তু হিসাবে পূজার্চনা ও মাঙ্গলিক কর্মের ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এখানে লক্ষ্য করা যায় যে সেই মঙ্গলদায়ক বস্তুটিকে ধূমকেতুর হাতে কবি অর্পণ করেছে। এর একমাত্র কারণ হল তখন সামাজিক যে প্রেক্ষাপট সেখানে সুখনিদ্রা দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। দেশকে অগণিত মানুষের মুক্তির জন্য যে শক্তির কবি আহ্বান করেছেন তার হাতে পেলবতা শোভা পায় না। তাই ধূমকেতুর মতো ধ্বংসকারী শক্তির হাতেই কবি এই ভয়ংকরের আরাধনায় সামগ্রিক অর্পণ করেছেন। তার যেহেতু ধূমকেতুর আগমনকে অমঙ্গল হিসাবে বিবেচনা করা হয় তাই অমঙ্গলকে দূর করতে অমঙ্গলকেই যেন কবি অগ্রধিকারী। 

Ratings
No reviews yet, be the first one to review the product.
Click to send whatsapp message
Copywrite 2024 by  Misiki Technologies LLP