সিরাজদ্দৌলা - শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত - সংক্ষিপ্ত ও রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

Language : Bengali

সিরাজদ্দৌলা - শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত -  সংক্ষিপ্ত ও রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর 

1. নবাব সিরাজ ওয়াটসকে কেন বন্দী করেন ? শেষ পর্যন্ত তাকে কী শাস্তি দেওয়া হয় ?

⇒ আমাদের পাঠ্য ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে সিরাজদ্দৌলা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটসকে বন্দি করেন। কারণ রাজদরবারে কোম্পানির প্রতিনিধি হয়েও ওয়াটস আলিনগরের সন্ধি ভঙ্গ করে। ইংরেজদের বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বী ফরাসীদের বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করার গোপন ইচ্ছা ছিল ওয়াটস -এর। এজন্য তিনি এডমিরাল ওয়াটসনকে পত্র লিখে নবাবের ওপর ভরসা না রেখে ফরাসী ঘাঁটি চন্দনগর আক্রমণের সুপারিশ করেন। এর ভিত্তিতেই এডমিরাল ওয়াটসন চিঠিতে জানান কলকাতায় অধিক সৈন্য সমাবেশ করে বাংলার বুকে এমন আগুন ইংরেজরা জ্বালাবে যা গঙ্গার সমস্ত জল দিয়েও নেভানো যাবে না। এই গোপন ষড়যন্ত্র ছাড়াও ওয়াটস নবাবের দরবারে উপস্থিত থেকে সভাসদ -এর নবাবের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করেন। 

ওয়াটসকে বন্দি করে তোপের (কামান ) মুখে উড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখালেও বাস্তবে কোনো রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেননি। পরিবর্তে ওয়াটসকে তার দরবার থেকে বিতাড়িত করে ক্ষান্ত হন। 

 

2. ‘আমার এই অক্ষমতার জন্য তোমরা আমাকে ক্ষমা কর’- প্রসঙ্গ লেখ। 

⇒ আলোচ্য নাট্যাংশে ফরাসি প্রতিনিধি মসিয়েঁ লা সহ সমস্ত ফরাসিদের কাছে সিরাজদ্দৌলা তার অক্ষমতা প্রকাশ করেন। 

ফরাসীদের সঙ্গে ইংরেজদের বিবাদ বহু পুরানো, মূলত ব্যবসা ও অন্যান্য বিষয় ছিল এই বিবাদের কারণ। এদেশে ইংরেজরা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে ফরাসীদের গণ্য করায় তারা বাংলা থেকে তাদেরকে উৎখাত করার সংকল্প নেন। এই জন্যই বাংলায় স্বাধীন নবাব থাকা সত্ত্বেও তারা চন্দনগর আক্রমণ করে এবং ফরাসী কুঠিরে অধিকার কায়েম করতে চায়। এই জন্যই ফরাসীরা নবাবের কাছে প্রতিকার চাইলে তিনি তাদের কাছে অক্ষমতা প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন। কারণ হিসাবে তার উপযুক্ত লোকবল ও অর্থের অভাবের কথা জানিয়েছেন এবং মন্ত্রী মন্ডলীর অসম্মতির কথাও উল্লেখ করেন। 

3. কলকাতা জয়ের ইতিহাস তুমি জানো-বক্তা কে ?

কাকে উদ্দেশ্য করে কোন ইতিহাসের কথা বলেছেন ?

⇒ নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের সিরাজদ্দৌলা নাটকে প্রধান চরিত্র সিরাজদ্দৌলা, ইংরেজ প্রতিনিধি ওয়াটসকে উল্লেখ্ করে একথা বলেছেন। 

সিরাজদ্দৌলা নাটকের মূল বিষয় হল সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের এবং তার পরিবারের বিবাদের বিবিধ কারন। ইংরেজরা বণিক হিসাবেই এদেশে আসার পর থেকেই একাধিক বিষয় নিয়ে নবাবের সঙ্গে তাদের বিরোধ বাঁধে। যেমন - ইংরেজরা বণিক হিসাবে ব্যাবসা করার জন্য পূর্ব রীতি মতো যে উপঢৌকন বা উপহার দেওয়ার রীতিকে অগ্রাহ্য করেন। দ্বিতীয়ত বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও তারা অবাধ সুযোগ সুবিধা আদায় করার চেষ্টা করেন ফলে দেশীয় বণিকেরা ভীষণ সমস্যায় পড়তেন। এছাড়াও নবাবের বিনা অনুমতিতে তারা একের পর এক দুর্গ নির্মাণ করলে ও নবাবকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে নবাব তার জবাবে কলকাতায় সেনা পাঠান ও দুর্গ আক্রমণ করে। হঠাৎ এই আক্রমণে ইংরেজ বাহিনী সহজেই পরাজিত হয়। এবং সিরাজ ও তার সেনাবাহিনী কলকাতা অধিকার করেন। আলিবর্দি খাঁর দৌহিত্র হওয়ায় দাদুর স্মরণে কলকাতা জয়ের ইতিহাস মনে রাখতে কলকাতার নামকরণ করেন আলিনগর। এখানে এই কলকাতা জয়ের ইতিহাসকে সিরাজ ইংরেজ সেনাপতি ওয়াটসকে স্মরণ করতে চেয়েছে। 

4. ‘ভদ্রতার অযোগ্য তোমরা’ - বক্তা ও উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কে ? একথা বলার কারণ কী ?

⇒ বক্তা সিরাজদ্দৌলা ইংরেজ সেনাপতি ওয়াটসকে একথা বলেছেন। 

নবাবের অনুমতিতে ও আশ্রয়ে ইংরেজরা বাংলায় বাণিজ্য করার অনুমতি পায়। তবুও ইংরেজদের সাথে নবাব সিরাজদ্দৌলার সঙ্গে একাধিক কারণে সংঘাত, বিবাদ বাঁধে। ফলস্বরূপ আলিনগরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এর পরেও ইংরেজ সেনাপতি তাঁর আশ্রয়ে থেকে তাঁরই বিরুদ্ধে একাধিক ষড়যন্ত্র সংঘটিত করেছে, চেয়েছে নবাবি শাসন থেকে নিজেদের মুক্ত করতে। এই রকম ষড়যন্ত্রের জন্যই কর্নেল ক্লাইভকে উদ্দেশ্য করে লেখা চিঠিটি তার উক্ত উদাহরণ। চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে কর্নেল ক্লাইভ -এর সেনাবাহিনী শীঘ্রই কলকাতায় আসবে এবং মাদ্রাজে পাঠানো জাহাজের মাধ্যমে বাংলায় আরো সেনাবাহিনীকে নিয়ে আনার প্রয়োজন ব্যক্ত করে ওয়াটস। শুধু তাই নয় পাশাপাশি তিনি বাংলার নবাবের পতন ঘটাতে প্রাণহানিও সংঘটিত করবেন। 

নিজের হাতে লেখা এই চিঠিটির বিষয়বস্তু অবগত করে সিরাজ ইংরেজ সেনাপতি ওয়াটসকে উপরোক্ত মন্তব্যটি করেছেন। 

5. বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন না -এই অনুরোধটি কার ? অনুরোধটির কারণ কী ?

⇒ নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের সিরাজদ্দৌলা নাটকে নবাব সিরাজ তার সভাসদদের (বিক্ষুব্ধ ) উদ্দেশ্য করে এই কথা বলেছেন। 

বাংলার সিংহাসনকে কেন্দ্র করে নবাব সিরাজদ্দৌলা এইসময় অন্তর্দ্বন্দ্ব ও বহির্দ্বন্দ্বে সম্মুখীন হয়, অন্তর্দ্বন্দ্ব স্বরূপ রাজসিংহাসনকে কেন্দ্র করে মাসি ঘষেটি বেগমের সঙ্গে তার বিবাদ, অন্যদিকে ক্ষমতার লোভে সিরাজ ও ইংরেজ দ্বন্দ্ব এই সময়কে দুর্বিসহ করে তুলেছে। ইংরেজদের প্রলোভনে একাধিক সভাসদ পা বাড়িয়েছেন। তাদের একের অন্যের বিরুদ্ধে, নবাবের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে, কিন্তু এই সময়ে ইংরেজদের মতো শক্তিশালী পক্ষের বিরোধিতা করতে নিজেদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব মোটেই কাম্য নয়। তাই অন্যান্য সভাসদরা, সিপাহিরা যেন তার বিপক্ষে না যান। এই করুণ আবেদনের মধ্য দিয়ে তিনি তার সমর্থক ও বিরোধীদের একাত্ম হয়ে লড়াই করবার জন্য অনুরোধ করেছে। 

6. ‘বাংলার ভাগ্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা’ - বক্তা কে ? কীরূপ দুর্যোগের কথা বলেছেন ? বক্তার মানসিকতার পরিচয় দাও। 

⇒ ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ইতিহাসের সিরাজদ্দৌলার চরিত্রের থেকে পৃথকভাবে চরিত্রটিকে এখানে উপস্থাপিত করেছে। উপরোক্ত উদ্ধৃতাংশে বক্তা হলেন নবাব সিরাজদ্দৌলা। 

নবাব সিরাজের সিংহাসনকে কেন্দ্র করে ঘরোয়া বিবাদ এবং একইসঙ্গে ইংরেজদের সঙ্গে বিবাদকে ও তার সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ পরিণতিকে দুর্যোগ বলে উল্লেখ করেছেন। 

বক্তা সিরাজদ্দৌলার দেশপ্রেম, উপস্থিত বুদ্ধি ও বিরোধীদের নিজ পক্ষে নিয়ে আসার অদ্বিতীয় মানসিকতা আমরা নাট্যাংশে পাই। ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ও যুদ্ধে জয়লাভ করা যে সহজসাধ্য ব্যাপার নয় তা তিনি আগেই উপলব্ধি করেছেন। বিচ্ছিন্নভাবে যুদ্ধ করলে পরাজয় যে নিশ্চিত তাও তিনি বুঝেছেন। এমত অবস্থায় হিন্দু এবং মুসলমানকে একত্রিত করে লড়াই করায় যে শ্রেষ্ঠ উপায় তা বুঝতে পেরেছেন। তাই রাজবল্লভ, জগৎশেঠ এবং মির্জাফরকে তার বুদ্ধিশক্তির জোরে একত্রিত করে নিজ পক্ষে আনতে সমর্থ হয়েছেন। উল্লেখ করেছেন হিন্দু -মুসলমানের গুলবাগ এই বাংলা। তাই আমাদের উচিত একত্রিত হয়ে এই লড়াই -এ অংশগ্রহণ করা, পাশাপাশি তাদের আবেগকে কাজে লাগানোর জন্য জানিয়েছেন যদি কোনো অন্যায় তিনি করে থাকেন তাও তিনি শুনবেন, প্রয়োজনে মেনে নেবেন , তবে শুধুমাত্র এই যুদ্ধের সময় টুকুতেই যেন কোনোরূপ বিচ্ছিন্ন মানসিকতা না থাকে। তবেই বাংলার এই দুর্যোগ কাটবে এবং হিন্দু -মুসলমান একত্রিতভাবে, শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারবে। 

7. ‘আমার সহিষ্ণুতায় আপনাদের স্পর্ধা বাড়িয়ে দিয়েছে’ - কাকে উদ্দেশ্য করে বক্তা উক্তিটি করেছেন ? বক্তার সহিষ্ণুতার পরিচয় দাও। 

⇒ ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে নবাব সিরাজদ্দৌলা তাঁর দরবারে উপস্থিত জগৎশেঠকে উদ্দেশ্য করে একথা বলেছেন। 

এই নাট্যাংশে সিরাজ চরিত্রে কঠোরতার চাইতে সহিষ্ণুতায় বেশি প্রকাশ পেয়েছে। নাট্যাংশের প্রথমেই দেখা যায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটস-এর চক্রান্ত প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও নবাব তাকে কোনো রকম কঠোর দন্ড প্রদান না করে কেবল বিতাড়িত করে। 

রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, মির্জাফর প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ  বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিলেন। নবাবের অন্নেই তারা জীবনধারণ করতেন। তবুও নবাবকে তারা বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা দেখাতেন না। সময়ে, অসময়ে নবাবের অযোগ্যতা প্রমাণ করতে নানা ধরণের কটূক্তি করতেন। উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের এধরণের আচরণে নবাবের অন্যান্য কর্মচারীদের মনে অশ্রদ্ধা জন্ম নিয়েছিল, আত্মীয় স্বজনের মন বিষিয়ে গিয়েছিল। 

নবাবকে হেউ প্রতিপন্ন করার বিভিন্ন চক্রান্তের কথা প্রকাশ করলে মির্জাফর, জগৎশেঠ প্রমুখের ঔদ্ধত্য বেড়ে যায়। নবাবের মুখের উপর তারা বলে উঠে -’তাহলে বাংলার সিংহাসনে এতদিনে অন্য নবাব বসতেন।’ একথা শোনার পরও তিনি তেমন কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।ফলে একথা সহজেই প্রমাণিত হয় যে সিরাজ চরিত্রের এই সহিষ্ণুতাই তাঁর পতনের অন্যতম কারণ। 

  

8. ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে সিরাজের চরিত্রটি আলোচনা কর। 

⇒ নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে উদাহরণ চরিত্র হিসাবে উঠে এসেছে সিরাজদ্দৌলা চরিত্রটি। নাটকের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সিরাজদ্দৌলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সংলাপ নির্মিত হয়েছে। এগুলির মধ্যে আমরা সিরাজ চরিত্রের বিবিধ বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাই। 

i. বিচক্ষণতা : নাটকে সিরাজদ্দৌলা চরিত্রটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হিসাবে তার বিচক্ষণতা উঠে এসেছে। রাজ্যের সমূহ বিপদে পরিণতিকে উপলব্ধি করে তিনি মূলত তিনি পর্যায়ে তা প্রতিকার করার উদ্যোগ নিয়েছেন, রাজ্যের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে মূল ষড়যন্ত্রী ওয়াটসকে সভা থেকে বিতাড়িত করেছেন। শুভাকাঙ্খি ফরাসি সেনাপতি মসিয়েঁ লা -কে সহযোগিতা করতে না পেরে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। আবার বিরুদ্ধ সভাসদ, মন্ত্রীদের শেষপর্যন্ত নিজ পক্ষে আনতে পেরেছেন এবং মাসি ঘষেটি বেগমকে আবেদন নিবেদনের মাধ্যমে তার পাশে থাকতে বলেছেন। 

ii. শ্রদ্ধাশীল : চরম বিপর্যয়ের মধ্যেও তিনি শ্রদ্ধাশীল রূপেই থেকেছেন। বিদ্রোহিনী মাসি ঘসেটি বেগমকে যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন। বলেছেন, ‘মতিঝিল আপনারই রয়েছে মা’ অর্থাৎ মাসিকে মা বলে সম্বোধনের মাধ্যমে শ্রদ্ধার জায়গা থেকে সরে আসেননি। 

iii. দুর্বলতা : সিরাজ চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্যটি তার চারিত্রিক দুর্বলতা। তাই ওয়াটস -এর ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পেরেও তাকে কোনো প্রকার শাস্তি দেননি। আবার রাজবল্লভ, মির্জাফর, জগৎশেঠকেও তাদের কৃতকর্মের জন্য কোনোপ্রকার দন্ড দেননি। আভ্যন্তরীন সমস্যায় মাসি ঘসেটি বেগম তার বিরোধিতা করলেও তাকে কিছু বলেননি। তিনি স্বীকার ও করেছেন তার দুর্বলতা। বলেছেন -’পারিনা শুধু কঠোর নই বলে, পারিনা শুধু পরের ব্যাথায় আমার প্রাণ কেঁদে উঠে বলে।’ 

iv. আবেগপ্রবণ : তার চরিত্রের অন্যতম সত্ত্বা আবেগ। তাই সভাসদরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে বিরোধের জন্য সিরাজকে দায়ী করলে তাদের ভৎসনা না করে দোষ স্বীকার করে নিয়েছিল। পরক্ষণেই তাদের সাহায্য প্রাথর্না করেছে। মির্জাফরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন - ‘আমিও আপনার আদেশবাহ হয়ে থাকব।’

v. দেশপ্রেমী : তার চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য দেশপ্রেম। তিনি শুধুমাত্র নিজের কথা ভাবেননি, বলেননি। দেশ বা বাঙালি জাতিকে নিরাপদ রাখতে বলেছেন -’বাংলার ভাগ্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা।’ যেন তেন প্রকারে দেশকে রক্ষা করতে তিনি এই অসময়ে বিরোধীদের শাস্তি না দিয়ে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলেছেন। 

vi. সম্প্রতি, অসাম্প্রদায়িক : সিরাজ চরিত্রের মধ্যে অসাম্প্রদায়িকতা বা সম্প্রতির দিকটি স্পষ্টভাবে 

9. ‘তোমাদের কাছে আমি লজ্জিত’ -বক্তা কাদের কাছে কেন লজ্জিত তা ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশ অনুসরণে আলোচনা কর। 

⇒ শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশের অন্তর্গত প্রশ্নোধৃত বাক্যটিতে নবাব সিরাজদ্দৌলা ফরাসিদের কাছে লজ্জিত হয়েছেন। 

ফরাসিরা বহুদিন থেকেই বাংলাদেশে বাণিজ্য করেছে, ইংরেজদের সঙ্গে তাদের বিবাদ বহু পুরোনো ; কিন্তু সিরাজের সঙ্গে তারা কোনোদিন অসদ্ব্যবহার করেনি।সিরাজও আশা রাখেন তাঁর রাজ্যে সকলে শান্ত হয়ে থাকবে -সাগরের ওপারে ইংরেজ ও ফরাসিদের যে দ্বন্দ্ব, তাঁর রাজ্যে সেটি প্রবেশ করবে না। কিন্তু, ঘটনাক্রমে সিরাজের ইচ্ছামাফিক এগোয় না। ইংরেজরা বিনা সম্মতিতে চন্দননগর আক্রমণ করেন এবং সমস্ত ফরাসি বাণিজ্যকুঠি ইংরেজদের ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানায়। ফরাসিদের আশা ছিল সিরাজ উদ্ভুত সমস্যার প্রতিকার করবেন এবং এই মর্মেই ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা সিরাজের সামনে উপস্থিত হন।  কিন্তু, সিরাজ বা তার মন্ত্রীমণ্ডল যুদ্ধের পক্ষপাতী ছিলেন না। তাদের প্রতি তাঁর অন্তরের পূর্ণ সহানুভূতি থাকলেও, তিনি ইংরেজদের সঙ্গে পুনরায় বিবাদে শামিল হয়ে রাজ্যের শান্তিভঙ্গ করতে চাইছিলেন না। তাই ফরাসিদের সাহায্যদানে অক্ষমতার জন্য তিনি লজ্জিত হয়েছেন। 

10. পলাশি, রাক্ষসী পলাশি’- বক্তা কে ? তাৎপর্য লেখ। 

⇒ শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র সিরাজ এই সংলাপটি করেছেন -

পলাশি নদীয়া জেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক শহর। এক সময় পলাশ ফুলের আধিক্যের জন্য এর নামকরণ হয় পলাশি। আলোচ্য নাটকে সিরাজদ্দৌলা এই পলাশিকে ‘রাক্ষসী পলাশি’ বলেছেন। কারণ পলাশির এই প্রান্তরে আসন্ন যুদ্ধের অনিবার্য পরিণতিকে বুঝতে পেরে তাকে রাক্ষসী বলেছেন। রাক্ষসী যেমন জীবনহানি, জীবনহানি ঘটাতে, রক্তপানে অভ্যস্থ তেমনই ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে সিরাজের বাহিনীর এই যুদ্ধে রক্তপাত অবশ্যম্ভাবী। তাই পলাশ ফুলের লাল বর্ন ও রক্তপাতের কথা মাথায় রেখেই তিনি উপরোক্ত সংলাপটি করেছেন। 

Ratings
No reviews yet, be the first one to review the product.
Click to send whatsapp message
Copywrite 2024 by  Misiki Technologies LLP