অভিষেক ।। মাইকেল মধুসূদন দত্ত -সংক্ষিপ্ত ও রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

Language : Bengali

1. ‘অভিষেক’ কবিতাটির উৎস কী ?

⇒ কবি মাইকেল মদুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদ বধ’ কাব্যের অন্তর্গত প্রথম সর্গ অভিষেক -এর অন্তর্গত। 

2. ‘কনক -আসন ত্যাজি, বীরেন্দ্র কেশরী’ -ইন্দ্রজিৎ কেন আসন ত্যাগ করেছিলেন ?

⇒ ইন্দ্রজিৎ ধাত্রীমাতার চরণে প্রণাম জানানোর জন্য ও লঙ্কার কুশল শোনার জন্য আসন ত্যাগ করে উঠে এসেছিলেন। 

3. ‘শির : চুম্বি, ছদ্মবেশী অম্বুরাশি’- কে, কেন ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন ?

⇒ দেবী লক্ষ্মী বীরবাহুর মৃত্যু সংবাদ ও রাবণের যুদ্ধ সজ্জার সংবাদ মেঘনাদকে দেওয়ার জন্য ধাত্রীমাতা প্রভাষার ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন। 

4. ‘তার শোকে মহাশোকী  রাক্ষসাধিপতি’-মহাশোকীর কারণ কী ?

⇒ রাক্ষসরাজ তথা লঙ্কার অধিপতি রাবণের প্রিয় পুত্র বীরবাহু রামচন্দ্রের সঙ্গে সম্মুখ সমরে বীরগতি প্রাপ্ত হওয়ায় পুত্রহারা পিতা শোকগ্রস্ত হয়েছেন। 

5. ‘জিজ্ঞাসিলা মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া’ - এই বিস্ময়ের কারণ কী ?

⇒ ইন্দ্রজিৎ রামচন্দ্রকে নিশারণে হত্যা করার পর কে বীরবাহুকে হত্যা করল -তা ভেবে তিনি বিস্মৃত হয়েছিলেন। 

6. ‘ছদ্মবেশী অম্বুরাশি সুতা’ - সুতা মেঘনাদের কাছে যখন গিয়েছিলেন তখন তিনি কোথায় ছিলেন ?

⇒ তখন মেঘনাদ প্রমোদ উদ্যানে নারী দলের মাঝে অবকাশ কাটাচ্ছিলেন। 

7. মেঘনাদের রাগ প্রকাশের কারণ কী ছিল ?

⇒ মেঘনাদ রামচন্দ্রকে হত্যা করে অবকাশ যাপনের জন্য রাজধানী থেকে দূরে চলে যান। অথচ, বাস্তবক্ষেত্রে রামচন্দ্র জীবিত অবস্থায় থেকে লঙ্কাকে বীরশুন্য করে চলেছেন। এই সংবাদ পেয়েই নিজের কৃতকর্মের জন্য রাগ প্রকাশ করেছেন। 

8. ‘হাধিক মরে’ - বক্তা কেন নিজেকে ধিতকার জানিয়েছেন ?

⇒ রাবণ পুত্র ইন্দ্রজিৎ রাজধানী থেকে দূরে রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎ নারীদের মাঝে বিনোদনে ব্যস্ত ছিলেন। অপর দিকে তার প্রিয় ভাই কাল -সমরে নিহত হয়েছে এবং এই জন্য পিতা প্রতিশোধ নিতে যুদ্ধের সাজে সেজেছেন। নিজের এই নির্বুদ্ধিতার জন্য নিজেকে ধিতকার জানিয়েছেন। 

 

9. ‘হৈমবতী সূত যথা নাশিতে তারকে’ - কোন ঘটনার জন্য উপমাটি ব্যবহার করেছেন ?

⇒ প্রিয়ভাই বীরবাহুর মৃত্যু সংবাদ শোনার পর মেঘনাদ যুদ্ধ যাত্রার জন্য ‘বীর -আভরণে’ সজ্জিত হওয়ার দৃশ্যটি দুর্গাপুত্র কার্ত্তিকে তারকাসুর বধের সময়কার যুদ্ধ সাজের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। 

10. ‘হাসিয়া উত্তরিলা / মেঘনাদ’ - মেঘনাদ কী উত্তর দিয়েছিল ?

⇒ রাবণপুত্র মেঘনাদ তার স্ত্রী প্রমীলার ভালবাসার কথা শুনে হেসে উত্তর দিয়েছিলেন যে, প্রমীলা যে বাঁধনে তাকে বেঁধেছে তা ছেঁড়ার সাধ্য কারোর নেই। তাই তিনি তার কাজ শীঘ্র সম্পন্ন করে আবার প্রমীলার কাছে ফিরে আসবেন। 

সারাংশ :

1. প্রভাষার সংবাদ ও মেঘনাদের বিস্ময় 

2. মেঘনাদের ক্রোধ ও নিজেকে ধিক্কার 

3. প্রমীলা প্রেম ও প্রতিশ্রুতি 

4. মেঘনাদের যুদ্ধসজ্জা ও পিতৃ-অনুমতি 

5. পিতৃ -অনুমতিতে পরামর্শ ও মেঘনাদের অভিষেক 

11. ‘হায়, বিধি বাম মম প্রতি’ - কে, কাকে উদ্দেশ্য করে উক্তিটি করেছেন ? বক্তার এইরূপ আক্ষেপের কারণ কী ?

⇒ মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘অভিষেক’ নামাঙ্কিত কাব্যাংশে রাবণ তার পুত্র মেঘনাদকে উদ্দেশ্য করে একথা বলেছেন। 

মেঘনাদ বধ কাব্যে কবি রাবণ চরিত্রটিকে ভাগ্য তাড়িত এক ট্রাজিক চরিত্ররূপে তুলে ধরেছেন, শক্তি, লোকজন, বীরত্ব, দেশপ্রেম সবকিছুই রাবণ ও তার সৈন্যদলের উপস্থিত থাকলেও কেবল ভাগ্যের সহায়তা না থাকায় একাধিক ক্ষতি তাকে স্বীকার করতে হয়েছে। 

নিয়তি তাড়িত হয়েই যুদ্ধক্ষেত্রে জয় লাভের জন্য ভাই কুম্ভকর্নকে অকালে জাগিয়ে তিনি মারাত্মক ভুল করেছেন। একইভাবে রামচন্দ্রের ক্ষমতাকে যথেষ্ট গুরুত্ব না দিয়ে পুত্র বীরবাহুকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানোয় তার মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুতে বিধাতার বিরূপ হওয়া প্রকট হয়ে উঠে। কারণ যে রামচন্দ্রকে মেঘনাদ নিজে হত্যা করেছেন সেই রামচন্দ্র পুনর্জীবন লাভ করে বীরবাহুকে হত্যা করেছে। তাই হতাশায় তিনি বলেছেন - ‘কে কবে শুনেছে, পুত্র, ভাসে শিলা জলে, কে কবে শুনেছে, লোক মরি পুনঃ বাঁচে ‘

নিয়তির এই বারবার আঘাতে বিপর্যস্ত রাবণ রামচন্দ্রের ক্ষমতায় ভয় পেয়েছেন, আশাহত হয়েছেন। তাই পুত্র মেঘনাদকে যুদ্ধযাত্রার আগে পূর্বের বিভিন্ন ঘটনায় সচেতন করাতে চেয়েছেন। 

12. ‘হেন কালে তথা / দ্রুতগতি উত্তরিলা মেঘনাদ রথী’ - মেঘনাদ কোথায় উপস্থিত হলেন ? মেঘনাদ সেখানে আসার পর কী ঘটেছিল ?

⇒ মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে রাজা রাবণ যেখানে যুদ্ধ যাত্রার আয়োজন করেছিলেন সেই স্থানের কথা বলা হয়েছে। 

ছদ্মবেশী লক্ষ্মীদেবীর কাছে বীরবাহুর মৃত্যু এবং রাবণের যুদ্ধ সজ্জার সংবাদ পেয়ে মেঘনাদ সেখানে উপস্থিত হন, ফলে সৈন্যরা আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে চিৎকার করে ওঠে। মেঘনাদ পিতার চরণে প্রণাম করে রামচন্দ্রের পুনর্জীবন সম্পর্কে বিস্ময় প্রকাশ করে। দৃঢ়তার সঙ্গে পিতাকে আশ্বাস দিয়েছেন -রামচন্দ্রকে হত্যা করে বা বেঁধে নিয়ে আসবেন পিতার পায়ের তলায়। তবুও এই কাল যুদ্ধে তিনি মেঘনাদকে পাঠাতে চান না। এই সময় পুত্র জানায় -উপযুক্ত বীরপুত্র থাকা সত্ত্বেও যদি পিতা রাবণ যুদ্ধে যান তাহলে তা পুত্রের কলঙ্ক বলে বিবেচিত হয়। সেই সঙ্গে তিনি পিতাকে আশ্বস্ত করে বলেন - ‘দেহ আজ্ঞা মরে; / দেখিব এবার বীর বাঁচে কী ঔষুধে।’ 

পুত্রের আত্মবিশ্বাস ও আগ্রহ দেখে রাজা রাবণ তার সিদ্ধান্ত পাল্টান ও পুত্রকে যুদ্ধের অনুমতি দেন। পুত্রের যুদ্ধে স্বার্থকতার জন্য তাই তিনি রীতি মেনে সেনাপতি পদে মেঘনাদকে অভিষিক্ত করেন। 

 

13. ‘হা -ধিক মোরে’ - কে, কাকে ধিক্কার জানিয়েছেন তা লেখ। 

⇒ রাবণ পুত্র মেঘনাদ নিজেকেই ধিক্কার জানিয়েছেন। তাঁর এমন ধিক্কার জানানোর কারণ হল - দশাননাত্মজ হয়েও ইন্দ্রজিৎ লঙ্কার এই দুর্দিনে আনন্দমগ্ন। তাঁর প্রিয় ভাই যুদ্ধে নিহত, পিতা যুদ্ধযাত্রার জন্য প্রস্তুত। লঙ্কাবাসী শোকমগ্ন অথচ তিনি প্রমোদ -উদ্যানে বামদল মাঝে আনন্দে কাল অতিবাহিত করছেন, যা তার কাছে কোনোভাবেই কাম্য নয়। একজন দেশপ্রেমিকের কাছে এর থেকে বড়ো অপমানকর আচরণ আর কী -ই বা হতে পারে -এটি অনুভব করেই মেঘনাদ আত্মগ্লানির অনলে দগ্ধ হয়ে আত্মধিক্কার জানিয়েছেন। 

14. ‘ঘুচাব ও অপবাদ, বধি রিপুকূলে’-রিপুকুল বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে ? এখানে কোন অপবাদের কথা বলা হয়েছে ? তা কবিতা অবলম্বনে লেখ। 

⇒ আলোচ্যাংশে ‘রিপুকুল’ বলতে অযোধ্যাধিপতি দশরথের পুত্র রাম -লক্ষ্মণ ও তাদের সাহায্যরত হনুমান -সুগ্রীবসহ সমগ্র বানর সেনাদের বোঝানো হয়েছে। 

বক্তা অর্থাৎ মেঘনাদ নিজের ভ্রান্তি, প্রিয়ভাই বীরবাহূর হত্যা সহ লঙ্কার এই ঘোর তমসাময় শোকসাগরে নিমজ্জিত থাকা অবস্থায় নিজের আনন্দমগ্ন থাকাকে অপবাদ বলে মনে হয়েছে। আসলে স্বর্গ -মর্ত্য-পাতাল বিজেতা লঙ্কাধিপতি রাবণের পুত্র হয়েও তিনি এমন এক কাজ করেছেন, যাতে জগতে অপবাদ রটবে বলে তার মনে হয়েছে। তাই এই অপবাদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রাম লক্ষণকে শমনভবনে পাঠিয়ে তিনি প্রায়শ্চিত্ত করবেন বলে মনস্থির করেন। 

 

15. ‘কনক আসন ত্যজি, বীরেন্দ্রকেশরি / ইন্দ্রজিৎ’ - ইন্দ্রজিৎ কে ? তিনি কনক আসন ত্যাগ করে কী করেছিলেন এবং তাঁর এরূপ করার কারণ কী ?

⇒ মধুকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-এর অন্তর্গত প্রথম সর্গ থেকে সংগৃহিত আলোচ্যাংশে যে ইন্দ্রজিতের কথা বলা হয়েছে। তিনি হলেন লঙ্কেশ্বর রাবণ ও রানি মন্দোদরীর পুত্র। 

তিনি অর্থাৎ ইন্দ্রজিৎ তাঁর প্রমোদ -উদ্যানে অবস্থানকালে রমাদেবী ধাত্রী প্রভাষা রাক্ষসীর ছদ্মবেশে প্রবেশ করলে তাঁকে প্রণাম জানিয়ে মেঘনাদ তাঁর কাছে লঙ্কা পুরীর কুশল সংবাদ জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তবে এক্ষেত্রে তাঁর মধ্যে উৎকণ্ঠা কাজ করেছিল, কারণ ধাত্রী মাতা ইতিপূর্বে কখনও তাঁর এই উদ্যানে প্রবেশ করেননি। তাই তাঁর আকস্মিক প্রবেশে ইন্দ্রজিৎ লঙ্কার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে চিন্তিত হয়ে পড়েন। 

16. ‘ছদ্মবেশী অম্বুরাশি -সুতা / উত্তরিলা’ -’অম্বুরাশি-সুতা’ কে ? তিনি কী উত্তর দিয়েছিলেন ?

⇒ উদ্ধৃতাংশে উল্লেখিত ‘অম্বুরাশি-সুতা’ হলেন দেবী লক্ষ্মী। আসলে দেবাসুরের সমুদ্রমন্থনের সময় জলরাশির মধ্য থেকে দেবীর উত্থান, তাই তাকে সমুদ্রের কন্যাও বলা হয়। কেন -না, অম্বুরাশি শব্দের অর্থ হল সমুদ্র। 

তিনি অর্থাৎ রমাদেবী ইন্দ্রজিতের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন যে, তাঁর প্রিয়ানুজ বীরবাহু বীরগতি প্রাপ্ত হয়েছেন এবং তাঁর পিতা লঙ্কেশ্বর রাবণ পুত্রহন্তার প্রতিবিধানকল্পে সসৈন্যে যুদ্ধযাত্রা করার জন্য রণসাজে সজ্জিত হচ্ছেন। 

17. ‘ঘোরতর রণে / হত প্রিয় ভাই তব বীরবাহু বলী।’-উদ্ধৃতাংশের বক্তা কে ? বীরবাহু কে ? তিনি কীভাবে হত হয়েছেন ?

⇒ আলোচ্যাংশের বক্তা হলেন ছদ্মবেশধারী দেবী কমলা তথা রমা। 

বীরবাহু হলেন লঙ্কেশ্বর রাবণ ও রানি চিত্রাঙ্গদার পুত্র এবং মেঘনাদের প্রিয় ভাই। তিনি লঙ্কাপুরীর একজন প্রথম সারির বীর ছিলেন। 

রামচন্দ্রের স্ত্রী সীতার উদ্ধারের জন্য শ্রীরামচন্দ্র বানর সেনা নিয়ে লঙ্কাপুরীতে প্রবেশ করেন। তাঁর সঙ্গেই যুদ্ধে মেঘনাদের প্রিয় ভাই বীরবাহু হত হয়েছেন। 

18. ‘জিজ্ঞাসিলা মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া’ - ‘মহাবাহু’ কে ? তাঁর বিস্ময়ের কারণ কী ? তিনি কী জিজ্ঞাসা করেছিলেন ?

⇒ ‘মহাবাহু’ বলতে রাক্ষসরাজ রাবণ ও দেবী মন্দোদেবীর পুত্র মেঘনাদকে বোঝানো হয়েছে। 

তাঁর অর্থাৎ ইন্দ্রজিতের বিস্ময়ের কারণ হল -বনবাসী রামচন্দ্রকে তিনি যুদ্ধে নিহত করা সত্ত্বেও তার সঙ্গে যুদ্ধে প্রিয় ভাই বীরবাহু বীরগতি প্রাপ্ত হয়েছেন এবং সে বেঁচে থাকতে তার পিতা পুত্রহন্তার প্রতিবিধানকল্পে যুদ্ধসজ্জায় সজ্জিত হচ্ছেন। 

তিনি ছদ্মবেশধারী রমাদেবীর কাছে জানতে চান যে, নিশারণে রামচন্দ্রকে হত্যা করা সত্ত্বেও তাঁর ভাইকে হত্যা করল এবং তিনি এই অদ্ভুত সংবাদ কোথায় পেয়েছেন 

19. ‘এ অদ্ভুত বার্তা জননী পাইলে কোথায়’- এই অদ্ভুত বার্তাটি কী ? বক্তা তা শীঘ্র জানতে চেয়েছেন কেন ?

⇒ অদ্ভুত বার্তাটি হল - মেঘনাদের প্রিয় ভাই বীরবাহু যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন। বার্তাটি অদ্ভুত কারণ - মেঘনাদ শত্রু পক্ষের প্রধান রামচন্দ্রকে নিশারণে সংহার করেছেন। অথচ বীরবাহুর মতো এক বীর যোদ্ধা তার কাছেই প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। মৃত ব্যক্তির হাতে মৃত্যু সংঘটিত হওয়া নিতান্তই অদ্ভুত বলে মনে হয়েছে। 

মেঘনাদের উক্ত বার্তা তাড়াতাড়ি জানার কারণ এমন অবাস্তব সংবাদ ধাত্রীমাতা কোথায় পেয়েছেন এবং বর্তমানে লঙ্কাপুরীর কী অবস্থা এই দুটি বিষয় তার অত্যন্ত জানা প্রয়োজন। পরিবারের অবস্থা জানার জন্য তাই তিনি শীঘ্র উৎবেগ করেছেন, কেন না তিনি এই সংবাদ কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। 

20. অভিষেক কবিতা অবলম্বনে রাবণ চরিত্রের পরিচয় দাও। 

⇒ মাইকেল মদুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদ বধকাব্য’ আধুনিক যুগে সাহিত্যিক মহাকাব্য, যা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য রীতির সংমিশ্রণে গঠিত, এই অংশে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাবণ চরিত্রের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি পাওয়া যায় -

 

i. পুত্র -শোকাকুল : কাব্যের প্রথমেই রমাদেবী ছদ্মবেশ ধারণ করে মেঘনাদকে বীরবাহুর মৃত্যু সংবাদ দিয়েছেন। বলেছেন -’ তার শোকে মহাশোকি রাক্ষসাধিপতি,

সসৈন্যে সাজেন আজি যুঝিতে আপনি।’

অর্থাৎ বীরবাহুকে হারিয়ে শোকাকুল পিতা প্রতিশোধ নিতে যুদ্ধসজ্জায় সেজে উঠেছে। 

ii. রাজ কর্তব্য পালন : রাবণের উক্ত রণসজ্জা তার রাজকর্তব্য পালনকে চিহ্নিত করেন।  তাই পুত্রশোকে না স্তব্ধ হয়ে অপর কোনো যোদ্ধার অপেক্ষা না করে স্বদেশ রক্ষার জন্য রণবেশ ধারণ করেছেন - ‘সাজিছে রাবণ রাজা, বীরমদে মাটি;’

iii. অদৃষ্টে বিশ্বাসী : পুত্রকে বারবার কাল সমরে পাঠাতে শঙ্কিত তিনি। এই জন্য তার অদৃষ্ট বাদে বিশ্বাসী হওয়ার প্রসঙ্গ আসে। তিনি স্পষ্টতই বলে ওঠেন - ‘ হায়, বিধি বাম মম প্রতি।’ তাই শিলার জলে ভেসে ওঠার কথা ওঠে। মৃত রামচন্দ্রের পুনর্জীবন লাভ বা বীর কুম্ভকর্ণের অকাল মৃত্যু ইত্যাদি সবই ভাগ্য দোষেই সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেছেন। 

iv. কর্মফলে বিশ্বাসী : রাবণ কর্মফলেও বিশ্বাসী।  কুম্ভকর্ণের মৃত্যুর জন্য তাই তিনি নিজেকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন - ‘তাই আমি জাগানু অকালে / ভয়ে ; দেহ তার, দেখ, সিন্ধু -তীরে / ভূপতিত,’ এজন্যই ইন্দ্রজিৎকে যুদ্ধে পাঠানোর আগে অগ্নিদেবের পূজা সম্পন্ন করতে বলেছেন। 

v. বিধির বিধানে আস্থাশীল : দেবানুগ্রহ প্রার্থনা করার উপদেশ পুত্রকে প্রদান করেছে। সেই জন্যই কঠিন পরিস্থিতিতে তিনি ইন্দ্রজিতের সেনাপতি পদে অভিষেক সম্পন্ন করেন, বিধির বিধান অনুসারে। 

আমরা বলতে পারি আলোচ্য কাব্যাংশে রাবণ চরিত্রটির মধ্যে বীরত্বের পাশাপাশি শোকগ্রস্থ পিতা ও জীবিত পুত্রের প্রতি শঙ্কা প্রকাশ পেয়েছে। যেখানে রাজা রাবণের থেকে বড়ো হয়ে উঠেছে পিতা রাবণ, আর এইখানেই রাবণ চরিত্রটির স্বার্থকতা প্রকাশ পেয়েছে। 

Ratings
No reviews yet, be the first one to review the product.
Click to send whatsapp message
Copywrite 2024 by  Misiki Technologies LLP