হারিয়ে যাওয়া কালি কলম - শ্রীপান্থ - সংক্ষিপ্ত ও রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

Language : Bengali

হারিয়ে যাওয়া কালি কলম -  শ্রীপান্থ - সংক্ষিপ্ত ও রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর 

1. ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ গ্রন্থটির উৎস লেখ। 

⇒ শ্রীপান্থ রচিত ‘কালি কলম মন’ প্রবন্ধ গ্রন্থের অন্তর্গত প্রবন্ধ এটি। 

2. শ্রীপান্থের প্রকৃত নাম কী ?

⇒ নিখিল সরকার। 

3. শ্রীপান্থের অন্য ছদ্মনাম কি ?

⇒ দৌবারিক 

4. ‘কথাই বলে’ -কী বলে ?

⇒ কালি কলম মন, লেখে তিনজন। 

5. ‘বাংলায় একটা কথা চালু ছিল’ - কথাটি কী ?

⇒ কালি নেই, কলম নেই বলে আমি মুনশি। 

6. ‘বলে আমি মুনশি’ - কথাটির অর্থ কী ?

⇒ সামান্য অক্ষরজ্ঞান না থাকলেও নিজেকে পন্ডিত হিসাবে উল্লেখ করা। 

7. ‘অক্ষরজ্ঞানহীনকে লোকে বলে’ - কী বলে ?

⇒ অক্ষর গোমাংস ওর কাছে। 

8. ‘ক’ অক্ষর গোমাংস’ - কথাটি কোন অর্থে ব্যবহৃত ?

⇒ বিদ্যাশিক্ষায় প্রবল অনিচ্ছুক ব্যাক্তি বা আর্কট মূর্খ। 

9. ‘আমরা কলম তৈরি করতাম’ - কারা, কীভাবে কলম তৈরি করতেন ?

⇒ লেখক ও তার সহপাঠীরা বাঁশের কঞ্চির মুখ চিরে কলম তৈরি করতেন। 

10. ‘আমরা কালি তৈরি করতাম নিজেরাই’ - আমরা কারা ? 

⇒ লেখক ও তার সহপাঠীরা। 

11. ‘প্রাচীনেরা বলতেন’ -কী বলতেন ? এর অর্থ কী ?

⇒ ‘তিল ত্রিফলা শিমূল ছোলা / ছাগ দুগ্ধে করি মেলা / লৌহ পাত্রে লোহায় মসি / ছিঁড়ে পত্র না ছাড়ে মাসি।’ অর্থাৎ লোহার পাত্রে ছাগলের দুধে তিল, ত্রিফলা (আমলকি, হরতকি, বয়রা) ও শিমূলের ছাল মিশিয়ে লোহার দন্ড দিয়ে সেগুলিকে পেশাই করা হত। এর ফলে পাতা ছিঁড়ে গেলেও প্রস্তুত কালি কখনও পাতা থেকে উঠে যেত না। 

12. তাই নিয়ে আমাদের লেখালেখি -কী কী নিয়ে লেখালেখি ?

⇒ বাঁশের কলম, মাটির দোয়াত, ঘরে তৈরি কালি, আর কলাপাতা দিয়েই তাঁদের প্রথম লেখালেখি শুরু হয়। 

13. ‘আমাদের ছিল সহজ কালি পদ্ধতি’ - পদ্ধতিটি কী ?

⇒ ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে লেখকেরা কালি তৈরির জন্য বাড়িতে রান্না হওয়া কড়াই-এর তলার কালি সংগ্রহ করতেন। সেই কালি লাউপাতা দিয়ে ঘষে তুলে পাথরের বাটিতে রাখা জলে গুলে নিতেন। কোনো কোনো ওস্তাদ ওই জলে হরতকি ঘষতেন। কখনও কখনও মাকে দিয়ে আতপ চাল ভেজে, পুড়িয়ে ওই জলে মেশাতেন। তারপর গরম খুন্তির চ্যাঁকা ওই জলে দেওয়া হত, ফলে কখনও কখনও তা টগবগ করে ফুটত, এরপর ন্যাকড়ায় ছেঁকে প্রস্তুত কালি মাটির দোয়াতে রাখা হত। এইভাবেই লেখকেরা কালি তৈরি করতেন। 

14. ‘ক’ অক্ষর ওর কাছে গোমাংস’- প্রসঙ্গসহ অর্থ লেখ। 

⇒ কথাটির অর্থ বিদ্যাশিক্ষায় প্রবল অনিচ্ছুক ব্যক্তি। 

এই প্রবন্ধে লেখক তার বাল্যকালে কালি তৈরি করার প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন। বলেছেন, তারা ছেলে-বেলায় কলাপাতার ওপরে লিখতেন। কিন্তু যারা লেখাপড়া করতেন না, তারা কারণ দেখাতেন যে এই লিখিত পাতা যদি গরু খায় তাহলে তা অপরাধ, পাপ হয়ে ওঠে, লেখাপড়া না করার এই অজুহাত বা অযৌত্তিক ঘটনাকে অক্ষরজ্ঞানহীন লোক ‘ক’ অক্ষর গোমাংস বলে উল্লেখ করতেন। 

15. ‘না দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত’ - কোন প্রসঙ্গে, কেন একথা বলা হয়েছে ?

⇒ প্রাবন্ধিক নিখিল সরকার এই প্রবন্ধে তাদের সময়ে কলম ও তার উপকরণ তৈরি বিবিধ কথা বলেছেন। বলেছেন, দোয়াত নির্মাণের বিভিন্ন কথা। এই দোয়াত তৈরিতে উপকরণ হিসাবে ব্যবহৃত হত কাঁচ, কাট-গ্লাস, পোর্সেলিন, শ্বেতপাথর, জেড় ধাতু, পিতল, ব্রোঞ্জ, ভেড়ার শিঙ এমনকি সোনা পর্যন্ত। যেহেতু, বর্তমানকালে এগুলির আর ব্যবহার নেই, চোখে দেখা যায় না, তাই প্রাবন্ধিক উপরোক্ত মন্তব্যটি করেছেন। 

16. ‘জন্ম নিল ফাউন্টেন পেন’-ফাউন্টেন পেন কী ? কীভাবে জন্ম নেয় ?

⇒ ফাউন্টেন পেন একপ্রকার পেন। রবীন্দ্রনাথ এর নামকরণ করেন ঝরনা কলম। 

এর আবিস্কারক লুইস আডসন ওয়াটারম্যান একবার ব্যবসায়িক চুক্তির সময় হঠাৎ দোয়াতের কালি তার দলিলের ওপর পড়ে যায়। ফলে কাগজ সমেত চুক্তি পত্রটি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এই সময় অন্য কাগজ আনতে গেলে ফিরে এসে শোনেন ইতিমধ্যে আর একজন ওই ব্যাবসায়ির সঙ্গে চুক্তিপত্র পাকা করে চলে গেছেন। বিমর্ষ ওয়াটারমানের বিহীত করতে প্রতিজ্ঞাবসত আবিষ্কার করেন ফাউন্টেন পেন। 

17. ফিনিসিওরা কীভাবে লিখতেন ?

⇒ পশুপ্রাণীর হাড় দিয়ে কলম তৈরি করে লিখতেন। 

18. স্টাইলাস কী ?

⇒ ব্রোঞ্জের শলাকার কলমকে স্টাইলাস বলে। 

19. ফাউন্টেন পেন কী ? এর বাংলা নাম কী ?

⇒ রিজার্ভার পেনের বর্তমান নাম ফাউন্টেন পেন। এর বাংলায় নামকরণ (ঝরনা কলম ) করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। 

20. শৈলজানন্দ কোন পেনের সংগ্রহ করতেন ? এই নেশা তিনি কোথায় পেয়েছিলেন ?

⇒ ফাউন্টেন পেনের। 

এই নেশা তিনি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। 

21. দোয়াতের কালি কারা ব্যবহার করতেন ?

⇒ শেক্সপিয়ার, দান্তে, মিল্টন, কালিদাস, ভবভূতি, কাশীরাম দাস, রবীন্দ্রনাথ, কৃত্তিবাস, শরৎচন্দ্র প্রমুখেরা। 

22. ফাউন্টেন পেনের সর্বোচ্চ মূল্য কত বলে আলোচিত হয়েছে ?

⇒ আড়াই হাজার পাউন্ড বা এক লক্ষ সাতাশি হাজার পাঁচশো টাকা। 

23. ‘লাটি তোমার দিন ফুরাইছে’- তাৎপর্য লেখ। 

⇒ বঙ্কিমচন্দ্রের ‘দেবি চৌধুরানী’ উপন্যাসে একথা আলোচিত হয়েছে। 

প্রাবন্ধিক কলমের ব্যবহারে হ্রাস্যমানতা উপলক্ষ্যে একথা বলেছেন। কারণ বর্তমান প্রযুক্তির যুগে কম্পিউটার, টাইপরাইটার-এর ব্যবহারের ফলে পেনের ব্যবহার অনেকাংশে কমে গেছে। 

24. লিপিকাররা বত্রিশ হাজার অক্ষর লিখে কত বকশিস পেতেন ?

⇒ বারো আনা বা পচাত্তর পয়সা। 

25. রামায়ণের চারখন্ড কপি করে কত পাওয়া যেত ?

⇒ সাত টাকা, কিছু কাপড় আর মিঠাই। 

26. টাইপরাইটারের ব্যবহার কারা করেছেন ?

⇒ অন্নদাশঙ্কর রায়, কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখতেন। 

27. পেনের আঘাতে পরিণতি মৃত্যু কার হয়েছিল ?

⇒ কঙ্কাবতী ও ডমরুধর -এর লেখক এৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়। 

28. ‘সব মিলিয়ে রীতিমতো ছোটোখাটো একটা অনুষ্ঠান’ -প্রসঙ্গ আলোচনা কর। 

⇒ শ্রীপান্থ রচিত ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে লেখকদের তৎকালীন কালি ও কলম তৈরির প্রসঙ্গকে উপরোক্ত উদ্ধৃতিতে তুলে ধরা হয়েছে। এখানে আলোচিত হয়েছে কীভাবে কলমের পরিবর্তন ঘটেছে। লেখকদের সময়ে কালির বর্ণ হিসাবে নীল ও লাল দুরকম বর্ণের প্রচলন ছিল। এইগুলি পাওয়া যেত দোয়াত এবং বোতলে। কাজল কালি, সুলেখা ইত্যাদি ছিল তাদের নাম। পরে এই জাতীয় কলমকে উন্নত করতে বাজারে আসে গোরুর শিং, কচ্ছপের খোল কেটে প্রস্তুত শক্ত-পোক্ত কলম -যাতে সহজে এর মুখ ভোঁতা না হয়ে যায়। এই কলমকে আরো সৌন্দর্য্যমন্ডিত ও আকর্ষণীয় করতে ব্যবহৃত হত সোনা, প্ল্যাটিনাম ইত্যাদি। সব পড়ুয়ার পকেটে পাওয়া যেত দোয়াতের কলম, ফাউন্টেন পেন ইত্যাদি। ফাউন্টেন পেনের প্রভাবেই লুপ্ত হয়ে যায় কঞ্চি, খাগ এবং পালকের কলম। পেনের বা কলমের এইরূপ বিবর্তন এবং লেখার পদ্ধতিকেই লেখক ছোটো -খাটো অনুষ্ঠান বলে বর্ণনা করেছেন। 

29. “সমানিসম শীর্ষানি / ঘনানি বিরলানী চ”- অর্থ ব্যাখ্যা কর। 

⇒ লেখার স্পস্টতা ও পরিচ্ছন্নতা পদ্ধতি উল্লেখ করতে গিয়ে উপরোক্ত অংশটি উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, লেখার পদ্ধতি হবে -সমানশীর্ষ বিশিষ্ট এবং প্রতিটি অক্ষর ও শব্দ স্পষ্ট, পরিচ্ছন্ন এবং নির্দিষ্ট ব্যবধানে ব্যবহৃত হবে। 

30. “কলমকে বলা হয় তরোয়ালের চেয়েও শক্তিধর”-প্রসঙ্গ আলোচনা কর। 

⇒ ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম” প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক নিখিল সরকার তরোয়ালের থেকে কলমকে বেশি শক্তিধর বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ তরোয়াল বা পেশি শক্তির তুলনায় শক্তির ক্ষমতা অনেক বেশি -

এজন্য সভ্যতার ইতিহাসে এমন অনেক ঘটনা দেখা গেছে যেখানে কলমের শক্তি পেশি শক্তিকে পরাজিত করে জয়ী হয়েছে। কারণ পেশি শক্তি বা অস্ত্র শক্তির ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ী হয়। অন্যদিকে লেখনীর সাহায্যে লেখক তার চিন্তাধারাকে সকলের মধ্যে সঞ্চারিত করতে পারে এবং দীর্ঘস্থায়ী বা অমরত্ব অর্জন করে তা দেশ-কাল নির্বিশেষে সকলের মধ্যে প্রভাব ফেলতে পারে তাই লেখক কলমকে তরোয়ালের চেয়েও শক্তিধর বলে উল্লেখ করেছেন। 

31. ‘আমি সেইদিন সেই জাদু পাইলট নিয়েই ঘরে ফিরেছিলাম’ -প্রসঙ্গ আলোচনা কর। 

অথবা, ‘আমার মনে পড়ে প্রথম ফাউন্টেন কেনার কথা’- প্রসঙ্গ লেখ। 

অথবা, ‘ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম’ -কে, কেন এরূপ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েছিলেন ?

⇒ আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক নিখিল সরকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বেশ কয়েক বছর পরে কলেজস্ট্রিটের একটি নামি দোকানে ফাউন্টেন পেন কেনার প্রসঙ্গে উপরোক্ত মন্তব্যটি করেছেন। 

দোকানে গেলে দোকানদার লেখককে পার্কার, শেফার্ড, ওয়াটারম্যান, সোয়ান, পাইলট বিভিন্ন পেন দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে দামও বলতে লাগলেন। তবে লেখকের পকেটের অবস্থা তার মুখ দেখে বুঝতে পেরে একটি সস্তার জাপানি কলম পাইলট নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। এবং এই কলম যে কতটা শক্ত -পোক্ত তা বোঝানোর জন্য কলমটিকে একটি টেবিলের উপর দাঁড় করানো বোর্ডে ছুঁড়ে ফেলেন। সার্কাসের খেলোয়াড়ের মতোই ধারালো ছুরি ছুঁড়ে দেওয়ার মতোই তার ভঙ্গিটি হয় এবং শেষপর্যন্ত উক্ত লোকটির মতোই কলমটি অক্ষত থাকে, তার প্রমান স্বরূপ দু -এক ছত্র লিখেও দেখান। এই কলমটি লেখক সেইদিন কিনে এনেছিলেন এবং এই জাপানি পাইলটকে অনেকদিন পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। এই ঘটনাকেই লেখক উপরোক্ত কথার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। 

Ratings
No reviews yet, be the first one to review the product.
Click to send whatsapp message
Copywrite 2024 by  Misiki Technologies LLP