আফ্রিকা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - সংক্ষিপ্ত ও রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

Language : Bengali

আফ্রিকা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - সংক্ষিপ্ত ও রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর 

1. “আফ্রিকা”-কবিতাটির উৎস লেখ। 

⇒ ‘আফ্রিকা’ কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পত্রপুট’ কাব্যের অন্তর্গত। এটি পরবর্তী সময়ে ‘সঞ্চয়িতা’ গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়। 

2. কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত ?

⇒ গদ্য ছন্দে। 

3. কবিতায় কবি কাদের প্রতি ক্ষোভ জানিয়েছেন ?

⇒ ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে। 

4. এই কবিতার প্রত্যক্ষ অবলম্বন কী ?

⇒ আফ্রিকার ওপর সভ্যতার মদগর্বী ইউরোপের বরবর -উচিত আক্রমণ। 

5. কবিতার প্রথম স্তবকে কবি কী স্মরণ করেছেন ?

⇒ আফ্রিকার প্রাগঐতিহাসিক অন্ধকারাছন্ন ও বিন্যস্ত সময়পর্ব। 

6. সৃষ্টি কর্তা কেন বারবার সৃষ্টিকে বিধ্বস্ত করেছেন ?

⇒ স্রষ্টা নিজের সৃষ্টিতে অসন্তুষ্ট হওয়ায় বারবার নিজের সৃষ্টিতে বিধ্বস্ত করেছিলেন। 

7. কবিতাটির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট লেখ। 

⇒ 1935 খ্রী: ইতালির ফ্যাসিবাদী শাসক মুসোলিনী ইথিওপিয়া আক্রমণ করলে 1937 খ্রী: তিনি কবিতাটি রচনা করেন। 

8. ‘হাই ছায়াবৃতা’ -কেন বলা হয়েছে ?

⇒ আফ্রিকার ভূখন্ড বনস্পতির ছায়ায় আবৃত, এই ভূখন্ডে দুর্গমতা, জঙ্গলাকীর্ণ, বিভীষিকাময় প্রকৃতির রহস্য ছিল বহির্জগতের অজানা। তাই একে ছায়াবৃতা বলেছেন। 

9. আফ্রিকা কীভাবে ভয়ঙ্করকে অবজ্ঞা করেছিল ?

⇒ আফ্রিকা নিজেকে উগ্র ও বিভীষিকার প্রচন্ড মহিমায় তুলে ধরে বিষনকে অবজ্ঞা করেছিল। অর্থাৎ বন্য, দুর্গম প্রকৃতির বিরূপতাকে আফ্রিকা যেন ভয়ের সৌন্দর্য্য দিয়েই জয় করতে চেয়েছিল। 

10. ‘এল মানুষ ধরার দল’ - কারা, কেন এসেছিল ?

⇒ মানুষ ধরার দল বলতে আফ্রিকা কবিতায় ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকদের কথা বলা হয়েছে। এরা ইউরোপ থেকে এসেছিল আফ্রিকার সম্পদ ও মানব সম্পদ লুঠ করতে। 

11. মন্দিরে কখন, কার উদ্দেশ্যে ঘন্টা বাজছিল ?

⇒ আফ্রিকায় যখন সাম্রাজ্যবাদীদের রক্তাক্ত অত্যাচারে কলঙ্কিত ইতিহাস রচিত হচ্ছে তখন সেই সাম্ৰাজ্যবাদীদের দেশে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে ঘন্টা বাজছিল। 

12. যুগান্তের কবির কাছে কবি কী অনুরোধ করেছেন ?

⇒ এই কবিতায় কবি আফ্রিকার অত্যাচারিত, লাঞ্ছিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সভ্য সাম্রাজ্যবাদীদের হয়ে যুগান্তের কবিকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। 

13. এই কবিতায় অপমানিত ইতিহাসের বিপরীতে কোন বিষয়টিকে স্থাপন করেছেন ?

⇒ এই কবিতায় অপমানিত ইতিহাসের বিপরীতে এশিয়া, বিশেষত ভারতীয় আধ্যাত্মিকতার প্রতিবেশকে স্থাপন করেছেন। 

14. এই কবিতায় কোন সত্যকে উপস্থাপন করেছেন, যা কবির অন্তরকে ব্যাথিত করেছে ?

⇒ আফ্রিকার ইতিহাসে লক্ষিত হয় যে সভ্য মানুষের অত্যাচারিত রূপের দ্বারা নীরব প্রকৃতি অপমানিত হয়েছে। এই সত্যই কবিকে ব্যাথিত করেছে। 

15. ‘স্রষ্টা যখন নিজের প্রতি অসন্তোষে’ - স্রষ্টা কে, তার অসন্তোষের ফলে কী হয়েছিল ?

⇒ ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘আফ্রিকা’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ স্রষ্টা বলতে বিধাতাকে বুঝিয়েছেন। 

আফ্রিকা ‘মহাদেশীয় চলন’ তত্ত্ব অনুযায়ী, ভূআন্দোলনের ফলে একাধিকবার স্থানান্তরিত হয়েছে। শুধুমাত্র স্থানান্তরই নয়, তাকে অবস্থান দেওয়া হয়েছিল যে তা ছিল একেবারে দুর্গম ও জনহীন। এইভাবেই দুর্গম পরিবেশে স্থানান্তরিত করার ফলে ঘন অরণ্যবেষ্টিত আফ্রিকায় সূর্যের আলো যেমন পৌঁছাতে পারে না তেমনই শিক্ষার আলোটুকুও পৌঁছাইনি। স্রষ্টা নিজের প্রতি অসন্তুষ্ট হওয়ার জন্যই এমন করেছেন বলে কবি মনে করেছেন। 

16. ‘শঙ্কাকে চাচ্ছিলে হার মানাতে’ - বক্তা উদ্দিষ্ট অংশকে কীভাবে হারানোর কথা বলেছেন ?

⇒ আফ্রিকা কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আফ্রিকার ভৌগোলিক অবস্থান ও ভূমিরূপ প্রসঙ্গে উপরোক্ত মন্তব্যটি করেছেন। 

পৃথিবীর প্রাচীনতম মহাদেশ ও সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন হল ‘আফ্রিকা’, এর সৃষ্টি লগ্ন থেকে স্রষ্টার যে অসন্তোষ বারবার পরিলক্ষিত হয়েছে, পূর্বাঞ্চলীয় অংশ থেকে এই মহাদেশকে বিচ্ছিন্ন করে দুর্গম অরণ্য অঞ্চলে অবস্থান দিয়ে আরো বেশি শঙ্কাযুক্ত করেছেন বলে মনে হয়েছে। গভীরতম অন্ধকারের মতো সভ্যতার আলোটুকুও সেখানে না পৌঁছানোই কবি মনে করেছেন পূর্বের বীভৎসতা হার মানাতেই তার এই বর্তমান রূপ। 

17. ‘চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে’ - তুমি কে ? কোন চিহ্ন কেন অপমানিত বলে মনে হয়েছে ?

এখানে ‘তুমি’ বলতে আফ্রিকার কথা বলা হয়েছে। 

পৃথিবীর প্রথম মানব জাতির আবির্ভাব আফ্রিকাতে হওয়ায় এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অন্যতম পিঠস্থান হিসাবে আফ্রিকাকে চিহ্নিত করে পশ্চিমী সভ্যতার দেশগুলি আফ্রিকা অভিযানে আসে। সেখানকার সহজ, সরল মানুষগুলির বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে তাদেরকে দাসে পরিণত করে, শুধু তাই নয় পশুদের মতোই তাদের কেনাবেচা ও নির্যাতন করা হত; মানুষ বলে কোনো রকমেই তাদের বিবেচনা করা হত না। শুধুমাত্র শিক্ষা-দীক্ষা ও সভ্যতায় উন্নত হওয়াই তাদের ঔদ্ধত্য ও অহংকার নির্লজ্জতায় পরিণত হয়েছে। এভাবেই মানব জাতির অবক্ষয় ও অপমানকে ‘অপমানিত ইতিহাস’ বলে উল্লেখ করেছেন। 

18. ‘শিশুরা খেলছিল মায়ের কোলে’ - কোন শিশুদের কথা, কেন বলা হয়েছে ?

⇒ ঔপনিবেশিক শক্তির অন্তর্গত দেশগুলির শিশুদের কথা এখানে বলা হয়েছে। 

ঔপনিবেশিক শক্তি যে মুহূর্তে নিলর্জ্জ অমানসিকতা আফ্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সেই মুহূর্তে এই নগ্নরূপ প্রকাশকারী ঔপনিবেশিক শক্তির আবাসস্থল, তাদের দেশের শিশুদের কথা বলা হয়েছে। 

আফ্রিকা সম্পদের পীঠস্থান হওয়ায় বহু বৈদেশিক জাতি বহুবার আফ্রিকা আক্রমণ করেছে। এদের মধ্যে একমাত্র বরবর ও নির্লজ্জ, পাশবিক জাতি হল ইংরেজ, যে মুহূর্তে তাদের অত্যাচারে ও অপমানে জর্জরিত অবহেলিত আফ্রিকাবাসী সেই মুহূর্তে পরো পারে থাকা ইংরেজ জাতির স্বাভাবিকতাকে কবি উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, একই সময়ে ঔপনিবেশিক শক্তির বিকাশ ঘটলেও, সংস্কৃতির পরিচর্চা হলেও শুধুমাত্র বঞ্চিত হয়েছে আফ্রিকা। এইজন্যই কবি একথা বলেছেন। 

19. ‘সেই হোক সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী’ - পুণ্যবাণীটি কী ? কীভাবে তা পুণ্যতা অর্জন করবে বলে কবি মনে করেছেন ?

⇒ সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণীটি হল ‘ক্ষমা করো’ 

হিংসা, দ্বন্দ্ব, সংঘাত এগুলির সমস্যা সমাধানে চিরস্থায়ী কোনো মাধ্যম নয়। এগুলির মাধ্যমে পৃথিবী আরও অশান্ত হয়ে ওঠে, মানুষে মানুষে সংঘাতের সৃষ্টি হয়। তাই কবি প্রাথর্না করেছেন হিংসার পরিবর্তে অহিংসা ও ভালোবাসা দিয়েই সমস্যার সমাধান করতে। পরস্পর হিংসা, সংঘাতে আজ যখন পৃথিবী ধ্বংসের সম্মুখীন, সভ্যতা ধ্বংসের মুখোমুখি সেই মুহূর্তেই তিনি প্রার্থনা করেছেন, মানব জাতির এই বর্বরতা রুখতে ক্ষমা করে দেওয়া হোক হিংস্র শক্তিকে তবেই পৃথিবী আবার আমাদের বসবাসের উপযোগী হয়ে উঠবে। 

20. ‘বাঁধলে তোমাকে বনস্পতির নিবিড় পাহাড়ায়’ - তাৎপর্য লেখ। 

⇒ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতায় আফ্রিকা সৃষ্টির জন্ম -লগ্ন থেকে স্রষ্টার যে অসন্তোষ তা কবিতায় বর্ণিত হয়েছে। প্রথমত, তাকে সভ্য দেশগুলির থেকে পৃথক করা হয়েছে, এছাড়াও তাকে উন্নত মহাদেশ গুলির থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে, স্থানান্তরিত করা হয়েছে নির্জন নিবিড় অরণ্যে ; যেখানে সূর্যের আলোটুকুও বা সভ্যতার আলোটুকুও পৌঁছাইনি। এভাবে গহন ও নিবিড় অরণ্যে স্থানান্তরকে বনস্পতির নিবিড় পাহাড়ায় বেঁধে রাখা হয়েছে বলে কবি উল্লেখ করেছেন। 


Ratings
No reviews yet, be the first one to review the product.
Click to send whatsapp message
Copywrite 2024 by  Misiki Technologies LLP