অসুখী একজন - পাবলো নেরুদা | সংক্ষিপ্ত ও রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

Language : Bengali

অসুখী একজন - পাবলো নেরুদা | সংক্ষিপ্ত ও রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর 

1. ‘অসুখী একজন’ কবিতাটির উৎস লেখ। 

⇒ ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি কবি নবারুণ ভট্টাচার্যের অনুবাদিত কাব্যগ্রন্থ ‘বিদেশী ফুটে রক্তের ছিঁটে’ -এর অন্তর্গত। 

2. কবিতাটির মূল রচয়িতা কে ?

⇒ ‘অসুখীএকজন’ কবিতাটির মূল রচয়িতা কবি পাবলো নেরুদা। স্প্যানীশ ভাষায় কবিতাটির নাম ‘La Desdicheda’

3. পাবলো নেরুদার প্রকৃত নাম কী ?

⇒ নেকতালি রিকার্দো রেয়েন্স বাসোয়ালতো। 

4. তিনি আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার ও নোবেল পুরস্কার কবে পান ?

⇒ ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার এবং ১৯৭১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। 

5. পাবলো নেরুদা নামটির উৎস কী ?

⇒ বিখ্যাত চিত্রকর পাবলো পিকাসো এবং চেক লেখক জাঁ নেরুদার নাম থেকে সংগৃহীত। 

6. কবিতাটির মূলভাব কী ?

⇒ তৎকালীন বিশ্ব ও সমাজ। 

7. কবিতাটির বিষয়বস্তু লেখ। 

⇒ 1934 -এ স্পেনের গৃহযুদ্ধ ও সাধারণ মানুষের শোচনীয় অবস্থা। 

8. ‘আমি তাকে ছেড়ে দিলাম’ - কে, কাকে, কেন ছেড়ে দিয়েছেন ?

⇒ ‘অসুখী একজন’ কবিতায় তার প্রেয়সীকে ছেড়ে দিয়েছেন। 

স্পেনের গৃহযুদ্ধের সময় দেশের প্রয়োজনে সেনাবাহিনীতে যোগদান করা আবশ্যিক হওয়ায় কথক তার প্রেয়সীকে ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। 

9. ‘আমি চলে গেলাম দূর…দূরে’ - তাৎপর্য লেখ। 

⇒ ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি তার প্রেয়সীকে ছেড়ে যুদ্ধে যোগদান করতে বাধ্য হয়েছে। যুদ্ধ তাদের মধ্যে গড়ে তুলেছে বিস্তর ব্যবধান। কারণ যুদ্ধের বীভৎসতায় যে রক্তপাত ও জীবনহানি ঘটে তাতে ফিরে আসার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। তাই লেখক অর্থাৎ কবি ও তার প্রেয়সীর মধ্যে এই দূরত্বকে দূর অনেক দূর বলে উল্লেখ করেছেন। 

10. ‘সে জানত না আমি আর কখনো ফিরে আসব না’ - কে, কেন জানত না ফিরে না আসার কথা ?

অথবা, সে ফিরে আসার কথা জানত কীভাবে ?

⇒ কবিতায় কবির প্রেয়সী জানত না, কবি আর ফিরে আসবে না বলে। অর্থাৎ সে বিশ্বাস করত কথক অবশ্যই ফিরে আসবে। 

কবিতায় যুদ্ধের বিভৎসতার বিপরীতে উপস্থাপিত হয়েছে ভালোবাসা।  যুদ্ধ যেভাবে মানুষের জীবন কেড়ে নেয়, সম্পর্ককে ধ্বংস করে, ঠিক তার বিপরীতে থাকা ভালোবাসা মানুষের জীবনকে রক্ষা করে, সম্পর্কের বাঁধনকে আরও মজবুত করে। ভালোবাসার এই দৃঢ়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েই তার প্রেয়সী তার ফিরে আসার ঘটনায় দৃঢ় বিশ্বাসী ছিল। 

11. ‘ঘাস জন্মালো রাস্তায়’ -কে, কখন, কেন একথা বলেছেন ?

⇒ ‘ অসুখী একজন’ কবিতায় কবি তার প্রেয়সীকে ছেড়ে চলে আসায় সময়ের দীর্ঘ দূরত্বকে বোঝাতেই এরূপ মন্তব্য করা হয়েছে। 

রাস্তায় ঘাস জন্মানো অর্থে যেমন দীর্ঘকালীন চলাচল না করাকে বোঝায়, ঠিক তেমনই তাদের মধ্যে গড়ে ওঠা প্রতিবন্ধকতাকে বোঝাতে ঘাস গজিয়ে ওঠার প্রসঙ্গকে আনা হয়েছে। কথক ও তার প্রেয়সীর মধ্যে গড়ে ওঠা নিঃসঙ্গতা, একাকীত্বতাকে বোঝাতেই কথাটি বলা হয়েছে। 

12. ‘শিশু, বাড়িরা খুন হল’ -’শিশুর’ শব্দ ব্যবহারের কারণ কী ? ‘বাড়িরা’ শব্দ ব্যবহারে কী বোঝানো হয়েছে ?

⇒ ‘অসুখী একজন’ কবিতায় যুদ্ধের বিভৎসতা উল্লেখ করতে উপরোক্ত শব্দদুটি ব্যবহৃত হয়েছে। 

‘শিশু’ ভবিষ্যতের প্রতিনিধি, প্রতীক, যেকোনো রাষ্ট্রেই, সমাজে শিশুরাই ভবিষ্যতের নাগরিক হয়ে থাকে। এই শিশুদের হত্যার মধ্য দিয়ে সেই দেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে নষ্ট করার কথা প্রসঙ্গেই শিশুদের খুন হওয়ার কথাটি উঠে এসেছে। 

‘বাড়ি’ একটি বস্তুবাচক বিশেষ্য। সাধারণত বস্তুবাচক বিশেষ্যের ক্ষেত্রে ‘গুলি’, ‘গুলো’ ইত্যাদি বহুবচন সূচক শব্দ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এখানে তা না হয়ে ‘রা’ যুক্ত হয়েছে। কারণ মৃত্যু বলতে প্রাণীদের মৃত্যুকেই বোঝায়। যুদ্ধে যুদ্ধকারীদের পাশাপাশি সাধারণ, নিরাপরাধ, নিরীহ মানুষের মৃত্যু বোঝাতে ‘বাড়িরা’ শব্দের ব্যবহার হয়েছে। এই সমাজের অকাল মৃত্যুকে উল্লেখ করতেই লেখক উপরোক্ত মন্তব্যটি করেছেন। 

13. ‘বছরগুলো নেমে এল তার মাথার ওপর’ -তার বলতে কার কথা বলা হয়েছে ? কীভাবে বছরগুলো তার মাথার ওপর নেমে আসে ?

⇒ এখানে কথকের অপেক্ষায় থাকা কথকের প্রেয়সীটির কথা বলা হয়েছে। 

বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে সামরিক শিবিরে অংশ গ্রহণ করা পাশ্চাত্য দেশগুলির নাগরিকদের একটি আবশ্যিক কর্তব্য ছিল। ফলে দেশের প্রয়োজনে যেকোনো সময় তাদের সংসার ছেড়ে যুদ্ধ শিবিরে অংশগ্রহন করা বাধ্যতামূলক ছিল। এরকমই একটি চরিত্র হল আলোচ্য কবিতার কথক। ফলে কথকের অপেক্ষায় প্রতীক্ষা করতে বাধ্য হওয়ায় তার প্রেয়সী। সে প্রত্যাশা করে কথক একদিন ফিরে আসবে, কিন্তু তার অপেক্ষা একটু একটু করে দিন-সপ্তাহ-বছরে পরিণত হয়। প্রিয়তম মানুষটিকে ছাড়তে বাধ্য হওয়ায় যে একাকীত্বতা, বেদনার সৃষ্টি হয় তা কতগুলি রূপকে লেখক তুলে ধরেছেন। বৈচিত্রহীন এই সময় প্রেয়সীর কাছে পাথরের মতোই নীসর ও বৈচিত্রহীন বলে মনে হয়েছে। 

14. দেবতারা কত বছর ধ্যানে মগ্ন ছিলেন ?

⇒ হাজার বছর। 

15. ‘তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না’-কারা, কেন স্বপ্ন দেখতে পারল না ?

⇒ ধ্যানে মগ্ন থাকা শান্ত হলুদ দেবতারা। 

যুদ্ধের বীভৎস রূপ যেভাবে মানুষকে অমানবিক করে তোলে, মানুষকে হিংসাত্মক করে তোলে, মানুষের মন থেকে অধ্যাত্ম চেতনাকে দূর করে তার ফলেই দেবতাদের স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার কথা বলা হয়েছে। 

16. ‘সব চূর্ন হয়ে গেল’ - কী কী চূর্ণ হল ?

⇒ কথকের প্রিয় বাড়ি, ঝুলন্ত বিছানা, গোলাপি গাছ, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ সমস্ত কিছুই চূর্ণ হয়ে যায়। 

17. ‘যেখানে ছিল শহর’-’শহর’ কী ? সেখানে কী হল ?

⇒ ‘শহর’ হল উন্নত সভ্যতার প্রতীক। 

উন্নত সভ্যতার এই প্রতীক যুদ্ধের বীভৎসতায় ক্ষত -বিক্ষত হয়ে ওঠে, শ্মশানে পরিণত হয়। শ্মশানের মতোই সেখানে পড়ে থাকে কাঠ -কয়লা, দোমড়ানো লোহা ইত্যাদি। 

18. ‘আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়’ - কোন মেয়েটি কেন তার অপেক্ষায় রয়েছে ? একথার মধ্য দিয়ে লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন ?

⇒ ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি তথা কথক যুদ্ধ যাত্রা করলে, তার অপেক্ষায় থাকেন তার প্রিয়তমা, প্রেয়সী।এখানে এই প্রেয়সীকেই ‘সেই মেয়েটি’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ইউরোপীয় দেশগুলির নাগরীকদের বাধ্যতামূলক কর্তব্য ছিল দেশের প্রয়োজনে যেকোনো সময় যুদ্ধ ক্ষেত্রে অংশগ্রহন করা। এই জন্যই কথকও যুদ্ধ শিবিরের উদ্দেশ্যে গমন করলে তার ফিরে আসার অপেক্ষায় দিনযাপন করতে থাকে প্রেয়সীটি। সে আশা করে একদিন না একদিন অবশ্যই তার প্রিয় মানুষটি ফিরে আসবে। 

আলোচ্য কবিতায় ‘সেই মেয়েটি’ ভালোবাসার প্রতীক অর্থে আলোচিত হয়েছে। কবিতায় যুদ্ধ যেভাবে দিন -সপ্তাহ, মাস ও বছর ছাড়িয়ে দীর্ঘ বিস্তৃতি লাভ করেছে, সেই সময়ের বিস্তৃতিতেও মলীন হয়নি তাদের ভালোবাসা। যুদ্ধের বীভৎসতা যেভাবে সমাজকে অবক্ষয়ের দিকে নিয়ে গেছে যেমন - শিশু ও বাড়িরা খুন হয়েছে, আমাদের স্রষ্টা দেবতারাও ধ্বংস হয়েছে, আমাদের নিরাপদ ও শখের আবাস ধ্বংস হয়েছে, চূর্ণ হয়েছে ঝুলন্ত বিছানা, গোলাপি গাছ, প্রাচীন জলতরঙ্গ সবকিছুই। উন্নত সভ্যতার প্রতীক স্বরূপ শহরও শ্মশানে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধের বিভৎসতা আমাদের যাবতীয় সম্পত্তি নষ্ট করলেও শুধুমাত্র প্রভাবিত করতে পারে না ভালবাসার সম্পর্ককে। এই ভালবাসার সম্পর্ক অক্ষত রাখতেই লেখক শেষ অংশে মেয়েটিকে বাঁচিয়ে রাখার কথা বলা হয়েছে। এই জন্যই শেষপর্যন্ত সবকিছুর ধ্বংস হলেও মেয়েটি বেঁচে রয়েছে, তার অপেক্ষায় বেঁচে রয়েছে। 

Ratings
No reviews yet, be the first one to review the product.
Click to send whatsapp message
Copywrite 2024 by  Misiki Technologies LLP