জ্ঞানচক্ষু - আশাপূর্ণা দেবী | সংক্ষিপ্ত ও রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

Language : Bengali

  1. “জীবনের সবচেয়ে সুখের দিনটি এল আজ’’ -সুখের দিনটি কেমন ?সত্যিই কী সেটি সুখে  দিন ছিল ?আলোচনা কর। 

➪আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র তপন। তপনকে কেন্দ্র করে লেখিকার যে বক্তব্য এখানে প্রকাশিত হয়েছে তা হল - অন্যের সহায়তা ছাড়া নিজেকে সার্থকভাবে প্রকাশ করা। 

তপনের লেখাটি তার মেসো সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপিয়ে নিয়ে আসলে তপনের প্রাথমিক ভাবে সেই ঘটনাকে জীবনের সবচেয়ে সুখের দিন বলে মনে হয়েছে কারন সে ভেবেছে তার এই লেখায় তার পরিচিতি বারাবে, হাজার হাজার ছেলের হাতে ঘুরবে তার এই গল্প। নিজেকে লেখক হিসেবে দেখার এই দিনটিকেই অলৌকিক ঘটনা, জীবনের সবচেয়ে সুখের দিন বলে মনে করেছেন। 

প্রকৃতপক্ষে এই ঘটনাটি তপনের কাছে শেষমেষ সুখের স্মৃতি নিয়ে আসেনি। মেসোর কারেকশান করে দেওয়া এই গল্পটি পরতে গিয়ে বার বার তাকে থামতে হয়েছে, অচেনা আনকোর লেখা গুলো তাকে সুখের পরিবর্তে যন্ত্রনায় দগধ করেছে। গল্পের মধ্যে কোথাও নিজে পরিচিত শব্দ না পেয়ে আন্তরিকভাবে উপলব্ধি করে। 

আর কোনো দিন নিজের লেখা কাউকে দিয়ে ছাপাতে দেবে না, নিজে গিয়ে দিয়ে আসবে। এই আন্তরিক উপলব্ধি শেষ পর্যন্ত উক্ত ঘটনাকে সুখের করে তুলতে পারে নি। 


2.  ‘জ্ঞানচক্ষু’-গল্পে তপনের মেসোর চরিত্রের বৈশিষ্ট্য গুলি লেখো।

➪’কুমকুম’ গল্পগ্রন্থের অন্তর্গত ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে লেখিকা আশাপূর্ণা দেবী তপনের চরিত্রটিকে ব্যাখ্যা করতে তার মেসোর কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন। এগুলি হল -

i)দূরদৃষ্টিসম্পন্ন :-মেসোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল তিনি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। তপনের কাঁচা হাতের লেখা দেখে বুঝে ছিলেন এবং বলেছিলেন তপনের লেখার হাত আছে। তাই অন্যান্যদের মতো না হয়ে তপন নিজের মতো গল্প লিখেছে। উল্লেখ প্রথম গল্পের পরও পুজোর ছুটিতে আরোও একখানি গল্প লিখেছে। 

ii)মিতভাষী :-তপনের মেসোর অন্যতম বৈশিষ্ট্যটি হল তিনি মিতভাষী তিনি পরিমিত কথা বলেন। তাই তার কথা কেউ না করতে পারে না। 

iii)মিতহাড়ি :- তপনের মেসো মিতভাষীর পাশাপাশি মিতা হাড়ি অর্থাৎ পরিমিত খাবার খান। তাই খাবার সময় বেশি খাবার না নিয়ে অর্ধেক তুলে দেন অর্থাৎ শরীর বুঝে খান। 

iv)প্রতিশ্রুতি পরায়ন :-তপনের মেসো অধ্যাপক হওয়ার পাশাপাশি প্রতিশ্রুতি পরায়নও তাই তপনের লেখা সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপিয়ে দেবেন বলে কথা রেখেছেন। তপনের লেখাটি এজন্যই সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। 

v)অহংবোধ :-তপনের মেসোমশাই পেশায় অধ্যাপক ও প্রতিশ্রুতি পরায়ণ হলেও তার মধ্যে ঈষৎ অহং বোধ হয়েছে। তাই নিজের পান্ডিত্যকে প্রকাশ করতে না বলে তপনের গল্পকে কারেকশান করে দিয়েছে। একবারও বুঝিনি এতে তপনের সত্ত্বা আহত হতে পারে। নিজেকে প্রকাশ করতেই এই অহংবোধ ধরা পড়েছে। 


1. এ বিষয়ে সন্দেহ ছিল তপনের বিষয়গুলি কী ?

➪লেখক হবার আগ্রহ প্রকাশকারী তপন প্রাথমিকভাবে মনে করত লেখকেরা আকাশ থেকে পড়া জীব। লেখক তিনি যে তপনের বাবা, কাকা ও ছোটো মামার মতো মানুষ সে সেটা জানত না। 


2. কথাটা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল -কথাটি কী ?

➪কথাটা হল তপনের নতুন মেসোমশাই একজন লেখক ,সত্যিকার লেখক। 


3.মেসোকে দেখে জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল তপনের -কীভাবে জ্ঞানচক্ষু খুলে যায় ?সত্যিই জ্ঞানচক্ষু খুলেছিল?

➪তপনের মেসোমশাই তার বাবা, মামা, কাকাদের মতো সাধারন মানুষ দাঁড়ি কামান, সিগারেট খান, সময়ে চান করেন, সময়ে ঘুমান, গল্প করেন, তর্ক করেন, সাজগোজ করে সিনেমা দেখতে যান। এই সাধারণ বিষয়গুলি শেখার পরেই তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে যায়। 

প্রকৃতপক্ষে তপনের জ্ঞানচক্ষু এই ঘটনায় খোলেনি পরবর্তী ঘটনায় তা সম্পন্ন হয়েছে। 


4.রত্নের মূল্য জুহুরিত কাছে -রত্ন ও জুহুরি কে ?কার সঙ্গে তুলনীয় ?

➪এখানে রত্ন বলতে তপনের লেখাকে এবং জুহুরি বলতে তার মেসোমশাইকে বোঝানো হয়েছে। জুহুরি যেমন রত্ন চেনেন ঠিক তেমনই তপনের লেখা গল্পকেও উপলব্ধি বা কাকার তথা গল্প লেখার দক্ষতাকে তার মেসো বুঝতে পারবে বলে সে মনে করেছে। 


5.মেসোর উপযুক্ত কাজ হবে সেটা -কাজটি কী ?

➪তপনের লেখা গল্প সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপিয়ে দিয়ে তপনের লেখক হওয়ার সত্ত্বাকে উৎসাহিত করায় উপযুক্ত লেখক মেসোর কাজ হবে বলে ছোটো মাসি মনে করেছেন। 


6.মাথার চুল খাঁড়া হয়ে উঠল -কার কখন এমন হয়েছিল ?

➪তপন যখন পুজোর ছুটিতে মামার বাড়িতে হোম খাতায় তিনতলা সিঁড়িতে উঠে দুপুর বেলায় আস্ত একখানা গল্প লিখে ফেলে তখন নিজেকে লেখক বলে মনে করে আনন্দে এরূপ হয়েছিল।

 

7.এই সময় ঘটল সেই ঘটনা -ঘটনা কী কী ?কোন সময় ঘটেছিল ?

➪তপনের ছুটি ফুরালে গল্প লেখার আশায় প্রতীক্ষা চালাছিল। তপনের কাছে তার মেসোমশাই সন্ধ্যাতারা পত্রিকা নিয়ে উপস্থিত হলে, তপনের মন আনন্দে উৎসাহিত হয়ে উঠে এই ঘটনার কথা বলা হয়েছে। 


8.তপনের জীবনের সবচেয়ে সুখের দিনটি এল আজ -সুখের দিনটি লেখ?

➪তপনের লেখা গল্প প্রথম দিন সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় প্রকাশ হয়ে হাজার হাজার ছেলের হাতে ঘুরবে অনেকে তার নাম জানবে এই আশাতেই সুখের দিন বলে মনে করেন। 


9.তপন আর পড়তে পারে না ?-কেন ?

➪তপনের লেখা গল্পটি আগাগোড়া কারেকশন হওয়ায় লেখার মধ্যে কোথাও নিজের পরিচিত কথাকে সে দেখতে পাই না। গড়গড়ি পড়ে গেলেও তার মাথায় ঢোকে না, তাই তপনের এই কথাকে প্রকাশ করতেই লেখক এই কথা বলেছেন। 


10.তার চেয়ে দুঃখের আর কিছু নেই -দুঃখটি কী ?

➪নিজের গল্প পড়তে বসে অন্যের লেখা লাইন পড়ানো হল ভীষণ দুঃখের কষ্টের এই দুঃখের কথা বলা হয়েছে। 


11.মেসোকে দেখে তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল মেসো কে ? কীভাবে তার জ্ঞানচক্ষু খুলে যায় তার কী প্রকৃত জ্ঞানচক্ষু খুলেছিল আলোচনা করো ?

➪আশাপূর্ণা দেবীর কুমকুম গ্রন্থের অন্তর্গত জ্ঞানচক্ষু গল্পে মেসোমশাই হলেন তপনের ছোটো মেসোমশাই। একজন লেখক প্রোফেসর। 

নতুন মেসোকে দর্শন করে তপনের পূর্ব জ্ঞানের পরিবর্তন ঘটে সে বুঝতে পারে কবির অন্যান্য সদস্যদের মতো তার মেসোমশাই একজন সাধারন মানুষ। যিনি গল্প করেন, সময়ে স্নান করেন, সময়ে ঘুমান ইত্যাদি। গল্পকার লেখা গল্পের প্রকৃত উদ্দেশ্য গল্পের শেষ অংশে ব্যাখ্যা করেছেন। লেখক মেসো অন্যান্য সদস্যদের মতোই যে সাধারন মানুষ প্রকৃতপক্ষে এটি জ্ঞানচক্ষু বিকাশ বা সৃষ্টিকারী নয়। নিজের গল্প অন্যের হাতে সম্পূর্ণ কারেকশান হলে সেটা লেখক তপনকে মানসিক যন্ত্রনায় কাতর করে তোলে অপমানিত করে তোলে। তাই যে মুহূর্তে তপনকে কারেকশন করা গল্পটি পড়তে বলা হয়েছে তখনই সে দুঃখে বোকার মতো হয়ে যায় বাক্য হারিয়ে যায়। তার মাথায় কিছুই ঢোকে না। এই ঘটনার জন্য সে সবচেয়ে দুঃখের দিন বলে বর্ণনা করেছেন। উপলব্ধি করেছেন নিজের লেখা ছাপাতে গেলে সে নিজেই যাবে তাতে ছাপা হলে হবে না হলে না হবে। এতে কোনো প্রকার দুঃখ বা অপমান বোধ থাকবে না, তপনের এই উপলব্ধিকে গল্পকার জ্ঞানচক্ষু খুলে যাওয়া বলে বোঝাতে চেয়েছেন।  


12.জ্ঞানচক্ষু গল্পে কেন্দ্রীয় চরিত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো ?

➪বাংলা সাহিত্যের অন্যতম খ্যাতনামা গল্পের আশাপূর্ণা দেবীর কুমকুম গল্প গ্রন্থের অন্তর্গত জ্ঞানচক্ষু গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্ৰটি হল তপন। গল্পের আগাগোড়া তপনের চরিত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়, সেগুলি নীচে আলোচনা করা হল :-

i)অজ্ঞতা :-অপরিচিত হওয়ায় তপন চরিত্রের অন্যগত বৈশিষ্ট্য হিসাবে তারা আকাশ থেকে পরা জীব। সে জানে না লেখকের অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতোই খাওয়া দাওয়া, স্নান করা, ঘুমানো গল্প করা ইত্যাদি করেন। তারা আকাশ থেকে পড়া কোনো জীব নয়। 

ii)সরলতা:-লেখক আকাশ থেকে পরা কোনো জীব নয় তপনদের মতোই মানুষ একথা বোঝার পর সে খুব সহজেই বুঝতে পারে সেও চেষ্টা করলে মেসোর মতো লেখক হতে পারে। 

iii)পরিশ্রমিক বা উদ্যোগী :-তপন চরিত্রে অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল যে উদ্যোগী, আগ্রহী, তাই লেখক হবার বাসনাকে পরিশ্রমিক করেছে মেসোকে একটি গল্প লিখে দেবার পরও ছুটিতে আরোও একটি গল্প লিখে ফেলে। 

iv)সচেতনতা :-তপন বয়সে অপরিত্রাদিস্যি হলেও বাস্তব পরিস্থিতি তাকে সচেতন করে তুলেছে। তার গল্পে সে অপেক্ষা মেসোমশাই এর কারেকশন বেশি গুরুত্ব পাওয়াই তার অত্মসত্ত্বা অপমানিত হয়েছে। সে উপলব্ধি করেছে আর কখনো কোনো গল্প ছাপাতে হলে সে নিজে গিয়ে দিয়ে আসবে। তাতে ছাপানো হলে হবে না হলে না হবে। গল্পের শেষে এই সচেতনতাবোধই প্রকৃতপক্ষে তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে দিয়েছে। গল্পের ব্যঞ্জনাকে ফুটিয়ে তুলেছে। 

তপন চরিত্রের এই বৈশিষ্ট্যগুলি জ্ঞানচক্ষু গল্পে ব্যাঞ্জনা সৃষ্টিতে সাহায্য করেছে।



Ratings
No reviews yet, be the first one to review the product.
Click to send whatsapp message
Copywrite 2024 by  Misiki Technologies LLP