রাধারাণী || বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

Language : Bengali

1. রাধারানী - গল্পটি কার লেখা ?

উঃ - সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের। 

2. রাধারাণী কোথায় রথ দেখতে গিয়েছিল ?

উঃ - শ্রীরামপুরের মাহেশের রথ দেখতে গিয়েছিল। 

3. রাধারাণীর মা -এর সঙ্গে তাদের জ্ঞাতির কী নিয়ে মামলা হয়েছিল ?

উঃ - বিষয় সম্পত্তি 

4. রাধারাণীদের সম্পত্তি কারা, কীভাবে দখল করে ?

তাদের জ্ঞাতি মোকদ্দমায় ডিক্রি জারি করে তাদের সম্পত্তি দখল করেছিল। 

5. উচ্চ আদালতে পরাজয়ের পর রাধারাণীর মা কোথায় আপিল করেন ?

উঃ - ইংল্যান্ডের প্রিবি কাউন্সলে। 

6. রাধারাণী আলো জ্বালতে দেরি হচ্ছিল কেন ?

উঃ - ঘরে প্রদীপ জ্বালানোর তেল না থাকায় রাধারাণীকে চালের খড় পেড়ে চকমকি ঠুকে আলো জ্বালাতে হয়েছিল। এই জন্যই তার দেরি হচ্ছিল। 

7. রাধারাণী অক্ষর জ্ঞান থাকার কারন কী ?

উঃ - রাধারাণী বড়ো ঘরের মেয়ে হওয়ায় সে কিছুটা পড়াশোনা শিখেছিল। 

8. রুক্মিণীকুমার রায় তার নোটে নাম লিখেছিলেন কেন ?

উঃ - তাঁর দেওয়া নোটটি যাতে কেউ চোরা নোট বলতে না পারে তার জন্যই নাম লিখেছেন। 

9. রাধারাণী ও তার মা প্রাপ্ত নোটটি ভাঙাননি কেন ?

উঃ - রাধারাণী ও তার মা দরিদ্র হলেও লোভী নয় তাই তাকে নোটটি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নোটটি তুলে রেখেছেন, ভাঙাননি। 

10. বনফুলের মালা বিক্রির মূল্য বাবদ রাধারাণী যে পয়সা পেয়েছিল তা দিয়ে কী করেছিল ?

উঃ - রাধারাণী তার মায়ের পথ্যের উদ্যোগে বাজারে গিয়ে বাজার করে ও তেল এনে প্রদীপ জ্বালায়। 

11. তাদের ঘরে পড়ে থাকা কাগজটি যে নোট - তা কে প্রমাণ করেন ?

উঃ - রাধারাণীর মা। 

12. পদ্মলোচন সাহা অপরিচিত ব্যক্তিকে কত টাকায় -কয়টি শাড়ি বিক্রি করেন ?

উঃ - আট টাকা সাড়ে চোদ্দো আনায় দুটি শান্তিপুরের শাড়ি বিক্রি করেন। 

13. রাধারাণীদের আদি নিবাসস্থল কোথায় ?

উঃ - হুগলি জেলার শ্রীরামপুরে। 

14. রথের মেলার রাধারাণীর একা যাওয়ার কারণ কী ?

উঃ - বনফুলের মালা বিক্রি করে অসুস্থ মায়ের জন্য ঔষধ জোগাড় করতে সে রথের মেলায় একা যায়। 

15. রথের মেলায় সে কোন অবস্থার মধ্যে পড়েছিল ?

উঃ - প্রবল বৃষ্টি ও ঝড় ঝঞ্ঝার মধ্যে পড়েছিল। 

16. “মালা কেহ কিনিল না” - কেন ?

উঃ - মালা বিক্রির জন্য রাধারাণী মাহেশের মেলায় গেলেও রথের টান অর্ধেক হওয়ার আগে প্রচন্ড বৃষ্টি নামে। তাই সকলে স্থান ত্যাগ করলে ফাঁকা মেলায় মালা কেনার কোনো লোক থাকে না। 

17. রাধারাণী উচ্চস্বরে কেঁদে উঠল কেন ?

উঃ - অন্ধকারে আচ্ছন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ রাস্তায় একাকী ফেরবার পথে অপরিচিত এক ব্যক্তি রাধারাণীর গা -এর উপর হঠাৎ এসে পড়ে যাওয়ায় সে উচ্চস্বরে কেঁদে উঠে। 

18. রাধারাণীর রথের মেলায় একাকী যাওয়ার কারনগুলি কী কী ? আলোচনা কর। 

উঃ - সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “রাধারাণী” উপন্যাসে রাধারাণী মাত্র দশ বছরের এক বালিকা। তার এই বয়সে একাকী কোথাও যাওয়ার কথা না হলেও যে যে কারণে সে এই কাজ করতে বাধ্য হয়েছে সেগুলি হলো -

প্রথমত, রাধারাণী ধনী পরিবারের সন্তান হলেও জ্ঞাতির সঙ্গে মামলায় সমস্ত সম্পত্তি বেদখল হয়েছে। প্রিবি কাউন্সিলে আপিল করতে গিয়ে অবশিষ্ট গহনাও বিক্রি করতে হয়েছে। তাই নিঃস্ব, রিক্ত ও সর্বহারা হয়ে কোনোরকমে ছোট্ট একটি কুটিরে আশ্রয় নেয়। 

দ্বিতীয়ত, রাধারাণীর মা -এর মাহেশের রথের দিন অসুস্থতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পথ্যের বিশেষ প্রয়োজন হয়েছিল। এই অবস্থায় নিরুপায় হয়েও একমাত্র সম্বল হয়েছিল রাধারাণী। 

তৃতীয়ত, রথের মেলায় প্রচুর জনসমাগম হবে ভেবে রাধারাণী মালা বিক্রির আশায় সেখানে যায়। সহায়ক কেউ না হওয়ায় সে বাধ্য হয় একাকী যেতে। 

বস্তুত সংগ্রামময় জীবনের অধিকারিণী রাধারাণী ভাগ্যের বিড়ম্বনায় অন্ন সংস্থানের আশায় একাকী পথ চলতে বাধ্য হয়। চরম দারিদ্রই তার একলা পথ চলার মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

19. রাধারাণীর গল্প অবলম্বনে রাধারাণীর সঙ্গে অপরিচিত ভদ্রলোকের পরিচয়ের তার যে যে বৈশিষ্ট্যগুলি ফুটে ওঠে তা আলোচনা কর। অথবা, রুক্মিণীকুমারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ। 

উঃ - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের আলোচ্য রচনাংশে এক নাটকীয় মুহূর্তে রুক্মিণীকুমারের সাথে পরিচয় হয়। জানা যায়, ওই ব্যক্তির নাম, তার আচরণগত বৈশিষ্ট্য থেকে যে পরিচয়গুলি আমরা পাই সেগুলি হল -

1. দয়ালু - দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় রাস্তায় তিনি রাধারাণীকে হাত ধরে বাড়ি পৌঁছে দেয়। কথা প্রসঙ্গে তিনি রাধারাণী ও তার পরিবারের খবর জেনে নেয়। তাকে সহানুভূতির দ্বারা সাহায্য করার চেষ্টা করেন। 

2. পরোপকারী - রাধারাণীর সঙ্গে অপরিচিত ভদ্রলোক কথা বলেই বুঝতে পারেন যে তাদের যথেষ্ট আত্মসম্মানবোধ রয়েছে। তাই মেলা কেনবার নাম করে তাদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করেছেন। 

3. আত্মপ্রচার - রাধারাণীর তিন-তিনটি উপকার তিনি করেছেন। কিন্তু কোনোবারই নিজের নাম প্রকাশ করেননি। রাধারাণীর ঘর থেকে পাওয়া নোটে তিনি নিজের নাম লিখেছিলেন যাতে টাকা নিয়ে কোনোরকম অসুবিধা তাদের না হয়। 

4. বাস্তব বুদ্ধিসম্পন্ন - রাধারাণীদের বাড়িতে ফেলে রাখা নোটটি যাতে কেউ চোরাই নোট বলে মনে না করে সেজন্য তিনি তাতে নাম লিখেছেন। এ থেকে তার বাস্তববুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়। 

20. “এ যে বড়ো বড়ো ঠেকচে”- প্রসঙ্গ লেখ। 

উঃ- আলোচ্য রাধারাণী গল্পে রুক্মিণীকুমারের রাধারাণীকে দেওয়া টাকাটির কথা বলা হয়েছে। 

মাহেশের মেলায় অসহায় রাধারাণীর সাথে পরিচয় হওয়ার পর রাধারাণীর উদ্দেশ্যে কেনা মালার মূল্য হিসেবে রুক্মিণীকুমার চার পয়সার বদলে যে টাকা দিয়েছিল তার আকার তুলনায় বড়ো ও যথাযথ মূল্যের বেশি বলে সংশয় হওয়ায় অন্ধকারে রাধারাণী একথা বলেছিল। 

21. “ তিনি কাপড় কিনে পাঠিয়েছেন”- কে, কেন কাপড় কিনে পাঠিয়েছিল ?

উঃ - রুক্মিণীকুমার বৃষ্টিতে ভেজা রাধারাণীকে বস্ত্র পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে কাপড় কিনে দিয়েছিল। 

রাধারাণী যে উদ্দেশ্যে মাহেশের মেলায় গিয়েছিল সে কথা জেনেও তাকে সহযোগিতার উদ্দেশ্যে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। 

সিক্ত রাধারাণী অসহায়তা ও বস্ত্রের অসুবিধার কথা জানতে পেরে প্রতিকারের অর্থে পদ্মলোচন সাহার দোকান থেকে একজোড়া শান্তিপুরী কাপড় কিনে তাঁরই হাত দিয়ে রাধারাণীদের বাড়িতে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করেন। 

22. “তারা দরিদ্র, লোভী নয়”- তাৎপর্য লেখ। 

উঃ - বঙ্কিমচন্দ্রের “রাধারানী” উপন্যাসের অন্তর্গত আমাদের আলোচ্য পাঠের প্রধান চরিত্র রাধারাণী ও তার মা সম্পর্কে একথা বলা হয়েছে। 

মায়ের চিকিৎসা ও অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বনফুল তুলে বিক্রির উদ্দেশ্যে মাহেশের মেলায় গিয়েছিল রাধারাণী। মেলায় বৃষ্টির কারনে ভিড় ভেঙে গেলে, মালা বিক্রি না হওয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়ে রাধারাণী। এই অবস্থায় রুক্মিণীকুমারের যথাযথ সহযোগিতায় বাড়ি ফিরলে ও রাধারাণীর মালার দামের মূল্য হিসেবে যে টাকা পায় তাতে ইতস্তত বোধ করে রাধারাণী , পাশাপাশি দেখে আরও একখানি নোট। তাদের বাড়িতে রেখে যায় রুক্মিণীকুমার। 

উপরোক্ত অবস্থায় আমরা বুঝতে পারি গরিব হওয়ায় রাধারাণীর মধ্যে অসততা ও লোভ থাকতে পারত। কিন্তু তা তার মধ্যে কাজ করেনি। মায়ের চিকিৎসার জন্য তা নিলেও সংশয়বোধ করেছে। এই অবস্থাতে সরল রাধারানী রুক্মিণীকুমারকে তার একক বস্ত্রের কথা জানালে পরক্ষণেই বস্ত্র ব্যবসায়ী পদ্মলোচন সাহার হাত ধরে কিছু কাপড় রাধারাণীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। অর্থ ও পোশাক উভয়ের প্রয়োজন থাকলে মূল্যের অতিরিক্ত দান হিসেবে তা ফিরিয়ে দিতে চেয়েছে। পরের দিন সেই ব্যক্তির খোঁজ নিয়েছে। যদিও তাতে ব্যর্থ হয়েছে তবুও সেই অতিরিক্ত মূল্য হিসেবে পাওয়া নোট খানি তুলে রেখে দিয়েছে। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই নোট না ভাঙিয়ে তাকে ফেরত দেবে বলে। এই মনোভাব থেকেই আমরা বুঝতে পারি দরিদ্র হলেও লোভী নয়। 

23. রাধারাণীর গল্প অবলম্বনে রাধারাণীর চরিত্রটি আলোচনা কর। 

উঃ - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “রাধারানী”-র  গল্পে প্রধান চরিত্র ‘রাধারাণী’ । 10-11বছরের রাধারাণী বালিকা হলেও গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তার একাধিক বৈশিষ্ট্যের পরিচয় আমরা পেয়েছি। এগুলি হল - 

1. সততা - রাধারাণী চরিত্রটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল তার সততা। সৎ মনোবৃত্তির জন্যই সে পরিশ্রমের বিনিময়ে অসুস্থ মাকে সুস্থ করতে চেয়েছে। রুক্মিণীকুমারের খোঁজখবর নিয়ে তার দেওয়া অতিরিক্ত টাকা ফিরিয়ে দিতে চেয়েছে। 

2. পরিশ্রমী - মাকে সুস্থ করতে সে বনফুল সংগ্রহ করে মালা গেঁথে মেলায় তা বিক্রি করতে গিয়েছে। বৃষ্টি এলেও অপেক্ষা করেছে বৃষ্টি থামার জন্য।এ থেকে তার পরিশ্রমী মানসিকতার পরিচয় আমরা পাই। 

3. কর্তব্যপরায়ণ - রাধারাণী চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্যটি তার কর্তব্যপরায়ণতা। তার অসুস্থ মাকে সুস্থ করার মধ্যে সংসার চালানোর উদ্দেশ্যে রান্না করা, বাজার করা সবকিছুই যেন তার কর্তব্যবোধ ও দায়িত্বশীলতাকে বুঝিয়ে দেয়। 

4. সরলতা - রাধারাণী বালিকা হওয়ায় তার সরল, স্বাভাবিক মনকে আমরা বুঝতে পারি। তাই সরলভাবে রুক্মিণীকুমারকে তার একক বস্ত্রের কথা জানিয়েছে। আবার মূল্যের অতিরিক্ত অর্থ ফিরিয়ে দিতেই তার সন্ধানও পড়েছে। 

5. বিচক্ষণ - মেলা থেকে ফেরবার পথে যে অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে রাধারাণীর দেখা হয়। তিনি মালার মূল্যস্বরূপ অতিরিক্ত অর্থ দিলে রাধারানী মা -এর কাছে কী করণীয় তা জানতে চায়। রাধারাণীর মা বিচক্ষণতার সাথে সেই দান গ্রহণে অসম্মতি জানায়। 

6. অভিমানবোধ - ভাগ্যের পরিহাসে তাকে অন্যের দান গ্রহণ করতে হয়েছে। তাই তা ফেরত দেওয়ার মধ্যে তার অভিমানবোধকেও আমরা বুঝতে পারি। 

7. শিক্ষিত ও বুদ্ধিমতী - রাধারাণী বড়ো ঘরের মেয়ে হওয়ায় তার প্রাথমিক শিক্ষার কোনো অভাব ছিল না। তাই অসময়ে মায়ের চিকিৎসা ও আহারের সংস্থানের ব্যবস্থা করে সে তার শিক্ষিত ও বুদ্ধিমতী সত্ত্বার পরিচয় দিয়েছে। 

এইভাবে রাধারাণীর চরিত্রটি বয়সে ছোটো হলেও আমাদের কাছে একটি প্রাণবন্ত ও উজ্জ্বল চরিত্রে পরিণত হয়েছে। 


Ratings
No reviews yet, be the first one to review the product.
Click to send whatsapp message
Copywrite 2024 by  Misiki Technologies LLP