Chapter-1_ NODI নদী (বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ)

Language : Bengali

West Bengal Board WBBSE Class 10 Geography Chapter 1 NODI নদী (বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ) Questions and Answeres

LRNR provides this material totally free

Chapter-1_  (নদী) বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ

1) আদর্শ নদী কাকে বলে ?

সাধারণ অর্থে যে নদীর সম্পূর্ণ প্রবাহপথ উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন এই তিনটি গতিপথে সুস্পষ্ট ভাবে বিভক্ত তাকে আদর্শ নদী বলে। আবার অন্যভাবে বললে, যে নদীর সম্পূর্ণ গতিপথে ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয় কার্যের সমতা দেখা যায় অর্থাৎ নদী পর্যায়িত ঢাল রূপে প্রবাহিত হয় তাকে আদর্শ নদী বলে। 

উদাহরণ - গঙ্গা নদী আদর্শ নদীর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। 

2) নদী অববাহিকা কাকে বলে ?

একটি প্রধান বা মূল নদীর গতিপথে বহু উপনদী এসে মিলিত হয়। আবার মূল নদী বা উপনদী থেকেও বহু সংখ্যক শাখা নদী নির্গত হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে যায়। অর্থাৎ একটি প্রধান বা মূল নদী তার উপনদী, শাখানদী সহ যে অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রে পতিত হয়, সে সমগ্র অঞ্চলকে উক্ত নদীর অববাহিকা বলে। 

উদাহরণ - দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন অববাহিকা আয়তনে বিশ্বে বৃহত্তম। আবার ভারতের নদী অববাহিকা হল গঙ্গা নদী অববাহিকা। 

3) নদী উপত্যকা কাকে বলে ?

নদীর উৎপত্তিস্থল থেকে মোহনা পর্যন্ত নদী খাতের উভয় পার্শ্বের উচ্চভূমির মধ্যে দীর্ঘ ও সংকীর্ণ নিম্ন ভূমিকে নদী উপত্যকা বলে।  উদাহরণ - গঙ্গা নদীর উপত্যকা। 

4) ধারণ অববাহিকা কাকে বলে ?

যে অঞ্চলের ছোট, বড়ো, মাঝারি প্রভৃতি অসংখ্য জলধারা থেকে নদী জল সংগ্রহ করে তার প্রবাহকে বাড়ায়, সেই অঞ্চলকে ধারণ অববাহিকা বলে। 

উদাহরণ - যে বিস্তীর্ন অঞ্চলের বৃষ্টিপাতের জল দামোদর ও তার বিভিন্ন উপনদীতে এসে পড়ে, সেই সমগ্র অঞ্চলই হল দামোদর ধারণ অববাহিকা। 

5) জলবিভাজিকা কাকে বলে ?

পাশাপাশি অবস্থিত দুই বা ততোধিক নদীর মধ্যবর্তী অববাহিকা যে উঁচু ভূমিভাগ দ্বারা পৃথক হয় তাকে জলবিভাজিকা বলে। 

উদাহরণ - এশিয়া মহাদেশের মধ্যভাগের উচ্চভূমি পৃথিবীর বৃহত্তম জলবিভাজিকা। 

6) নদী দোয়াব কাকে বলে ?

দোয়াব কথার ‘দো’ শব্দের অর্থ হলো দুই এবং আব শব্দের অর্থ হলো জল। দুটি নদীর মধ্যবর্তী স্থানকে দোয়াব বলা হয়। 

উদাহরণ - গঙ্গা ও যমুনা নদীর মধ্যবর্তী স্থানকে গঙ্গা -যমুনা দোয়াব বলা হয়। 

7) নিত্যবহ ও অনিত্যবহ নদী বলতে কী বোঝ ?

নিত্যবহ নদী - যে সকল নদীগুলিতে সারাবছর ধরেই জলপ্রবাহ দেখা যায়, তাদের নিত্যবহ নদী বলে। 

উদাহরণ - ভারতের গঙ্গা নদী, ব্রহ্মপুত্র নদী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য নিত্যবহ নদী। 

অনিত্যবহ নদী - যে সকল নদীগুলিতে সারাবছর ধরে জলপ্রবাহ দেখা যায় না অর্থাৎ, বর্ষাকাল বিদায় নিলে জলের পরিমান ক্রমশ কমতে কমতে গ্রীষ্মকালে একেবারে শুকিয়ে যায়, তাদের অনিত্যবহ নদী বলে। 

উদাহরণ - ভারতের ছোটোনাগপুর মালভুমি থেকে সৃষ্ট সুবর্ণরেখা নদী একটি অনিত্যবহ নদী। 

 

8) নদীর ক্ষয়সীমা বলতে কী বোঝ ?

পৃথিবী ব্যাপি সমুদ্রের জলের ওঠানামা তেমন হয় না। তাই সমুদ্রের জলের উচ্চসীমাকে সমুদ্রতল বা বেশ লেভেল হিসেবে ধরা হয়। সমুদ্রে পতিত নদী সর্বদাই এই সমুদ্রতলের সঙ্গে সমতারেখে তার ক্ষয় কাজ করে। সমুদ্রতলকে তাই নদীর ক্ষয়সীমা হিসেবে ধরা হয়। 

9) কিউসেক ও কিউমেক কী ?

কিউসেক - কোনো নদীতে একটি নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যত ঘনফুট জল প্রবাহিত হয়, তা হল কিউসেক। 

কিউমেক - নদীর একটি নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যত ঘনমিটার জল প্রবাহিত হয়, তা হল কিউমেক। 

10) ক্যাটারাক্ট কাকে বলে ?

প্রবল ও ভয়ংকর ভাবে উত্তাল জলরাশি যখন নীচের দিকে নামে তখন তাকে ক্যাটারাক্ট বলে। 

উদাহরণ - আফ্রিকার জাম্বেসি নদীর ভিক্টরিয়া জলপ্রপাত ক্যাটারাক্ট -এর উদাহরণ। 

11) কাসকেড কাকে বলে ?

জলপ্রপাত একাধিক স্তরে স্তরে নিচে নেমে এলে তাকে কাসকেড বলে। যখন ছোট বা খুব ছোটো ছোটো জলপ্রপাতের অজস্র ধারা একাধিক ধাপে নীচের দিকে নেমে আসে, তখন তাকে কাসকেড বলে। 

উদাহরণ - 

12) বিলম্বিত নদী সংগ্রাম বলতে কী বোঝো ?

মূল নদীর সমান্তরালে নদী বহুদূর অগ্রসর হয়ে অবশেষে উপযুক্ত স্থানে মূলনদীর সাথে মিলিত হয়। এই প্রকার বিশেষ নদী সঙ্গমকে বিলম্বিত নদী সঙ্গম বলে। 

উদাহরণ - মিসিসিপির উপনদী ইয়াজু এইভাবে প্রায় ২৮০ কিলোমিটার পথ মিসিসিপির সমান্তরালে প্রবাহিত হয়ে অবশেষে মিলিত হয়েছে। তাই এইধরনের নদীগুলিকে ইয়াজু নদী বলে। 

16) গিরিখাত ও ক্যানিয়ন -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো। 

গিরিখাত 

ক্যানিয়ন 

i) আদ্র জলবায়ু অঞ্চলে সৃষ্টি হয়। 

i) বৃষ্টিহীন শুষ্ক মরুপ্রায় অঞ্চলে সৃষ্টি হয়। 

ii) নিম্নক্ষয়ের সঙ্গে পার্শ্বক্ষয় দেখা যায়। 

ii) প্রধানত তীব্র নিম্নক্ষয়ের ফলে সৃষ্টি হয়। 

iii) ‘v’ আকৃতির উপত্যকা সৃষ্টি হয়। 

iii) ‘i’ আকৃতির উপত্যকা সৃষ্টি হয়।

iv) অপেক্ষাকৃত কম গভীর ও সংকীর্ণ হয়। 

iv) অপেক্ষাকৃত সুগভীর ও খুবই সংকীর্ণ হয়। 


v) ইয়াং -সিকিয়াং নদীর ইচ্যাং গিরিখাত। 

v) কলরাডো নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। 

17) ষষ্ঠঘাটের সূত্র কী ?

ষষ্ঠঘাটের সূত্র : নদী বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখন্ড, নুড়ি, কাঁকর, বালি, পলি, কাদা ইত্যাদি বহন করে থাকে। নদীর এই বহন ক্ষমতা তার জলের পরিমান ও স্রোতের বেগের উপর নির্ভর করে। যদি কোনো একটি নদীর গতিবেগ দ্বিগুন বৃদ্ধি পায় , তাহলে নদীর বহন করার ক্ষমতা 64 গুন বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ নদীর বহন ক্ষমতা তার গতিবেগে ষষ্ঠ ঘাতে বৃদ্ধি পায়।  একে ষষ্ঠ ঘাতের সূত্র বলে। 1842 খ্রিষ্টাব্দে W. Hopkins এই সূত্র আবিষ্কার করেন। 

CH-1_নদীর কাজ 

2 অথবা 3 নম্বরের প্রশ্নের উত্তর :

১. জলবিভাজিকা কাকে বলে ?

উঃ - পাশাপাশি অবস্থিত দুই বা ততোধিক নদীর মধ্যবর্তী অববাহিকা যে উঁচু ভূমির দ্বারা পৃথক হয়, তাকে জলবিভাজিকা বলে। 

সাধারণত পাহাড় -পর্বতগুলি প্রধান জলবিভাজিকা রূপে অবস্থান করে। 

উদাহরণ - 1. সাতপুরা পর্বত নর্মদা ও তাপ্তি নদীর অববাহিকার জলবিভাজিকারূপে অবস্থান। করেছে। 

2. এশিয়া মহাদেশের মহাদেশের মধ্যভাগের উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল পৃথিবীর বৃহত্তম জলবিভাজিকা। 

২. অন্তর্জাত শক্তি কাকে বলে ?

উঃ - পৃথিবীর অভ্যন্তরে সৃষ্ট সংকোচন, প্রসারণ, উথ্থান, অবনমন, বিচ্ছেদ, বিকৃতি নির্গমন প্রভৃতি যেসব প্রক্রিয়ার জন্য ভূপৃষ্ঠের ভূমিরূপ প্রভাবিত বা পরিবর্তিত হয়, সেগুলিকে ভূ -অভ্যন্তরীন বা অন্তর্জাত শক্তি বলে। 

৩. বহির্জাত শক্তি কাকে বলে ?

উঃ - যেসব প্রাকৃতিক শক্তি প্রতিনিয়ত ভূপৃষ্ঠে এবং ভূপৃষ্ঠের সামান্য নীচে অর্থাৎ উপপৃষ্ঠীয় অংশে ক্রিয়াশীল থাকে তাদের বহির্জাত শক্তি বলে। 

যেমন - নদী, হিমবাহ, বায়ু, সমুদ্রতরঙ্গ প্রভৃতি। 

৪. বহির্জাত প্রক্রিয়া কাকে বলে ?

উঃ - যে প্রক্রিয়ায় নদী, হিমবাহ, বায়ু, সমুদ্রতরঙ্গ ইত্যাদি বহিঃস্থ বা বাইরের প্রাকৃতিক শক্তিসমূহ ভূপৃষ্ঠের ওপর ক্রিয়াশীল হয়ে ভূমিরূপের পরিবর্তন ও বিবর্তন,ঘটায়, তাকে বহির্জাত বা বহিঃস্থ প্রক্রিয়া বলে। 

৫. নদী অববাহিকা কাকে বলে ?

উঃ - যে অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে প্রধান নদী ও তার বিভিন্ন উপনদী ও শাখানদী প্রবাহিত হয়, সেই অঞ্চলকে বলা হয় প্রধান নদীর অববাহিকা। 

যেমন - গঙ্গা নদী অববাহিকা। 

৬. ধারণ অববাহিকা কাকে বলে ?

উঃ - কোনো অঞ্চলের ছোটো, বড়ো, মাঝারি প্রভৃতি অসংখ্য জলধারা থেকে নদী জল সংগ্রহ করে তার প্রবাহকে বাড়ায়, সেই অঞ্চলটিকে ধারণ অববাহিকা বলে। 

উদাহরণ - যে বিস্তীর্ন অঞ্চলের ছোটো-বড়ো জলধারার জল এবং বৃষ্টিপাতের জল গঙ্গা ও তার উপনদীগুলিতে এসে পড়ে, সেই সমগ্র অঞ্চলটিই হল গঙ্গা নদীর ধারণ অববাহিকা। 

৭. ষষ্ঠঘাতের সূত্র কী ?

উঃ - কোনো একটি নদী নির্দিষ্ট গতিবেগে, নির্দিষ্ট পরিমান বস্তুভার বহন করতে পারে। যদি নদীটির গতিবেগ দ্বিগুণ হয়ে যায় তাহলে তার পরিবহনক্ষমতা 26= 64 গুণ বৃদ্ধি পায়। 

নদীর গতিবেগের সঙ্গে নদীর পরিবহনক্ষমতার এই অনুপাতকে বলা হয় ষষ্ঠঘাতের সূত্র। 

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনো নদী ঘন্টায় ২ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হলে তা যে পরিমান বস্তুভার পরিবহনে সক্ষম, তার গতিবেগ হঠাৎ ঘন্টায় 8 কিলোমিটার হলে সেই নদী সমপরিমাণ জলে  64 গুণ বেশি বস্তুভার গ্রহণ করতে পারবে। 

৮. কিউসেক ও কিউমেক কাকে বলে ?

উঃ - কিউসেক - নদীর কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে  প্রতি সেকেন্ডে যত ঘনফুট জল প্রবাহিত হয়, নদীপ্রবাহ পরিমানের এই একককে বলে কিউসেক। কিউসেক হল কিউবিক ফুট /সেকেন্ড। 

কিউমেক - নদীর কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যত ঘনমিটার জল প্রবাহিত হয় তাকে বলে কিউমেক।  কিউমেক হল কিউবিক মিটার / সেকেন্ড। 

৯. গিরিখাত ও ক্যানিয়নের মধ্যে পার্থক্য লেখো। 

গিরিখাত - গভীর ও সংকীর্ণ নদী উপত্যকাকে বলে গিরিখাত। 

ক্যানিয়ন - অতি গভীর ও অতি সংকীর্ণ নদী উপত্যকাকে বলে ক্যানিয়ন। 

গিরিখাত - আদ্র অঞ্চলে গিরিখাত সৃষ্টি হয়। 

ক্যানিয়ন - শুষ্ক অঞ্চলের গিরিখাতকে বলে ক্যানিয়ন। 

গিরিখাত - গিরিখাতে পার্শ্বক্ষয় বেশি ও নিমনখোয় কম হয়। 

ক্যানিয়ন - ক্যানিয়নে নিম্নক্ষয় বেশি ও পার্শ্বক্ষয় কম হয়। 

গিরিখাত - গিরিখাত ইংরাজি অক্ষর ‘V’ আকৃতি। 

ক্যানিয়ন - ক্যানিয়ন ইংরাজি অক্ষর ‘I’ আকৃতি। 

গিরিখাত - পেরুর কঙ্কা নদীর গিরিখাত পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাত। 

ক্যানিয়ন - কলোরাডো নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন পৃথিবীর বৃহত্তম ক্যানিয়ন। 

১০. খাঁড়ি কী ?

উঃ - সমুদ্রের নিকট নদীর মোহনায় জোয়ার-ভাটা হয়। জোয়ারের জল নদীখাতে ঢুকে নদী উপত্যকাকে আরও চওড়া করে দেয়, একে খাঁড়ি বলে। 

উদাহরণ - ১. সুন্দরবনের দূর্গাদুয়ানি খাঁড়ি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। 

২. রাশিয়ার উত্তরে ওব নদীর মোহনায় অবস্থিত খাঁড়িটি পৃথিবীর দীর্ঘতম খাঁড়ি। 

১০. উচ্চগতিতে নদীর পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা নিম্নক্ষয় অধিক হয় কেন ?

উঃ - উচ্চগতিতে  নদীর পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা নিম্নক্ষয় অধিক হয় কারণ -

১. উচ্চগতিতে বা পার্বত্যপ্রবাহে ভূমির ঢাল খুব বেশি ফলে নদী প্রবল বেগে প্রবাহিত হয়। 

২. এই অংশে নদীতে জলের পরিমান কম থাকে। তবে জলের সঙ্গে প্রচুর পরিমানে প্রস্তরখন্ড থাকে। তাই এই অংশে প্রবল স্রোত এবং বাহিত প্রস্তরখন্ডের দ্বারা নদী অবঘর্ষ পদ্ধতিতে ক্ষয় করে। এছাড়া এখানে ঘর্ষণ এবং জলপ্রবাহের ক্ষয়ের ফলে নদী উপত্যকা গভীর হয়। 

১১. নদীর মোহনায় বদ্বীপ গড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ লেখো। 

উঃ - নদীর মোহনায় বদ্বীপ গড়ে ওঠার কারনগুলি হল -

১. সমভূমি অঞ্চলে নদীর গতিবেগ কম থাকে, যা বদ্বীপ গড়ে ওঠার অনুকূল। 

২. মোহনা অংশে অর্থাৎ নদী যেখানে সমুদ্রের সঙ্গে মেশে সেখানে নদীর ঢাল কম থাকে। এর ফলে নদী বেশি পরিমানে সঞ্চয় কার্য করতে পারে। 

৩. নদীর মোহনায় লবনাক্ত জলের ঘনত্ব বেশি বলে নদীবাহিত পলি, বালি, কাদা দ্রুত থিতিয়ে পড়ে, এর ফলে বদ্বীপ গঠিত হয়। 

৪. মোহনার কাছে সমুদ্র অগভীর হলে নদীবাহিত পদার্থের সঞ্চয়ে নিমজ্জিত ভুখন্ড দ্রুত জলের ওপরে উঠে এসে বদ্বীপ সৃষ্টি করে। 

১৩. দোয়াব কী ?

উঃ - দোয়াব শব্দটির ‘দোয়’ শব্দটির অর্থ দুই এবং ‘আব’ কথার অর্থ হল জল। দুটি নদীর মধ্যবর্তী স্থানকে বলে দোয়াব। এই অঞ্চলের মাটি ঊর্ধ্ব পলি সমৃদ্ধ হওয়ায় কৃষিকাজের পক্ষে খুব উপযুক্ত। 

উদাহরণ - গঙ্গা ও যমুনা নদীর মধ্যবর্তী স্থান গঙ্গা-যমুনা দোয়াব নামে পরিচিত। 

১৪. রাপিডস কী ?

উঃ -সংজ্ঞা - আদ্র জলবায়ুযুক্ত অঞ্চলে নদীর গতিপথে কঠিন ও কোমল শিলা অবস্থান করলে অসম ক্ষয়কার্যের ফলে জলধারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাপে নীচের দিকে নামে, একে রাপিড বলে। 

বৈশিষ্ট্য : ১. রাপিড সর্বাপেক্ষা ধীরগতিসম্পন্ন ,

২. এককথায় ছোটো ছোটো ধাপযুক্ত জলপ্রপাতকে রাপিডস বলে। 

উদাহরণ : জাইরে নদীর লিভিংস্টোন জলপ্রপাত। 

১৫. ক্যাসকেড ও ক্যাটারাক্ট কী ?

উঃ - ক্যাসকেড : অনেকসময় নদী ক্ষুদ্র জলপ্রপাত সৃষ্টি করে প্রবাহিত হয়, একে ক্যাসকেড বলে। 

উদাহরণ : উত্তর আয়ারল্যান্ডের টিয়ারস অব দ্যা গ্লেন জলপ্রপাতটি ক্যাসকেডের উদাহরণ। 

ক্যাটারাক্ট : প্রকান্ড জলধারা পরপর কয়েকটি জলধারার মধ্য দিয়ে নেমে এলে তাকে ক্যাটারাক্ট বলে। 

উদাহরণ : খার্তুম থেকে আসোয়ান পর্যন্ত নীলনদে 6টি ক্যাটারাক্ট দেখা যায়। 

১৬. মন্থকূপ ও প্রপাতকূপের পার্থক্য লেখো। 

 মন্থকূপ : সংজ্ঞা - নদীগর্ভে প্রবাহিত জলস্রোতে বাহিত শিলাখন্ডগুলো ঘুরতে ঘুরতে অগ্রসর হবার সময় অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় নদী তলদেশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোলাকার উলম্ব গর্তের সৃষ্টি করে, একে মন্থকূপ বলে। 

প্রপাতকূপ : জলপ্রপাতের পাদদেশে জলস্রোতের সঙ্গে প্রবাহিত শিলাখণ্ডের আঘাতে প্রাপ্ত গোলাকার গহ্বরের সৃষ্টি হয়, একে প্রপাতকূপ বলে। 

 মন্থকূপ - ইহা নদীগর্ভে বাহিত শিলাখণ্ডের ওপর নির্ভর করে গড়ে। 

প্রপাতকূপ- জলপ্রপাতের উচ্চতা, আয়তন ও প্রস্তরখন্ডের উপর নির্ভর করে। 

 মন্থকূপ - মন্থকূপ সাধারণত বুদবুদ ক্ষয় ও অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি। 

 প্রপাতকূপ- ইহা জলপ্রপাতের ক্ষয় সৃষ্টি। 

 মন্থকূপ - খরকাই নদীর তলদেশে মন্থকূপ দেখা যায়। 

প্রপাতকূপ- হুড্রু জলপ্রপাতের নীচে প্রপাতকূপ দেখা যায়। 

১৭. বদ্বীপের শ্রেণীবিভাগ লেখো। 

উঃ - ১. আকৃতি অনুসারে বদ্বীপের শ্রেণিবিভাগ :

i. ধনুক আকৃতির বদ্বীপ : উদাহরণ - গঙ্গা, নীল, পো, হোয়াংহো প্রভৃতি। 

ii. পাখির পা সদৃশ বদ্বীপ : উদাহরণ - মিসিসিপি নদীর বদ্বীপ। 

iii. তীক্ষ্ণগ্র বা কাসপেট বদ্বীপ : উদাহরণ - ইতালির তাইবার, স্পেনের এব্রো নদীর বদ্বীপ। 

iii. খাড়ীয় বদ্বীপ : উদাহরণ - রাইন নদীর বদ্বীপ। 

২. গঠনের আকৃতি অনুযায়ী বদ্বীপের শ্রেণিবিভাগ :

১. i. গঠনমূলক বদ্বীপ : উদাহরণ - গঙ্গা ও ব্ৰহ্মপুত্রের বদ্বীপ। 

২. ধ্বংসাত্মক বদ্বীপ : উদাহরণ : মিসিসিপির বদ্বীপ। 

i. নাইজার, মেকং বদ্বীপ। 

৩. অবস্থান অনুসারে বদ্বীপের শ্রেণিবিভাগ : 

i. ত্রিকোণাকার বদ্বীপ : দামোদর যেখানে হুগলি নদীতে মিশেছে সেখানে এই বদ্বীপ দেখা যায়। 

ii. হ্রদ বদ্বীপ - ভলগা নদী কাস্পিয়ান সাগরে মিলিত হয়ে বদ্বীপ গঠন করেছে। 

iii. সমুদ্র বদ্বীপ : সুন্দরবন এরূপ বদ্বীপের উদাহরণ। 

১৮. বিলম্বিত নদীসংগম কী ?

উঃ -বিলম্বিত নদীসংগম : মন্থর গতিসম্পন্ন কোনো নদীর স্বাভাবিক বাঁধ বন্যা প্রতিরোধের জন্য কৃত্রিম উপায়ে যদি আরো উঁচু করা হয়, তাহলে অনেক সময় উপনদী মূল নদীর সঙ্গে যথাস্থানে মিলিত হতে না পেরে প্লাবনভূমির ওপর দিয়ে মূল নদীর সমান্তরালে প্রবাহিত হতে বাধ্য হয় এবং পরে স্বাভাবিক বাঁধ ভেদ করে মূল নদীর সঙ্গে মিলিত হয়। এরূপ নদী সঙ্গমকে বিলম্বিত নদীসঙ্গম বলে। 

উদাহরণ - মিসিসিপি নদীর উপনদী য়াজু নদীর নাম অনুযায়ী, এরূপ নদীকে য়াজু-জাতীয় নদী বলা হয়। 

বিহারের পাটনা ও মুঙ্গেরের মধ্যে এরূপ বহু য়াজু জাতীয় উপনদীকে গঙ্গার উভয়তীরে মিলিত হতে দেখা যায়। 

১. জলপ্রপাতের শ্রেণিবিভাগ লেখো ?

উঃ - প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী জলপ্রপাত তিন প্রকারের। যথা - 

১. প্রপাতবলী বা শ্রেণিবদ্ধ জলপ্রপাত 

২. নির্ঝর বা কাসকেড 

৩. খরস্রোত বা রাপিড 

১. প্রপাতবলী বা শ্রেণিবদ্ধ জলপ্রপাত : প্রকান্ড জলধারা বা নদী পর পর কয়েকটি জলপ্রপাত সৃষ্টি করে নিচের দিকে নেমে এলে তাদের বলা হয় প্রপাতবলী বা শ্রেণিবদ্ধ জলপ্রপাত। ইংরেজিতে একে ক্যাটারাক্ট নামে পরিচিত। 

উদাহরণ - খার্তুম থেকে আসোয়ান পর্যন্ত নীলনদের গতিপথে ৬ টি বিখ্যাত ক্যাটারাক্ট লক্ষ্য করা যায় ,

ক্যাটারাক্টগুলো দিয়ে প্রচুর পরিমানে জল প্রবাহিত হয়ে থাকে। 

২. কাসকেড - অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র জলপ্রপাত নির্ঝর বা কাসকেড বলে। কোনো কোনো সময়ে নদীকে একাধিক ক্ষুদ্র জলপ্রপাত সৃষ্টি করে প্রবাহিত হতে দেখা যায়। এদের বলা হয় কাসকেড। 

উদাহরণ -উত্তর আয়ারল্যান্ডের টিয়ারস অফ দ্যা গ্লেন এই প্রকার জলপ্রপাতের উদাহরণ। 

৩. খরস্রোত বা রাপিড - খরস্রোত নদীর স্বাভাবিক স্রোতের চেয়ে খর অর্থাৎ তীব্র কিন্তু কাসকেড অপেক্ষা মৃদু।নদীপ্রবাহ একলাফে না নেমে সিঁড়ির মতো ছোটো ছোট ধাপে নিচে নামলে তাদের বলা হয় খরস্রোত বা রাপিড। 

উদাহরণ -আফ্রিকার জায়ার নদী একসিক্রমে বত্রিশটি খরস্রোত সৃষ্টি করে। ২৭০ মিটার নীচে নেমে এসেছে। এরা একত্রে লিভিংস্টোন জলপ্রপাত নামে পরিচিত। 

২. আদর্শ নদী কাকে বলে ?

উঃ - যে সমস্ত নদীর তিনটি গতি অর্থাৎ উচ্চ, মধ্য ও নিম্নগতি সুস্পষ্টভাবে লক্ষণীয়, পর্যায়িত ঢাল লক্ষণীয়, উচ্চগতিতে ক্ষয়, মধ্যগতিতে বহন ও নিম্নগতিতে সঞ্চয় দেখা যায়, তাকে আদর্শ নদী  বলে। 

উদাহরণ - গঙ্গার তিনটি গতি ও প্রবাহ এবং ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয় প্রক্রিয়া সুস্পষ্টভাবে দেখা যায় বলে একে আদর্শ নদী বলে। 

৩. নদী উপত্যকা কাকে বলে ?

উঃ - উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত নদীর গতিপথে যে অংশের মধ্য দিয়ে জলধারা প্রবাহিত হয়, তাকে নদী উপত্যকা বলে। 

৪. নদী গ্রাস কাকে বলে ?

উঃ - সাধারণত দুটি অনুগামী নদী পাশাপাশি প্রবাহিত হলে তাদের মধ্যে যেটি অপেক্ষাকৃত বেশি শক্তিশালী সেটি মস্তকের (বা উৎসের) দিকে ক্ষয়কার্য চালিয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল নদী উপত্যকাটিতে অনুপ্রবেশ ( বা অধিগ্রহণ ) করে, তখন শক্তিশালী নদী উপত্যকাটির ভেতর দিয়ে সমস্ত জল বয়ে যায়। আর দুর্বল নদী উপত্যকাটি ক্রমশ অবলুপ্ত হতে থাকে। এরূপ অবস্থার সৃষ্টি হয় নদীগ্রাস। 

উদাহরণ - ভাগীরথী ও তার শাখানদীগুলোতে এরূপ নদীগ্রাস দেখা যায়। 

৫. নদীর পুনর্যৌবন লাভ বলতে কী বোঝো ?

উঃ - নদীর নিম্নক্ষয়ের ক্ষমতা পুনরুজ্জীবিত হওয়াকে বলা হয় নদীর পুনর্যৌবন লাভ। 

 নদীর পুনর্যৌবন লাভ তিন রকমের - যথা - ১. স্থিতিশীল পুনর্যৌবন লাভ 

২. গতিশীল বা গতিময় পুনর্যৌবন লাভ 

৩. সমুদ্র গর্ভের আয়তন বৃদ্ধির ফলে পুনর্যৌবন লাভ। 

৬. নিক পয়েন্ট কী ?

উঃ - নদীর মধ্য প্রবাহপথে যদি ঢালের তারতম্য হয় অথবা স্থলভাগ উপরে উঠে যায় বা সমুদ্রে সরে যায় তখন নদী নতুন করে মস্তক ক্ষয় দ্বারা খাত কেটে এক নতুন ঢালের সৃষ্টি করে পুরাতন ঢালের সাথে মিলিত হয়ে একটি খাঁজ সৃষ্টি করে। এই খাঁজকেই নিক পয়েন্ট বলে। 

বৈশিষ্ট্য : i. নদীর গতিপথে কঠিন শিলা বা চ্যুতি থাকলে নিক পয়েন্টে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়। 

ii. নিক পয়েন্ট নতুন ঢাল অপেক্ষা উঁচু হয়। 

৭. অবরোহন ও আরোহনের পার্থক্য লেখো। 

বিষয় -প্রক্রিয়া -

অবরোহন - উচ্চভূমির ক্ষয়সাধন হল অবরোহন। 

আরোহন- ক্ষয়জাত পদার্থের নিম্নভূমিতে সঞ্চয় হল আরোহন। 

বিষয় -অন্যনাম -

অবরোহন - এর অন্য নাম নগ্নীভবন। 

আরোহন-এর অন্য নাম স্তুপীকরন 

বিষয় -উচ্চতা 

অবরোহন - অবরোহণের মাধ্যমে ভূমির উচ্চতা কমে 

আরোহন- আরোহণের মাধ্যমে ভূমির উচ্চতা বাড়ে। 

বিষয় -ঢাল 

অবরোহন - এর মাধ্যমে ভূমির ঢাল খাড়াই হয় 

আরোহন-এর মাধ্যমে ভূমির ঢাল মৃদু হয় 

বিষয় -সৃষ্ট ভূমিরূপ 

অবরোহন - অবরোহনের ফলে গিরিখাত, জিউগেন  প্রভৃতি গঠিত হয়। 

আরোহন-আরোহনের ফলে বদ্বীপ বালিয়াড়ি প্রভৃতি তৈরি হয়। 

১. বহিঃবিধৌত সমভূমি ও প্লাবন সমভূমির পার্থক্য লেখো। 

বিষয় -সৃষ্টি 

বহিঃবিধৌত সমভূমি -হিমবাহবাহিত প্রস্তরখন্ড, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি পর্বতের পাদদেশে বিরাট এলাকাজুড়ে সঞ্চিত হয়ে বহিঃবিধৌত সমভূমি সৃষ্টি করে। 

প্লাবন সমভূমি - বন্যা বা প্লাবনের সময় নদীবাহিত পলি, বালি, কাদা প্রভৃতি নদীর দুই তীরে জমা হয়ে প্লাবন সমভূমি সৃষ্টি করে। 

বিষয় -অবস্থান 

বহিঃবিধৌত সমভূমি - হিমবাহের শেষপ্রান্তে হিমরেখার নীচে বা পর্বতের পাদদেশ অঞ্চলে দেখা যায়। 

প্লাবন সমভূমি -নদীর গতিপথের সমভূমি অংশে দেখা যায়। 

বিষয় - গঠনকারী শক্তি 

বহিঃবিধৌত সমভূমি - হিমবাহ এবং জলধারার মিলিত সঞ্চয়কার্যের মাধ্যম গঠিত হয় 

প্লাবন সমভূমি - নদীর সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত হয়। 

বিষয় - উর্বরতা 

বহিঃবিধৌত সমভূমি - এই সমভূমির উর্বরতা কম 

প্লাবন সমভূমি - এই সমভূমির উর্বরতা বেশি। 

নদীর কার্য

1 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর 

1.অবরোহণ ও আরোহন কাকে বলে ?

উঃ -অবরোহণ :বহির্জাত শক্তির কাজ দ্বারা ভূপৃষ্ঠের উঁচু ভূমিভাগ ক্ষয় পেয়ে নীচু হওয়াকে অবরোহণ বলে। 

আরোহণ :প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা সৃষ্ট ক্ষয়জাত পদার্থ ভূপৃষ্ঠের নীচু স্থানে সঞ্চিত হয়ে ভূভাগের উঁচু হওয়াকে আরোহণ বলে। 

2.পর্যায়ন কাকে বলে ?

উঃ -ক্ষয়সীমার সাপেক্ষে অবরোহন ও আরোহন দ্বারা ভূমিভাগের প্রায় সমতলীকরণকে পর্যায়ন বলে। 

3.ভারতের বৃহত্তম নদী অববাহিকার নামে কী ?

উঃ -ভারতের বৃহত্তম নদী অববাহিকা হল গঙ্গা নদীর অববাহিকা। 

4.পৃথিবীর বৃহত্তম নদী অববাহিকার নাম কী ?

উঃ -পৃথিবীর বৃহত্তম নদী অববাহিকার নাম হল আমাজন অববাহিকা।

 

5.পৃথিবীর বৃহত্তম জলবিভাজিকা কোনটি ?

উঃ -পৃথিবীর বৃহত্তম জলবিভাজিকাটি হল এশিয়া মহাদেশের মধ্যভাগের উচচ পার্বত্য অঞ্চল। 

6.পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাত কোনটি ?

উঃ -পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাত হল কল্কা নদীর কালি গণ্ডক 

7.পৃথিবীর দীর্ঘতম ক্যানিয়ন কোনটি ?

উঃ -পৃথিবীর দীর্ঘতম ক্যানিয়ন হল কলোরাডো নদী গ্রান্ড ক্যানিয়ন। 

8.কোন জলপ্রপাতকে ভারতের নায়াগ্রা বলা হয় ?

উঃ -চিত্রকূট জলপ্রপাতকে ভারতের নায়াগ্রা বলা হয়।

 

9.ভারতের বৃহত্তম জলপ্রপাত কোনটি ?

উঃ -ভারতের বৃহত্তম জলপ্রপাত হল সরাবতী নদীর যোগ জলপ্রপাত। 

10.পৃথিবীর উচ্চতম জলপ্রপাত কোনটি ?

উঃ -পৃথিবীর উচ্চতম জলপ্রপাত হল ভেনেজুয়েলার ‘সাল্টো অ্য়াঞ্জেল ‘.

11.পাখির পায়ের মতো বদ্বীপ সৃষ্ট হয় কোন নদীতে ?

উঃ -মিসিসিপি নদীর বদ্বীপে পাখির পায়ের মতো বদ্বীপ সৃষ্ট হয়েছে। 

12.পৃথিবীতে মানুষ অধ্যুষিত প্রথম দ্বীপ যেটি সম্পূর্ণভাবে ডুবে যায়, তার নামে কী ?

উঃ -পৃথিবীতে মানুষ অধ্যুষিত প্রথম দ্বীপ যেটি সম্পূর্ণভাবে ডুবে যায়,সেটি হল লোহাচর দ্বীপ। 

13.ক্ষয়ীভবন কাকে বলে ?

উঃ -আবহবিকারজাত বিচূর্ণীভূত শিলার স্থানান্তরকে ক্ষয়ীভবন বলে। 

14.পুঞ্জিত ক্ষয় কাকে বলে ?

উঃ -ভূমির ঢাল বরাবর আলগা মাটি ও শিলাখণ্ডের স্খলনকে পুঞ্জিত ক্ষয় বলে। 

15.নগ্নীভবন কাকে বলে ?

উঃ -ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তর উন্মুক্ত হওয়াকে নগ্নীভবন বলে।

 

16.পটহোল কলোনি কাকে বলে ?

উঃ -অসংখ্য মন্থকূপ বা পটহোল একসঙ্গে গড়ে উঠলে তাকে পটহোল কলোনি বলে। 

17.কোন নদীর নাম অনুসারে মিয়েন্ডার নাম হয়েছে ?

উঃ -মিয়েন্ডারেস নদীর নাম অনুসারে মিয়েন্ডার নাম হয়েছে।

18.পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ কোনটি ?

উঃ -পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ হল গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের বদ্বীপ।

  

19.পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য কোথায় দেখা যায় ?

উঃ -পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবনে দেখা যায়। 

20.কত সালে ইননেসকো সুন্দরবনকে “World Heritage”-এর আখ্যা দেন ?

উঃ -1987 সালে ইননেসকো সুন্দরবনকে “World Heritage”-এর আখ্যা দেন। 

5 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর :-

1. নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলির বর্ণনা দাও। 

উঃ -উচ্চগতিতে নদীর গতিপথের ঢাল খুব বেশি থাকে, ফলে নদী প্রবলবেগে প্রবাহিত হয়। নদীর এই প্রবাল স্রোতের জন্য নদী উপত্যকা ব্যাপক ক্ষয় হয়। নদী উপত্যকা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপ সৃষ্টি করে। নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত প্রধান প্রধান ভূমিরূপগুলির সম্বন্ধে নির্ণেয় আলোচনা করা হল -

(i) “I” আকৃতির উপত্যকা : পার্বত্য অঞ্চলের প্রবল জলস্রোত ও বাহিত শিলাখন্ডের সঙ্গে নদীখাতের ঘর্ষণের ফলে পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা নিম্নক্ষয় অধিক হয় এর ফলে নদী উপত্যকা সংকীর্ণ ও গভীর হয়ে ইংরাজি “I” আকৃতির আকার ধারণ করে। 

(ii) “V” আকৃতির উপত্যকা :পার্বত্য অঞ্চলের প্রবল জলস্রোত ও শিলাখণ্ডের ঘর্ষণের সঙ্গে ভূমিক্ষয় ও ধষের ফলে নিম্নক্ষয়ের সঙ্গে সঙ্গে সামান্য পার্শ্বক্ষয়-ও হয়। এর ফলে নদী উপত্যকা যেমন গভীর হয় তেমনি নদীর পার কিছুটা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। ফলে নদী উপত্যকা অনেকটা ইংরাজি  “V” আকৃতির আকার ধারণ করে। 

(iii)গিরিখাত ও ক্যানিয়ন :পার্বত্য অঞ্চলে ব্যাপক নিম্নক্ষয়ের ফলে যে সংকীর্ণ ও গভীর নদী উপত্যকা সৃষ্টি হয়, তাকে গিরিখাত বলে। 

বৈশিষ্ট্য :-(i)এটি সাধারণত “V” আকৃতি বিশিষ্ট হয়। 

(ii)নিম্ন ক্ষয়ের সাথে অল্প পরিমান পার্শ্বক্ষয় -ও হয়। 

(iii)ক্ষরস্রোতা নদী ও অধিক বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে গিরিখাত সৃষ্টি হয়। 

উদাহরণ :-নেপালের কালিগণ্ডক গিরিখাত পৃথিবীর বৃহত্তম গিরিখাত। 

শুষ্ক অঞ্চলের গিরিখাতকে ক্যানিয়ন বলা হয়। 

বৈশিষ্ট্য :-(i)এটি সাধারণত “I” আকৃতি বিশিষ্ট হয়। 

(ii)প্রধানত নিম্নক্ষয়ের মাধ্যমে এটি সৃষ্টি হয়। 

(iii)চুনাপাথর যুক্ত শুষ্ক পরিবেশ ক্যানিয়ন গঠনের সহায়ক। 

উদাহরণ :-আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার কলোরাডো নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন পৃথিবীর বৃহত্তম ক্যানিয়ন। 

(iv) জলপ্রপাত :নদীর প্রবাহপথে ঢালের হঠাৎ পরিবর্তনের জন্য জলস্রোত খাঁড়া ঢাল বেয়ে ওপর থেকে নীচে প্রবল বেগে পড়ে, একে জলপ্রপাত বলে। 

সৃষ্টির কারন :(i)নদীর প্রবাহপথে পরপর কঠিন ও নরম শিলা অনুভূমিকভাবে অবস্থান করলে কঠিন শিলার নীচে নরম শিলা তাড়াতাড়ি ক্ষয় পেয়ে খাঁড়া ঢাল তৈরি করে ও জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়। 

(ii)নদীর আড়াআড়িভাবে চ্যুতি থাকলে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়। যেমন -জাম্বেসি নদীর ওপর ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত। 

(iii)মালভূমি আড়াআড়িভাবে সমভূমির সাথে মিশলে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়। যেমন -কর্ণাটকের সরাবতী নদীর উপর যোগ জলপ্রপাত। 

(iv)হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ঝুলন্ত উপত্যকার ওপর থেকে বরফগলা জল নীচে পড়ে জলপ্রপাত এর সৃষ্টি করে। 

(v)নদীর পুরাতন ঢাল এবং নতুন ঢালের মিলনবিন্দুকে নিকবিন্দু বলে। ঢালের বিচ্যুতির জন্য নিক বিন্দুতে জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়। যেমন -দশম জলপ্রপাত এবং ভ্যানেজুয়েলার অ্য়াঞ্জেল জলপ্রপাত প্রভৃতি। 

(v)খরস্রোত :পার্বত্য অঞ্চলে কোমল ও কঠিন শিলাস্তর যদি পাশাপাশি উলম্বভাবে অবস্থান করে, তাহলে নরম শিলা দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ধাপ যুক্ত প্রবল গতিসম্পন্ন জলস্রোতের সৃষ্টি করে,একে খরস্রোত বলে। 

উদাহরণ :খারতুম থেকে আসোয়ান পর্যন্ত নীলনদের গতিপথে 6টি বিখ্যাত খরস্রোত লক্ষ করা যায়। 

(vi)প্রপাতকূপ বা প্লাঞ্জপুল :জলপ্রপাতের জল যখন প্রবল বেগে নীচে পড়ে, সেখানে বিশাল আকার গর্তের সৃষ্টি হয়, একে প্রোপাতকূপ বলে। 

ওপর থেকে পরা জলের চাপ ও জলের সাথে আসা নুড়ি-পাথরের অবঘর্ষ ক্ষয়ের ফলে প্রপাতকূপ সৃষ্টি হয়। 

উদাহরণ :চেরাপুঞ্জির নিকট নোহোকালীকায় জলপ্রপাতের নীচে এরকম প্লাঞ্জপুল দেখা যায়। 

(vii)মন্থকূপ বা পটহোল :নদীর গতিপথে নরমশিলা অবস্থান করলে অবঘর্ষ পদ্ধতিতে শিলাখণ্ডের আঘাতে নদীগর্ভে গর্তের সৃষ্টি হয়, পরবর্তী সময়ে ওই গর্তের মধ্যে জলস্রোতের সঙ্গে পাক খাওয়া নুড়ি বা পাথরের বিরামহীন আঘাতে তলদেশে ছোট বড়ো গোলাকার গর্তের সৃষ্টি হয়, একে মন্থকূপ বলে। 

অসংখ্য মন্থকূপ বা পটহোল একসঙ্গে গড়ে উঠলে তাকে পটহোল কলোনি বলে। 

উদাহরণ :ঘাটশিলার কাছে সুবর্ণরেখা নদীতে অনেক মন্থকূপ দেখা যায়। 

(viii)কর্তিত শৈলশিরা :পার্বত্য অঞ্চলে নদীর গতিপথের ঢাল হঠাৎ বৃদ্ধি পেলে তীব্র জলস্রোতের প্রভাবে শৈলশিরা ব্যাপকভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং নদী সোজাপথে বয়ে চলে, একে কর্তিত শৈলশিরা বলে। 

উদাহরণ :তিস্তা, তোর্সা, মহানন্দা এইভাবে শৈলশিরা কেটে প্রবাহিত হয়েছে। 

(x)আবদ্ধ শৈলশিরা :পার্বত্য অঞ্চলে নদীর গতিপথে শৈলশিরা বা পাহাড় থাকলে তা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য নদী এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়। এইরূপ অবস্থায় দূর থেকে দেখলে শৈলশিরাগুলিকে আবদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়। এবং নদীর গতিপথ আড়াল হয়ে যায়, এইরূপ অবস্থাকে আবদ্ধ শৈলশিরা বলে। 

উদাহরণ :তিস্তা, তোর্সা, মহানন্দা নদীর গতিপথে এরূপ আবদ্ধ শৈলশিরা দেখা যায়। 

2.নদীর সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলির বর্ণনা দাও। (চিত্রসহ )

উঃ -মধ্য ও নিম্ন গতিতে নদীর গতিবেগ হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। ফলে নদী এই অঞ্চলে ক্ষয়কার্যের তুলনায় সঞ্চয়কার্য বেশি করতে থাকে। নদীর এই সঞ্চয়কার্যের ফলে বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপ গড়ে ওঠে। নদীর সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল। 

(i)পলল শঙ্কু ও পলল ব্যাজনী :মধ্য গতির শুরুতে নদী যখন পার্বত্য প্রবাহ ছেড়ে সমভূমিতে প্রবেশ করে, তখন নদী উপত্যকার ঢাল হঠাৎ কমে যাওয়ায় নদীবাহিত পলিরাশি, নুড়ি পর্বতের পাদদেশে শঙ্কু বা ত্রিভুজ আকারে সঞ্চিত হয়ে পলল শঙ্কু গঠন করে। 

পর্বতের পাদদেশে ভূমির ঢালের হঠাৎ পরিবর্তনের ফলে নদীর বহন ক্ষমতা কমে যায়। এবং সমস্ত ক্ষয়জাত পদার্থ পর্বতের পাদদেশে সঞ্চিত হয়ে এই প্রকার ভূমিরূপ গঠিত হয়। 

অনেক গুলো পলল শঙ্কু জুড়ে গিয়ে বিস্তার লাভ করলে একটি অর্ধগোলাকার হাতপাখার মতো দেখতে হয়। একে পলল ব্যাজনী বলে। 

উদাহরণ :গঙ্গা নদীর উচ্চপ্রবাহের শেষে ভাবর অঞ্চলে পলল শঙ্কু ও পলল ব্যাজনী দেখা যায়। 

(ii)নদী বাঁক বা মিয়েন্ডার :মধ্য ও নিম্ন প্রবাহে নদী গতিবেগ কম থাকে। ফলে প্রবাহপথে জলধারা বাধাপ্রাপ্ত হলে সেই বাঁধা এড়ানোর জন্য নদী গতিপথের পরিবর্তন ঘটায় এবং এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়। নদীর এই আঁকাবাঁকা অংশকে নদীবাঁক বলে। 

তুরস্কের মিয়েন্ডার নদীর নাম অনুসারে এই ভূমিরূপের নাম হয়েছে মিয়েন্ডার। 

উদাহরণ :ভাগিরথী নদীর নিম্নপ্রবাহে প্রচুর মিয়েন্ডার লক্ষ করা যায়। 

(iii)কর্তিত নদীবাঁক :ভূভাগের পুনর্যৌবন ঘটলে নদীর ক্ষয় করার শক্তি বেড়ে যায়। নদী তখন খাতকে গভীরভাবে কেটে আরও নীচের দিকে বসে যায়। এতে নদীর বাঁকের দুই পাড় খাঁড়া হয়, একে ধরণের নদী বাঁককে কর্তিত নদীবাঁক বলে। 

(iv)অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ :সমভূমির নদী কখনো কখনো তার বাঁকা গতিপথ ত্যাগ করে, সোজা পথে প্রবাহিত হয়। কালক্রমে পরিত্যক্ত স্রোতহীন বাঁকা নদীখাতটি দুই মুখে বালি, পলি, নুড়ি, কাঁদা ইত্যাদি জমা হয়ে, এবং মূল নদীখাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হ্রদ রূপে অবস্থান করে, এই ধরণের হ্রদকে ঘোড়ার খুঁড়ের মতো দেখতে হওয়ায়, এদের অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে। 

সৃষ্টির কারন :-নদী বাঁকের অবতল অংশে ক্রমাগত জলস্রোতের ধাক্কার বেশি পরিমান ক্ষয় হয় এবং সেই সঙ্গে উত্তল অংশে পলি সঞ্চয় এর ফলে নদী বাঁকের অত্যধিক বৃদ্ধি ঘটে। 

একসময় বাঁকের দুই মুখ পরস্পরের খুব কাছে চলে আসে, এদের মাঝখানে অবস্থিত সরু একফালি ভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত হলে, এরা অবশেষে জুড়ে যায়, নদী তখন বাঁকা পথ ছেড়ে সোজা পথে বইতে থাকে। 

পরিত্যক্ত স্রোতহীন বাঁকা নদী পথের দুই মুখ কালক্রমে বালি, পলি ও কাদায় বুজে গিয়ে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ-এ পরিণত হয়। 

উদাহরণ :কাটোয়া ও কালনার মাঝে হুগলি ভাগিরথী প্লাবন ভূমিতে অনেক অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ দেখা যায়। 

(v)প্লাবনভূমি :নিম্নপ্রবাহে নদীর পাড় থেকে উপত্যকার শেষ সীমা পর্যন্ত বন্যার পলি জমে যে সুবিস্তৃত সমভূমি গঠিত হয়, তাকে প্লাবনভূমি বা প্লাবনসমভূমি বলে। 

সৃষ্টির কারন :মধ্যপ্রবাহে নদীতে জলস্রোত কম থাকায় পলি জমে নদীগর্ভ ভরাট ও অগভীর হয়। এতে নদী জলধারন ক্ষমতা কমে যায়। বন্যার সময় নদী প্রচুর পরিমানে পলি বয়ে আনে তখন অতিরিক্ত জল দুকূল উপচে উপত্যকাকে প্লাবিত করে ,কিছুদিন পরে পলি থিথিয়ে গিয়ে পলির মোটা স্তর তৈরি করে। এইভাবে উপত্যকা ক্রমাগত বন্যার পলি দিয়ে ভরাট হয়ে প্লাবনভূমি সৃষ্টি করে। 

উদাহরণ :সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র প্রভৃতি নদীর নিম্ন অববাহিকায় বিস্তৃত প্লাবনভূমি গড়ে উঠেছে। 

 

(vi)স্বাভাবিক বাঁধ :নদীর দুই তীরে ক্রমাগত পলি জমে যে উঁচু বাঁধের মতো ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, তাকে স্বাভাবিক বাঁধ বলে। 

সৃষ্টির কারন :বর্ষার সময় নদীতে প্রচুর পরিমানে পলি আসে দুকূল উপচে জল প্লাবনভূমিতে ছড়িয়ে পড়লে বড়ো দানার পলি সমূহ নদীর পাড়ের কাছেই দ্রুত থিথিয়ে পড়ে। বেশি দূরে যেতে পারে না। এইভাবে পলি জমে জমে উঁচু হয়ে নদীর পাড় বরাবর একসময় স্বাভাবিক বাঁধ সৃষ্টি হয়। 

উদাহরণ :কলকাতা শহর গঙ্গার স্বাভাবিক বাঁধের ওপর অবস্থিত। 

(vii)বিলম্বিত নদীসংগম :মন্থরগতি সম্পন্ন কোনো নদীর স্বাভাবিক বাঁধ বন্যা প্রতিরোধের জন্য কৃত্রিম উপায়ে যদি আরও উঁচু করা হয়, তাহলে অনেকসময় উপনদী মূল নদীর সঙ্গে যথাস্থানে মিলিত হতে না পেরে প্লাবনভূমির ওপর দিয়ে মূল নদীর সমন্তরালে প্রবাহিত হতে বাধ্য হয় এবং পরে স্বাভাবিক বাঁধ ভেদ করে মূল নদীর সঙ্গে মিলিত হয়। এইরূপ নদী সংগমকে বিলম্বিত নদী সংগম বলে। 

মিসিসিপি নদীর উপনদী ইরাজু নদীর নাম অনুযায়ি এইরূপ নদীকে ইরাজু নদীও বলা হয়। 

উদাহরণ :বিহারের পাটনা ও মুঙ্গেরের মধ্যে এইরূপ বহু ইয়াজু নদী গঙ্গাতে উভয় তীরে মিলিত হতে দেখা যায়। 

(viii)নদীচর :নিম্নগতিতে নদীর স্রোতের বেগ কম থাকার ফলে নদীবাহিত বিভিন্ন শিলাখন্ড কাঁকর,বালি, নুড়ি প্রভৃতি নদীর তলদেশে ও নদীর দুপাশে সঞ্চিত হতে থাকে। এইভাবে নদীর তলদেশ ক্রমশ ভরাট হতে হতে নদীবক্ষে অনেক সময় চড়া ও দ্বীপের সৃষ্টি হয়। নদী বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে চড়ার দুপাশ দিয়ে বিনুনির মতো প্রবাহিত হয়। 

উদাহরণ :ভাগিরথী-হুগলি নদীতে নদীয়ার বিভিন্ন স্থানে এবং হালি শহরের নিকট এরূপ বহু চড়া গঠন করেছে। 

(ix)বদ্বীপ :মোহনার নিকট ভূমির ঢাল প্রায় সমুদ্র সমতলে অবস্থান করে। নদী বাহিত বিভিন্ন বোঝা সমুদ্রের লবনাক্ত জলের সংস্পর্শে এসে দ্রুত থিথিয়ে পড়ে। ফলে মোহনার নিকট সমুদ্রে নদী ক্রমশ অগভীর হয়ে নতুন ভূমিরূপ গঠন করে। এই ধরণের ভূমিরূপ দেখতে অনেকটা বাংলার মাত্রাহীন “ব” এবং গ্রিক অক্ষর ডেল্টা (△) -র মতো দেখতে হয় বলে, একে বদ্বীপ বলা হয়। 

উদাহরণ :গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র নদীর মিলিত বদ্বীপ পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম বদ্বীপ এবং সুন্দরবন পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ সমভূমি।   

(x)খাঁড়ি :সমুদ্রের নিকট নদী মোহনায় জোয়ার-ভাঁটা হয়। জোয়ারের জল নদীখাতে ঢুকে নদী উপত্যকাকে আরও চওড়া করে দেয়। একে খাঁড়ি বলে। 

উদাহরণ :রাশিয়া উত্তরে ওব নদীর মোহনায় অবস্থিত খাঁড়িটি পৃথিবীর বৃহত্তম খাঁড়ি। 

ভারতের সুন্দরবনে দুর্গাদুয়ানি খাঁড়ি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। 

Ratings
No reviews yet, be the first one to review the product.