কোনি || মতি নন্দী - রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

Language : Bengali

1. আপনার হাতটা বোধহয় আর বেশিদিন এই গন্ধমাদন টানতে পারবে না -কার লেখা, কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে ? গন্ধমাদন কী ? কে, কাকে, কেন একথা বলেছেন ?

⇒ উপরোক্ত অংশটি সাহিত্যিক মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাস থেকে নেওয়া হয়েছে। 

কিশোর উপন্যাস মতি নন্দীর রচিত ‘কোনি’ রচনাংশে বছর পঞ্চাশ বয়েসী সাড়ে তিন মন ওজনের বিষটুধরকে তার বিশাল আয়তনের জন্য ক্ষিতিশ সিংহ রামায়ণে উল্লেখযোগ্য গন্ধমাদন পর্বতের সঙ্গে তুলনা করেছে। 

ক্ষিতিশ সিংহ ক্রীড়াপ্রেমি ও সাঁতার প্রশিক্ষক হওয়ায় কোনির সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন ব্যক্তি। অতিরিক্ত ওজন শরীরে একাধিক সমস্যা সৃষ্টি করে। একাধিক মারণ ব্যাধির জন্ম দেয় তাই ব্লাড প্রেসার, ব্লাড সুগার প্রভৃতির কথা তাকে স্মরণ করিয়ে
দিয়েছে।কারণ অতিরিক্ত ওজন শরীরে যেকোনো সময় হানিকর প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে, এমন কী মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। তাই তাকে দেখা মাত্রই উপরোক্ত মন্তব্যটির মাধ্যমে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। 

2. ‘আমার খাবার লোভ নেয়, ডায়েটিং করি’- বক্তা কাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন ? তার ডায়েটিং খাবারের বর্ননা দাও। 

⇒ ‘কোনি’ উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র হিসাবে আমরা বিষটুচরণ ধরকে জানতে পারি। আই এ উত্তীর্ন বনেদি বংশের সন্তান বিষটুধরে অবস্থা স্বচ্ছল হওয়ায় এই স্কুল আয়তনের বিষটুধরকে বছর চল্লিশের অস্টিন গাড়িতে যাতায়াত করতে হয়। স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন ক্ষিতিশ সিংহ তাকে একাধিকবার সতর্ক করে দিয়েছেন। স্বাস্থ্যের পাশাপাশি সতর্ক করেছেন খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে। প্রত্যুত্তরে বিষটুধরকে জানিয়েছেন, আগের থেকে সে অনেকটাই খাবারকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, ডায়েটিং করেছে। তার ডায়েটিং-এর তালিকাটি আমাদের কাছে হাস্যরসের জোগান দেয়, যেমন - প্রতিদিনের খাদ্যে তাদের ক্ষীর রয়েছে  গ্রাম, তা লুচি, গ্রাম চালের ভ্যাট, রাত্রে টা রুটি, গরম ভাতের সঙ্গে  চামচ ঘি, বিকালে দু-গ্লাস মিছরির শরবত, টে করাপাক, এটাই তার সক্ষম ও কৃচ্ছ সাধন যা পাঠককে বিপুল হাস্যরসের জোগান। এভাবেই ডায়েটিং -এর পাশাপাশি শরীরের যত্নার্থে সপ্তাহে একবার ম্যাসাজ করাতে এই গঙ্গার ঘাটে আসে। 

3. ‘আপনি নিজের শরীরটাকে চাকর বানাতে পারবেন না’-বক্তা ও উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কে ? কোন প্রসঙ্গে একথা বলেছেন ?

⇒ মতি নন্দী রচিত আমাদের পাঠ্য ‘কোনি’ উপন্যাসে গঙ্গার ঘাটে বিশাল আয়তনের (সাড়ে তিন মণ ) বিষটু ধরকে উদ্দেশ্য করে ক্ষিতিশ সিংহ একথা বলেছেন। 

সুস্থ শরীর সুস্থ মনের অধিকারী। তাই শরীর স্বাভাবিক থাকলে আমারা আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী কাজকর্ম করতে পারি। প্রতিদিনের এই ক্রিয়াকর্মই আমাদের আনন্দিত ও সাবলম্বি করে তোলে। আমরা সন্তুষ্ট হয়। এবং জীবন ও সুদীর্ঘ আয়ুর অধিকারী হই। পর্যাপ্ত খাবার গ্রহণ ও ক্রিয়াকর্ম সম্পাদন এভাবেই আমরা করে থাকি। 

আলোচ্য উপন্যাসে ক্ষিতিশ সিংহ একজন যোগ্য স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তি হওয়ায় একথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আমাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ শরীরকে প্রয়োজন মতো কাজ করানো মানসিক আনন্দের কথা তাকে স্মরণ করিয়ে বলেছেন -জোর বলতে শুধু গায়ের জোরই বোঝায় না, মনের জোরই সর্বশ্রেষ্ঠ, মানুষ তার ইচ্ছাশক্তি দিয়ে শরীরের যাবতীয় দুর্বলতাকে অতিক্রম করতে পারে। তার থেকেও শরীরকে বেশি কাজ করাতে পারে মনের জোর। ক্ষিতিশ সিংহ এর কথাগুলি বিষটুধরের মনে যথেষ্ট জায়গা করে নেয়, তাই তাদের আলাপচারিতার শেষে সে বলে ওঠে -’ইচ্ছা করে খুব রোগা হয়ে যায়।’

4. কোনি উপন্যাসের প্রথম অংশটি কী ? অথবা, বারুনী উৎসব কী ? এই অংশের ঘটনাটি লেখ। অথবা, এই অংশে কোনিকে চিহ্নিত করার কারণ কী ?

⇒ মতি নন্দী রচিত ‘ক্রীড়া’ উপন্যাস অংশে চৈত্র মাসে গঙ্গাস্নানের মধ্য দিয়ে আম উৎসর্গ করার হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশেষ রীতি হল বারুনী উৎসব। 

গঙ্গায় আম বিসর্জনের মধ্য দিয়ে যে পুণ্য অর্জন করা হয় তাতে কোনি, ভাদু প্রমুখের প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে প্রথম অংশটি শুরু হয়েছে। আম কুড়োনো ও বিক্রির উদ্দ্যেশ্যে কোনি ও ভাদু মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে শেষমেষ কোনি জয়ী হয়। ঘাটে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে জনৈক এক বৃদ্ধ বলে ওঠে ‘মেয়ে মদ্দানি’কোনিকে উদ্দেশ্য করে একথা বলার কারন এই প্রতিযোগিতায় তারা পুরুষালী মনোভাব। মেয়ে হয়েও পুরুষের সঙ্গে লড়াই করার এই প্রবণতাই কোনিকে সকলের থেকে আলাদা করেছে, সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতিশ সিংহ-এর নজর কেড়েছে। 

যোগ্য প্রশিক্ষক হওয়ায় তিনি ভবিষ্যতে চ্যাম্পিয়ন সাঁতারুর সকল বৈশিষ্ট্যই তার মধ্যে লক্ষ্য করেছে। উপলব্ধি করেছেন তার সাহসিকতা, দৃঢ়তা, উদ্যমতা ও নির্ভীকতা তাই এই সকল বৈশিষ্ট্যই তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। 

5. ‘চ্যাম্পিয়ানরা জন্মায়, ওদের তৈরি করা যায় না’-বক্তা ও উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কে ? মন্তব্যটি অর্থ ব্যাখ্যা কর। 

⇒ মতি নন্দীর কোনি উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র ক্ষিতিশ সিংহ কোনিকে উদ্দেশ্য করে একথা বলেছেন। 

উপরোক্ত অংশটির মধ্য দিয়ে উপন্যাসিক একটি ধ্রুব সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যোগ্য চ্যাম্পিয়নের যেসকল বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার -তা জোর করে আরোপ করা যায় না। চ্যাম্পিয়ান হওয়ার কতগুলি আন্তরিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে , যেমন -দৃঢ়তা, সংগ্রামী মানসিকতা, কষ্টসহিষ্ণু প্রবণতা, প্রতিবাদ ধর্মীতা ইত্যাদি।  এই সকল বৈশিষ্ট্যই কোনির মধ্যে থাকায় যোগ্য চ্যাম্পিয়ান হিসাবে উপন্যাসের শেষ অংশকে আমরা তাকে লক্ষ্য করি। যোগ্য প্রশিক্ষক হওয়ায় তিনি প্রথম দর্শনেই কোনির মধ্যে এই বৈশিষ্ট্যগুলি উপলব্ধি করে উপরোক্ত মন্তব্যটি করেছে। 

6. আমাদের পাঠ্য ‘কোনি’ উপন্যাসে ক্ষিতিশ সিংহ -এর কোন কোন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে আলোচনা কর। অথবা, ক্ষিতিশ সিংহের মতে আদর্শ প্রশিক্ষকের কোন কোন গুণাবলী থাকা আবশ্যিক প্রয়োজন ?

⇒ মতি নন্দী রচিত আমাদের পাঠ্য ‘কোনি’ উপন্যাসে আদর্শ মানুষ ও প্রশিক্ষক হিসাবে ক্ষিতিশ সিংহ-এর নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি প্রকাশিত রয়েছে -

i. মনোস্তাত্ত্বিক : আদর্শ প্রশিক্ষকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল মনোস্তত্ত্ব -জ্ঞান। শুধুমাত্র কৌশল রপ্ত বা পরিশ্রম করানোই নয়, পাশাপাশি শিক্ষানবিশ-এ মনের অভ্যন্তরে ঘটে চলা সকল ভাবকেই সেই মতো বুঝে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। 

ii. সাধারণ জ্ঞান : প্রশিক্ষকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল সাধারণ জ্ঞান। সাধারণ জ্ঞানের প্রভাবেই প্রশিক্ষক যথাযথভাবে শিক্ষার্থীকে পরিচালনায় সক্ষম হয়। কোনিকে চ্যাম্পিয়ান করতে এই সাধারণ জ্ঞানের উপস্থিতি আমরা ক্ষিতিশ সিংহ-এর মধ্যে লক্ষ্য করি। 

iii. শ্রদ্ধাশীল : গুরু শিষ্যের সম্পর্কের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্যই হল গুরুকে শিক্ষার্থীর কাছে যথাযথ শ্রদ্ধার অধিকারী হওয়া। তবেই আদর্শ গুরু হিসাবে শিক্ষার্থীরা তাকে মেনে চলে। 

iv. উৎসাহবোধ : উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলি পাশাপাশি আদর্শ প্রশিক্ষকের উৎসাহবোধে ক্ষমতা রাখতে হয়। শিক্ষার্থীর ওঠা-পড়ার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত সাফল্যে পৌঁছাতে এই উৎসাহবোধ অন্যতম শক্তি হিসাবে কাজ করে। তাই উপন্যাসের আলোচনায় আমরা দেখেছি পরিশ্রমী কোনিকে উৎসাহিত করতে, সাফল্যে পৌঁছে দিতে বলেছেন “ফাইট কোনি ফাইট” 

v. আকাঙ্খা বা বাসনা সৃষ্টিকারী : শিক্ষার্থীকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে উৎসাহের পাশাপাশি আকাঙ্খার সৃষ্টি করতে হবে। বাস্তব স্বপ্ন দেখানো এবং পূরণ করার আকাঙ্খাবোধ সৃষ্টি করতে হবে। এই আকাঙ্খা, বাসনা শিক্ষার্থীকে তার নির্দিষ্ট পথে পরিচালিত করে। 

উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলির পাশাপাশি আদর্শ প্রশিক্ষকের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল সংযমবোধ, অনুশীলন চর্চা, আর্থিক এবং শারীরিক দিকে যথাযথ নজর রাখা ও সুবন্দোবস্থ করা। 

১৯৮৬ সালে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও শ্রীপর্ণা বন্দোপাধ্যায় অভিনীত ‘কোনি’ ছবিটি জাতীয় পুরস্কার পায়। ছবিটির পরিচালক সরোজ দে। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৮৪ সালে।


Ratings
No reviews yet, be the first one to review the product.
Click to send whatsapp message
Copywrite 2024 by  Misiki Technologies LLP