পুষ্টি (Pusti)

1. মিথোজীবিতা দেখা যায়-

a. ধানগাছে

b. স্বর্ণলতায়

c. র‍্যাফ্লেসিয়ায়

d. লাইকেনে

2. মানুষের বৃহদন্ত্রে মিথোজীবীরূপে বাস করে যে ব্যাকটেরিয়া তা হল-

a. গোলকৃমি

b. ফিতাকৃমি

c. ই. কোলি

d. প্লাজমোডিয়াম

3. শিম্বীগোত্রীয় উদ্ভিদের মূলে মিথোজীবীরূপে বাস করে, যে ব্যাকটেরিয়া সেটি হল-

a. ক্লসট্রিডিয়াম

b. অ্যাজোটোব্যাকটর

c. অ্যানাবিনা

d. রাইজোবিয়াম

4. অ্যাগারিকাস হল-

a. স্বভোজী

b. পরভোজী

c. পতঙ্গভূক

d. মৃতজীবী

5. অন্তঃপরজীবীটি হল-

a. মাইট

b. ফ্লি

c. টিনিয়া

d. এঁটুলি

6. অন্তঃপরজীবীতা দেখা যায়-

a. মশা

b. মাছি

c. গোলকৃমি

d. হাইড্রা-র

7. সপুষ্পক পূর্ণ মৃতজীবী হল-

a. লোরানাথাস

b. পেজাইজা

c. মনোট্রোপা

d. অ্যাগারিকাস

8. মৃতজীবী পুষ্টি সম্পন্নকারী উদ্ভিদ হল-

a. কলসপত্রী

b. লাইকেন

c. মিউকর

d. রাস্না

9. মানবদেহের পৌষ্টিকতন্ত্রের যে অংশ থেকে শর্করাজাতীয় খাদ্য পরিপাকের জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচক ক্ষরিত হয় না তা হল-

a. অগ্ন্যাশয়

b. পাকস্থলী

c. ক্ষুদ্রান্ত্র

d. মুখবিবর

10. মানুষের ছেদক দাঁতের সংখ্যা-

a. 2টি

b. 4টি

c. 8টি

d. 10টি

11. বৃহৎ লালাগ্রন্থি হল-

a. যকৃৎ

b. সাবলিঙ্গুয়াল গ্রন্থি

c. সাবম্যান্ডিবুলার গ্রন্থি

d. প্যারোটিড গ্রন্থি

12. নিম্নলিখিত কোনটি অ্যামাইলোলাইটিক উৎসেচক?

a. ট্রিপসিন

b. মলটেজ

c. পেপসিন

d. লাইপেজ

13. প্রোটিওলাইটিক উৎসেচক নয়-

a. টায়ালিন

b. পেপসিন

c. ট্রিপসিন

d. ইরেপসিন

14. টায়ালিন-এর ক্ষরণস্থল হল-

a. আন্ত্রিক গ্রন্থি

b. অগ্ন্যাশয় গ্রন্থি

c. যকৃৎ গ্রন্থি

d. লালা গ্রন্থি

15. যে উৎসেচকটি আম্লিক মাধ্যমে কাজ করে, তা হল-

a. রেনিন

b. পেপসিন

c. টায়ালিন

d. মলটেজ

16. মানুষের পৌষ্টিকতন্ত্রের যে অংশে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ক্ষরিত হয় -

a. ক্ষুদ্রান্ত্র

b. পাকস্থলী

c. বৃহদন্ত্র

d. অগ্ন্যাশয়

17. পেপসিন ক্ষরিত হয়-

a. পাকস্থলীতে

b. ক্ষুদ্রান্ত্রে

c. বৃহদন্ত্রে

d. অগ্ন্যাশয়-এ

18. প্রোটিন পরিপাকের পর যে পদার্থে পরিণত হয়, তা হল-

a. অ্যামাইনো অ্যাসিড

b. ফ্যাটি অ্যাসিড

c. স্টেরয়েড

d. মোনোস্যাকারাইড

19. মানুষের পৌষ্টিকতন্ত্রের যে অংশে খাদ্য পরিপাকের সমাপ্তি ঘটে, সেটি হল-

a. পাকস্থলী

b. খাদ্যনালি

c. বৃহদন্ত্র

d. ক্ষুদ্রান্ত্র

20. একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের প্রতিদিন যে পরিমান শক্তির প্রয়োজন হয়, তা হল-

a. 1000-2000 kcal

b. 2500-3000 kcal

c. 2000-2500 kcal

d. 3500-4000 kcal

শূন্যস্থান পূরণ করো। (প্রশ্নমান -1)

1. জোঁক হল একপ্রকার স্যাংগুইনিভোরি প্রাণী।

2. উৎসেচক হল প্রোটিনধর্মী।

3. মল ভক্ষণকারী প্রাণীদের বলে কপ্রোফ্যাগি।

4. পরিণত মানুষের মোলার দাঁতের সংখ্যা দুটি চোয়ালে 12টি।

5. যকৃৎ পিত্তরস ক্ষরণ করে।

6. মেরুদন্ডী প্রাণীর সর্ববৃহৎ পাচনগ্রন্থি হল যকৃৎ।

7. গ্লাইকোজেনেসিস পদ্ধতিতে গ্লুকোজ গ্লাইকোজেনে পরিণত হয়।

8. পৌষ্টিকনালীর শোষণ একক হল ভিলাই।

9. প্রোটিনের অভাবে ঘটে ম্যারাসমাস রোগ।

10. স্নেহপদার্থ পরিপাকের ফলে ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারল উৎপন্ন হয়।

দু-একটি শব্দে উত্তর দাও। (প্রশ্নমান-1)

1. পুষ্টি কি ধরনের বিপাক?

উপচিতি বিপাক

2. পতঙ্গভুক উদ্ভিদরা পতঙ্গ শিকার করে কিসের চাহিদা মেটানোর জন্য?

নাইট্রোজেন-এর

3. অন্তঃকোষীয় এবং বহিঃকোষীয় উভয় পরিপাকই দেখা যায়, এমন একটি প্রাণীর উদাহরণ দাও।

হাইড্রা

4. লালারসে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসকারী একটি উৎসেচকের নাম লেখ।

লাইসোজাইম

5. মানুষের মুখগহ্বরে কোন জাতীয় খাদ্যের পরিপাক শুরু হয়?

সেদ্ধ কার্বোহাইড্রেট

6. পৌষ্টিকনালীর কোথায় প্রোটিনের পরিপাক শুরু হয়?

পাকস্থলীতে

7. সুষমখাদ্যে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাটের অনুপাত কত?

4:1:1

8. মানুষের কত জোড়া লালাগ্রন্থি থাকে ও কি কি ?

তিন জোড়া- প্যারোটিড গ্রন্থি, সাবম্যান্ডিবুলার গ্রন্থি ও সাবলিঙ্গুয়াল গ্রন্থি।

9. কোণ লালাগ্রন্থি থেকে সর্বাধিক পরিমানে লালারস ক্ষরিত হয়?

সাবলিঙ্গুয়াল গ্রন্থি থেকে

10. লালারসে পাওয়া যায় এমন দুটি উৎসেচকের নাম লেখ।

টায়ালিন ও মলটেজ

11. দুটি পিত্তলবনের উদাহরণ দাও।

সোডিয়াম গ্লাইকোলেট ও সোডিয়াম টরোকোলেট।

12. BMR-এর পুরো নাম কি?

Basal Metabolic Rate

13. একজন স্বাভাবিক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও মহিলার BMR কত?

পুরুষ-40 kcal/বর্গমিটার দেহতল /ঘন্টা

মহিলা-37 kcal/বর্গমিটার দেহতল /ঘন্টা

14. মানুষের একটি বিপাকীয় সমস্যার নাম লেখ।

ডায়াবেটিস মেলিটাস

15. HCL কোণ উৎসেচককে নিষ্ক্রিয় করে?

টায়ালিন

16. দুটি অন্তঃপরজীবী প্রাণীর উদাহরণ দাও।

গোলকৃমি ও ফিতাকৃমি

17. দুটি বহিঃপরজীবী প্রাণীর উদাহরণ দাও।

উকুন ও ল্যামপ্রে

18. মানুষের দন্ত সংকেতটি লেখ।

I22 , C11 , PM22, M33,যেখানে I= Incisor বা কৃন্তক, C= Canine বা ছেদক, PM= Premolar বা পুরপেষক, এবং M= Molar বা পেষক।

19. পরিপাক গ্রন্থিগুলির নাম লেখ।

i) লালাগ্রন্থি , ii) পাকস্থলী, iii) যকৃৎ, iv)অগ্ন্যাশয়, v)আন্ত্রিক গ্রন্থি

20. মানুষের ক্ষুদ্রান্ত্র কটি অংশে বিভক্ত ও কিকি?

তিনটি অংশে-i) ডিওডিনাম, ii) জেজুনাম এবং iii) ইলিয়াম।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর (প্রশ্নমান-2)

1. হোলোফাইটিক পুষ্টি কাকে বলে?

স্বভোজী উদ্ভিদের পরিবেশ থেকে ব্যাপন পদ্ধতিতে তরল ও গ্যাসীয় পরিপোষক (H2O ও CO2) নিয়ে নিজদেহে খাদ্য সংশ্লেষের মাধ্যমে পুষ্টি সম্পন্ন করার পদ্ধতিকে হোলোফাইটিক পুষ্টি বলে।

2. হোলোজোয়িক পুষ্টি বলতে কি বোঝ?

যে পুষ্টি পদ্ধতিতে জটিল খাদ্য গৃহীত হয়ে উৎসেচকের সাহায্যে পরিপাচিত হয়ে কোশে পৌঁছায় ও আত্তীকরণ ঘটে এবং অপাচ্য খাদ্যের বহিস্করণের মাধ্যমে প্রাণীদেহে সামগ্রিকভাবে পুষ্টি সম্পন্ন হয়, তাকে হোলোজোয়িক পুষ্টি বলে।

3. মিথোজীবীয় পুষ্টি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে পুষ্টি পদ্ধতিতে দুটি ভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ পরস্পরের সাহচর্য এবং সহযোগিতায় জীবনধারণ করে এবং উভয়েই পারস্পরিক নির্ভরশীলতায় পুষ্টি সম্পন্ন করে, তাকে মিথোজীবীয় বা সিমবায়োটিক পুষ্টি বলে।

উদাহরণ- লাইকেন, এক্ষেত্রে শৈবাল ও ছত্রাক পারস্পরিক সহযোগিতায় পুষ্টি লাভ করে ও বেঁচে থাকে।

4. উৎসেচককে জৈব অনুঘটক বলা হয় কেন?

উৎসেচক কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উপস্থিত থেকে সাবস্ট্রেটের ক্রিয়াকে প্রভাবিত করে, কিন্তু নিজে পরিবর্তিত হয় না, আবার উৎসেচক কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় নিজে অংশগ্রহণ করে না, ফলে পুনরায় এটি ব্যবহারযোগ্য হয়, তাই উৎসেচককে জৈব-অনুঘটক বলা হয়।

5. মৌল বিপাক হার বা BMR কাকে বলে?

একজন সুস্থ ব্যাক্তির স্বাভাবিক খাদ্যগ্রহণের 12-18 ঘন্টা পর সম্পূর্ণ শারীরিক ও মানসিক বিশ্রামরত অবস্থায় নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে দেহের প্রয়োজনীয় শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া সম্পাদনের জন্য প্রতি বর্গমিটার দেহতলে, প্রতি ঘন্টায় ন্যূনতম যে তাপশক্তি নির্গত হয় তাকে মৌল বিপাক হার বা BMR বলে।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর (প্রশ্নমান-3)

1. ব্যতিহার ও সহভোক্তা কাকে বলে?

ব্যতিহার বা মিউচুয়ালিজম-যে মিথোজীবীয় পুষ্টি পদ্ধতিতে দুটি ভিন্ন প্রকার জীব পরস্পরের সাহচর্যে থেকে পুষ্টি সম্পন্ন করে এবং উভয়েই উপকৃত হয়, তাকে ব্যতিহার মিথোজীবী বা মিউচুয়ালিজম বলে। যেমন- লাইকেন, পাইন প্রভৃতি।

সহভোক্তা বা কমেনসালিজম- যে মিথোজীবীয় পুষ্টি পদ্ধতিতে দুটি ভিন্ন জীব সহাবস্থানে থেকেও পরস্পর পৃথকভাবে পুষ্টি সংগ্রহ করে এবং একে অন্যকে প্রভাবিত করে না, তাকে সহভোক্তা বা কমেনসালিজম বলে। যেমন- গজপিপুল, রাস্না প্রভৃতি।

2. সুষমখাদ্য বলতে কি বোঝায়? সুষম খাদ্যের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।

সুষমখাদ্য- যেসকল খাদ্যে বিভিন্ন প্রকারের খাদ্য উপাদানগুলি (যেমন-কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, খনিজ লবন প্রভৃতি) যথোপযুক্ত পরিমানে এবং যথার্থ অনুপাতে উপস্থিত থাকে, তাকে সুষমখাদ্য বা ব্যালেন্সড ডায়েট বলে।

বৈশিষ্ট্য-i) সুষমখাদ্যে সমস্ত খাদ্য উপাদানগুলি উপযুক্ত অনুপাতে উপস্থিত থাকে এবং এইসমস্ত খাদ্য উপাদান দেহের গঠনমূলক ক্রিয়াকলাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ii) সুষমখাদ্য দেহের বিভিন্ন কলাকোশের বৃদ্ধি ও শারীরবৃত্তীয় কাজকে নিয়ন্ত্রণ করে।

iii) সুষমখাদ্য দেহের তাপশক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।

iv) সুষমখাদ্য ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর (প্রশ্নমান-5)

1. পুষ্টি কাকে বলে? জীবদেহে পুষ্টির গুরুত্ব বা তাৎপর্যগুলি আলোচনা করো। **

পুষ্টি (Nutrition)- যে পদ্ধতিতে জীব খাদ্য উপাদান বা পরিপোষক (জৈব অথবা অজৈব বস্তু) সংগ্রহ করে খাদ্যবস্তুর পরিপাক, শোষণ, আত্তীকরণ এবং বহিস্করণের মাধ্যমে (প্রাণীদের ক্ষেত্রে) অথবা খাদ্য সংশ্লেষ ও আত্তীকরণের মাধ্যমে (উদ্ভিদের ক্ষেত্রে) দেহের বৃদ্ধি ঘটায়, ক্ষয়পূরণ ও রোগপ্রতিরোধ করে এবং খাদ্যমধ্যস্থ স্থৈতিক শক্তিকে ব্যবহারযোগ্য শক্তিতে রূপান্তরিত করে জীবনের মৌলিক ধর্মগুলি পালন করে, তাকে পুষ্টি বা পরিপোষণ বা নিউট্রিশন বলে।

জীবদেহে পুষ্টির গুরুত্ব বা তাৎপর্য:

1. দেহের বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ- পুষ্টির মাধ্যমে প্রোটোপ্লাজমের বৃদ্ধি ঘটে, যা কোশ বিভাজন ঘটায় এবং জীবদেহের সামগ্রিক বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ ও শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

2. জৈবিক ধর্ম পালন- পুষ্টির মাধ্যমে জীবদেহের মৌলিক ধর্মগুলি যেমন- চলন, গমন, রেচন, জনন প্রভৃতি পালনের জন্য শক্তি অর্জিত হয়।

3. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা- পুষ্টির মাধ্যমে জীবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে এবং জীব বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা পায়।

4. শক্তির রূপান্তর- পুষ্টির মাধ্যমে খাদ্যমধ্যস্থ স্থৈতিক শক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়।

5. খাদ্য ও শক্তি সঞ্চয়- উদ্ভিদদেহে শ্বেতসার রূপে ও প্রাণীদেহের পেশি, যকৃৎ-এ গ্লাইকোজেন রূপে এবং মেদকলায় ফ্যাট বা চর্বিরূপে খাদ্য সঞ্চিত থাকে, যা ভবিষ্যতে শক্তির উৎসরূপে কাজ করে।

6. কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি- পুষ্টির মাধ্যমে উৎপন্ন তাপ দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ও প্রাণীদেহে স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা বজায় রাখে।

2. উদ্ভিদজগতে কত ধরনের পুষ্টি দেখা যায়? প্রতি প্রকার পুষ্টি উদাহরণসহ ছকের মাধ্যমে লেখ।

উদ্ভিদজগতে প্রধানত দুই ধরনের পুষ্টি -পদ্ধতি দেখা যায়।

যথা-i) স্বভোজী পুষ্টি ও ii) পরভোজী পুষ্টি।

উদ্ভিদ পুষ্টি

স্বভোজী পুষ্টি

সবুজ উদ্ভিদের দেহে

সংঘটিত পুষ্টি

পরভোজী পুষ্টি

পরজীবীয় পুষ্টি -র‍্যাফ্লেসিয়া, মনোট্রোপা

মিথোজীবীয় পুষ্টি- লাইকেন

মৃতজীবীয় পুষ্টি- মিউকর, রাইজোপাস, পেনিসিলিয়াম প্রভৃতি ছত্রাকের পুষ্টি

পতঙ্গভুক পুষ্টি- কলসপত্রী, সূর্যশিশির প্রভৃতি

3. হলোজয়িক পুষ্টির বিভিন্ন পর্যায়গুলির সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও।

প্রাণী পুষ্টি বা হলোজোয়িক পুষ্টির পর্যায়গুলি হল-

i)খাদ্যগ্রহণ, ii)পরিপাক বা পাচন, iii)শোষণ, iv)আত্তীকরণ, এবং v) বহিষ্করণ

i) খাদ্যগ্রহণ (Ingestion): যে প্রক্রিয়ায় প্রাণী নির্দিষ্ট অঙ্গের সাহায্যে বাইরের পরিবেশ থেকে খাদ্য দেহের মধ্যে গ্রহণ করে, তাকে খাদ্যগ্রহণ বলে। যেমন- অ্যামিবা ক্ষনপদের সাহায্যে, ব্যাং জিহ্বার সাহায্যে খাদ্যগ্রহণ করে।

ii) খাদ্য পরিপাক (Digestion): যে প্রক্রিয়ায় প্রাণীদেহে গৃহীত অদ্রবণীয়, কঠিন ও জটিল খাদ্য বিভিন্ন উৎসেচকের সাহায্যে বিশ্লিষ্ট হয়ে বা ভেঙে গিয়ে দ্রবণীয়, সরল, তরল ও শোষণোপযোগী খাদ্যরসে পরিণত হয়, তাকে খাদ্য পরিপাক বলে। যেমন- শ্বেতসার, গ্লাইকোজেন প্রভৃতি জটিল কার্বোহাইড্রেট অ্যামাইলেজ, ল্যাকটেজ, মলটেজ প্রভৃতি উৎসেচকের ক্রিয়ায় সরল শর্করায় পরিণত হয়।

iii) শোষণ (Absorption): যে প্রক্রিয়ায় পাচিত সরল খাদ্যরস কোশে বা রক্তজালকে বা লসিকাবাহে প্রবেশ করে, তাকে শোষণ বলে। যেমন- মানুষের পৌষ্টিকনালীর ক্ষুদ্রান্ত্রের গহ্বর থেকে গ্লুকোজ, অ্যামিনো অ্যাসিড, গ্লিসারল প্রভৃতি রক্তজালকে এবং ফ্যাটি অ্যাসিড কেন্দ্রীয় লসিকাবাহ বা ল্যাকটিয়েলে প্রবেশ করে শোষণের মাধ্যমে। ক্ষুদ্রান্ত্রের অন্তঃপ্রাচীরে অবস্থিত আঙুলের ন্যায় প্রবর্ধক, ভিলাই শোষণে সাহায্য করে।

iv) আত্তীকরণ (Assimilation): যে প্রক্রিয়ায় সরল শোষিত খাদ্য কোশের প্রোটোপ্লাজমের অংশবিশেষে পরিণত হয়, তাকে আত্তীকরণ বলে। যেমন- পরিপাক গ্রন্থি যকৃৎ আত্তীকরণে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে। যকৃতে গ্লুকোজ বা ফ্যাটি অ্যাসিড বা অ্যামিনো অ্যাসিড এসে পৌঁছলে তা রক্ত সংবহনের মাধ্যমে দেহের প্রতিটি কোশে পৌঁছায় এবং কাজে লাগে।

v) বহিস্করণ (Egestion): যে প্রক্রিয়ায় অপাচ্য খাদ্য নির্দিষ্ট অঙ্গের মাধ্যমে দেহ থেকে পরিত্যক্ত হয়, তাকে বহিস্করণ বলে। যেমন- খাদ্যের অপাচিত অংশ বৃহদন্ত্রে প্রবেশ করে। সেখানে জল শোষিত হয়ে মলে পরিণত হয়ে মলাশয় ও পায়ুছিদ্রের মাধ্যমে দেহ থেকে নির্গত হয়।

4. পৌষ্টিকনালী কাকে বলে? মানব পৌষ্টিকনালির বিভিন্ন অংশগুলি সম্পর্কে ধারণা দাও।

পৌষ্টিকনালী (Alimentary Canal)- মুখছিদ্র থেকে শুরু করে পায়ুছিদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত যে দীর্ঘ নলাকার অংশের মধ্যে দিয়ে খাদ্যগ্রহণ, গৃহীত খাদ্যের পরিপাক, পাচিত খাদ্যরস শোষণ, অপাচ্য খাদ্যবস্তুর বহিস্করণ প্রভৃতি কাজগুলি সম্পন্ন হয়, তাকে পৌষ্টিকনালী বলে।

পৌষ্টিকনালীর বিভিন্ন অংশ- মানব পৌষ্টিকনালীর দৈর্ঘ্য প্রায় 8-10 মিটার। পৌষ্টিকনালীর অংশগুলি হল-

1. মুখগহ্বর (Mouth Cavity)- ওষ্ঠ দ্বারা বেষ্টিত মুখছিদ্রের পরবর্তী প্রশস্ত প্রকোষ্ঠকে মুখগহ্বর বলে। এই স্থানে দাঁত, জিহ্বা ও লালাগ্রন্থি থাকে।

কাজ- মুখগহ্বরে খাদ্যবস্তু দাঁত ও জিহ্বার সাহায্যে ভালোভাবে পেষাই হয় এবং লালারসের সঙ্গে মিশ্রিত হয়। এই স্থানে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্যের পরিপাক শুরু হয়।

2. গলবিল (Pharynx)- মুখগহ্বরের পরে প্রায় 12-14 সেমি প্রশস্ত ফানেলের মতো অংশকে গলবিল বলে। এটি নাসা গলবিল, মুখ গলবিল ও স্বর গলবিল দ্বারা গঠিত।

কাজ- গলবিল খাদ্যবস্তুকে মুখগহ্বর থেকে গ্রাসনালিতে পৌঁছে দেয়।

3. গ্রাসনালি (Oesophagus)- গলবিলের পরে প্রায় 25 সেমি দীর্ঘ নলাকার মসৃণ পেশিবহুল অংশকে গ্রাসনালি বলে।

কাজ- গ্রাসনালি বা খাদ্যনালির মসৃণ পেশির ক্রমসংকোচন বিচলনের (পেরিস্ট্যালসিস মুভমেন্ট) সাহায্যে খাদ্য গলবিল থেকে পাকস্থলীতে পৌঁছায়।

4. পাকস্থলী (Stomach)- মধ্যচ্ছদার ঠিক নীচে পৌষ্টিকনালির সবথেকে প্রশস্ত প্রায় 25-30 সেমি দীর্ঘ থলির মতো গঠনকে পাকস্থলী বলে। এটি কার্ডিয়াক প্রান্ত, ফান্ডাস, দেহ ও পাইলোরিক প্রান্ত দ্বারা গঠিত।

কাজ- i) প্রধানত প্রোটিন জাতীয় ও অল্প পরিমানে ফ্যাট জাতীয় খাদ্যের পরিপাক ঘটে।

ii) জল ও অ্যালকোহল এবং অল্প পরিমান গ্লুকোজ ও লবণ শোষিত হয়

iii) মরফিন ও অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ রেচিত হয়।

5. ক্ষুদ্রান্ত্র (Small Intestine)- পাকস্থলী পরবর্তী প্রায় 6 মিটার লম্বা ও 2.5 সেমি ব্যাসযুক্ত নলাকার অংশকে ক্ষুদ্রান্ত্র বলে। ক্ষুদ্রান্ত্র ডিওডিনাম বা গ্ৰহণী, জেজুনাম ও ইলিয়ামে বিভক্ত থাকে।

কাজ- i) ক্ষুদ্রান্ত্রে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট জাতীয় খাদ্যের পাচন ক্রিয়া সম্পন্ন হয় এবং সরল খাদ্যবস্তু শোষিত হয়।

ii) ক্ষুদ্রান্ত্রে জল, খনিজ লবণ, ভিটামিন ইত্যাদি শোষিত হয়।

6. বৃহদন্ত্র (Large Intestine)-ক্ষুদ্রান্ত্রের পরে প্রায় 1.5-1.8 মিটার দীর্ঘ এবং 6 সেমি ব্যাসযুক্ত নলাকার গঠনকে বৃহদন্ত্র বলে। এটি সিকাম ও কোলন অংশ দ্বারা গঠিত।

কাজ- প্রধানত জল শোষিত হয় ও অপাচ্য খাদ্য মলে রূপান্তরিত হয়। মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়ার সহযোগিতায় ভিটামিন K ও B-কমপ্লেক্স (ফোলিক অ্যাসিড) সংশ্লেষিত হয়।

7. মলাশয় (Rectum)- সিগময়েড ও কোলন থেকে শুরু করে পায়ুছিদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় 15 সেমি দীর্ঘ নলাকার অংশকে রেকটাম বা মলাশয় বলে।

কাজ- মল সাময়িকভাবে সঞ্চিত থাকে এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর পায়ুছিদ্রের মাধ্যমে মল দেহের বাইরে নির্গত হয়।

5. বিভিন্ন প্রকার পাচক উৎসেচকের নাম, উৎস, কোন প্রকার খাদ্যের ওপর ক্রিয়া করে এবং পরিপাকলব্ধ পদার্থের নাম ছকের সাহায্যে উল্লেখ করো।

উৎসেচক গোষ্ঠী	উৎসেচকের নাম	উৎসেচকের উৎস	কোণ ধরনের খাদ্যের ওপর ক্রিয়া করে	পরিপাকলব্ধ পদার্থের নাম
অ্যামাইলোলাইটিক উৎসেচক (কার্বোহাইড্রেট পরিপাককারী উৎসেচক)	i) টায়ালিন ii) অ্যামাইলেজ iii) সুক্রেজ iv) ল্যাকটেজ v) মলটেজ	লালাগ্রন্থি অগ্ন্যাশয় ও আন্ত্রিকগ্রন্থি আন্ত্রিকগ্রন্থি আন্ত্রিকগ্রন্থি লালাগ্রন্থি, অগ্ন্যাশয় ও আন্ত্রিকগ্রন্থি	সিদ্ধ শ্বেতসার শ্বেতসার সুক্রোজ ল্যাকটোজ মলটোজ	মলটোজ মলটোজ গ্লুকোজ ওফ্রুকটোজ গ্লুকোজ ও গ্যালাকটোজ গ্লুকোজ
প্রোটিওলাইটিক উৎসেচক (প্রোটিন পরিপাককারী উৎসেচক)	i) পেপসিন ii) ট্রিপসিন iii) ইরেপসিন iv) রেনিন	পাকগ্রন্থি অগ্ন্যাশয় আন্ত্রিকগ্রন্থি পাকগ্রন্থি	প্রোটিন পেপটোন পেপটাইড কেসিনোজেন	পেপটোন পেপটাইড অ্যামিনো অ্যাসিড কেসিন
লাইপোলাইটিক উৎসেচক (ফ্যাট পরিপাককারী উৎসেচক)	লাইপেজ	পাকগ্রন্থি, অগ্ন্যাশয় ও আন্ত্রিকগ্রন্থি	ফ্যাট বা ট্রাইগ্লিসারাইড	ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারল

6. স্বভোজী পুষ্টি (Autotrophic Nutrition) ও পরভোজী পুষ্টির (Heterotrophic Nutrition) মধ্যে পার্থক্য লেখো।

	বিষয়	স্বভোজী পুষ্টি	পরভোজী পুষ্টি
1)	প্রকৃতি	জীবের নিজ দেহে সংশ্লেষিত খাদ্য থেকে পুষ্টি লাভ	অন্য কোনো জীব থেকে গৃহীত খাদ্য দ্বারা পুষ্টি লাভ।
2)	পুষ্টি উপাদান	প্রধানত তরল ও গ্যাসীয় অজৈব যৌগ	প্রধানত কঠিন, তরল, ও জটিল, অদ্রবণীয় খাদ্য
3)	পুষ্টি পর্যায়	দুটি। যথা- সংশ্লেষ ও আত্তীকরণ	পাঁচটি। যথা- খাদ্যগ্রহন, পরিপাক, শোষণ, আত্তীকরণ, ও বহিস্করণ
4)	প্রকারভেদ	সালোকসংশ্লেষকারী ও রাসায়নিক সংশ্লেষকারী	মৃতজীবী, পরজীবী,মিথোজীবী, পতঙ্গভূক, মলভুক, রক্তভুক প্রভৃতি
5)	সংঘটন স্থান	সমস্ত সবুজ উদ্ভিদ, সালোকসংশ্লেষকারী ও রাসায়নিক সংশ্লেষকারী ব্যাকটেরিয়া, ইউগ্লিনা, ক্রাইস্যামিবা প্রভৃতি দেহে ঘটে।	সমস্ত পরভোজী প্রাণীর দেহে ঘটে।

7. প্রাণীজগতে কত ধরণের পুষ্টি দেখা যায়? প্রত্যেক প্রকার পুষ্টি উদাহরনসহ ছকের মাধ্যমে লেখো।

প্রাণী জগতে মোট পাঁচ ধরনের পরভোজী পুষ্টি লক্ষ করা যায়। যথা-

প্রাণীর পরভোজী পুষ্টি

পরজীবীয় পুষ্টি

বহিঃপরজীবী

উদাহরণ- উকুন

অন্তঃপরজীবী

উদাহরণ- মশা

মৃতজীবীয় পুষ্টি- উদাহরণ- ইউগ্লিনা

মিথোজীবীয় পুষ্টি- উদাহরণ- উইপোকা

কপ্রোফ্যাগি পুষ্টি- উদাহরণ- গিনিপিগ

স্যাংগুইনিভোরি পুষ্টি- উদাহরণ- মশা, জোঁক

Class 9 Pusti | Nutrition | Life Science Notes

Ratings