- SCHOOL BOARDS
- WBBSE/WBCHSE
- CLASS 10
- GEOGRAPHY
- 1.3 : হিমবাহের কাজ (ক্ষয়, বহন, ও সঞ্চয় ) দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ
- CH-1_HIMBAHO হিমবাহ (বহির্জাত প্ৰক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ)
CH-1_HIMBAHO হিমবাহ (বহির্জাত প্ৰক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ)
Language : Bengali
CH-1_হিমবাহ
১. হিমরেখা কাকে বলে ?
উঃ - উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে ও মেরু অঞ্চলে যে সীমারেখার ওপরে অত্যাধিক শীতলতার জন্য সারাবছরই জল জমে বরফে পরিণত হয় এবং যে সীমারেখার নিচে বরফ গলে যায়, সেই সীমারেখাকে হিমরেখা বলে।
হিমরেখার ওপরে থাকে চিরতুষার ক্ষেত্র। পৃথিবীর সর্বত্র হিমরেখা একই উচ্চতায় অবস্থান করে না। নিরক্ষীয় অঞ্চলে হিমরেখা গড়ে ৫৫০০ মিটার, হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে ৪০০০ মিটার, আল্পস পর্বতে ২৭০০ মিটার এবং মেরু অঞ্চলে সমুদ্র সমতলে (০ মিটার ) অবস্থান করে।
২. পার্বত্য হিমবাহ বা উপত্যকা হিমবাহ বলতে কী বোঝো ?
উঃ - পার্বত্য অঞ্চলে উদ্ভূত হিমরাশি মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে উপত্যকার ভেতর দিয়ে ধীরে ধীরে নেমে আসে। এদের বলা হয় পার্বত্য বা উপত্যকা হিমবাহ। এজাতীয় হিমবাহ আল্পস পর্বতে দেখা যায় বলে এরা আবার আল্পীয় হিমবাহ নামেও পরিচিত।
উদাহরণ : পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক পার্বত্য বা উপত্যকার হিমবাহ হিমালয় পর্বতে দেখা যায়। হিমালয় পর্বতের হিমবাহগুলো স্থানীয় নাম ‘হিমাল’ গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী ও জেমু ছাড়া হিমালয়ের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য হিমবাহগুলো হল মহালঙ্গুর, য়াংলু, তালুং, জানো ইত্যাদি। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা প্রদেশের হুবার্ড, হল পৃথিবীর দীর্ঘতম পার্বত্য বা উপত্যকার হিমবাহ। এর দৈর্ঘ্য ১২৮ কিলোমিটার।
৩. মহাদেশীয় হিমবাহ বলতে কী বোঝো ?
উঃ - বিস্তীর্ন অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করছে, এমন সুবিশাল বরফের স্তূপকে বলা হয় মহাদেশীয় হিমবাহ। এই প্রকার হিমবাহের আকৃতি অনেকটা কচ্ছপের পিঠের মতো -মাঝখানটা উঁচু এবং চারদিক ঢালু। এজাতীয় হিমবাহ কেন্দ্রস্থল থেকে পাতের আকারে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
পৃথিবীর মহাদেশীয় হিমবাহের মধ্যে ৮৫ শতাংশ আন্টার্কটিকা মহাদেশে, ১১ শতাংশ গ্রীনল্যান্ডে এবং বাকি অংশটুকু আইসল্যান্ড ও তার আশপাশের দ্বীপগুলোতে সঞ্চিত রয়েছে।
উদাহরণ-আন্টার্কটিকার ল্যামবার্ট পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশীয় হিমবাহ। এর দৈর্ঘ্য ৫১২ কিলোমিটার এবং বিস্তার প্রায় ৬৫ কিলোমিটার।
৪. পাদদেশীয় হিমবাহ কী ?
উঃ - হিমবাহ যখন পর্বত থেকে নেমে পর্বতের পাদদেশে অবস্থান করে তখন তাকে বলা হয় পাদদেশীয় হিমবাহ।
হিমবাহ বিজ্ঞানীদের মতে একাধিক পার্বত্য হিমবাহ পাদদেশে পৌঁছে একত্রে মিলিত হয়ে পাদদেশীয় হিমবাহ গঠন করে। এই প্রকার হিমবাহ দেখতে অনেকটা নদীর ব-দ্বীপের মতো।
উদাহরণ- আন্টার্কটিকা, গ্রীনল্যান্ড, আলাস্কা এবং আইসল্যান্ড সন্নিহিত অঞ্চলে এই প্রকার হিমবাহ দেখা যায়। পাদদেশীয় হিমবাহের অগ্রভাগকে লোব বলে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা প্রদেশের মালাসপিনা হল পৃথিবীর বৃহত্তম পাদদেশীয় হিমবাহ।
৫. হিমশৈল কী ?
উঃ - সুমেরু অঞ্চলে গ্রীনল্যান্ড ও কুমেরু অঞ্চলে আন্টার্কটিকায় হিমরেখা সমুদ্রপৃষ্ঠে অবস্থিত হওয়ায় হিমবাহ সমুদ্রে এসে পড়ে। জলের ঊর্ধচাপে, বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোতের প্রভাবে হিমবাহের কিছু অংশ ভেঙে সমুদ্রে ভাসতে থাকে। এদের হিমশৈল বলে।
হিমশৈলের ৮/৯ ভাগ জলের নিচে ডুবে থাকে, মাত্র ১/৯ ভাগ জলের ওপরে ভেসে থাকে। তাই অনেক সময় হিমশৈলের আঘাতে জাহাজডুবি হয়। বিখ্যাত টাইটানিক জাহাজ এইভাবে হিমশৈলের আঘাতে প্রথম যাত্রায় সমুদ্রে ডুবে যায়।
৬. বার্গস্রুন্ড ও ক্রেভাস কাকে বলে ?
বার্গস্রুন্ড- পার্বত্য হিমবাহ উচ্চ উপত্যকা থেকে নেমে আসার সময় বরফাবৃত পর্বতগাত্র এবং হিমবাহের মধ্যে যে গভীর ফাটলের সৃষ্টি করে তাদের বলা হয় বার্গস্রুন্ড।এরূপ ফাটল হিমবাহের পৃষ্ঠদেশ থেকে পাদদেশ পর্যন্ত প্রসারিত হয়ে থাকে, মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে হিমরাশি পর্বতের গা ছেড়ে হিমবাহরূপে নেমে আসার সময় এই প্রকার ফাটলের সৃষ্টি হয়।
ক্রেভাস- পার্বত্য হিমবাহ যখন খাড়া ঢালের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন হিমবাহের বিভিন্ন অংশে বৈষম্যমূলক প্রবাহের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। ফলে হিমবাহের মধ্যে অসংখ্য ফাটলের সৃষ্টি হয়। এদের বলে ক্রেভাস। এই ক্রেভাস দুরকমের হয়ে থাকে। যথা - i. তির্যক বা আড়াআড়ি ক্রেভাস ii. উল্লম্ব বা সমান্তরাল ক্রেভাস
৭. ক্রেভাস বা বার্গস্রুন্ড পর্বতারোহীদের কাছে বিপদজনক কেন ?
উঃ - বার্গস্রুন্ড বা ক্রেভাস উভয়েই বরফের ওপর সৃষ্ট ফাটল।এর মধ্যে ক্রেভাস অপেক্ষা বার্গস্রুন্ড অনেক বেশি গভীর ফাটল হওয়ায় তার নীচ পর্যন্ত দেখা যায় না। বছরের অধিকাংশ সময় তুষারপাত হয়। এই ক্রেভাস এবং বার্গস্রুন্ডের মুখগুলি হালকা তুষারে ঢাকা থাকে। তাই বাইরে থেকে বোঝাই যায় না ফাটল বা গহ্বরগুলি কোথায় আছে। এজন্য অনেক পর্বতারোহী ক্রেভাস ও বার্গস্রুন্ডের অবস্থান বুঝতে না পেরে এদের ওপর দিয়েই এগোতে থাকেন। তার ফলে হিমবাহের গভীর ফাটলের মধ্যে পড়ে তাদের দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়।
৮. ডিমের ঝুড়ি ভূমিরূপ কাকে বলে ?
উঃ - ড্রামলিন - বোল্ডার ক্লে সঞ্চিত অঞ্চলে অনেকসময় বিভিন্ন আকৃতির শিলাখন্ড এমনভাবে সঞ্চিত হয় যে তাদের অনেকটা উল্টানো নৌকার মত দেখতে হয়। এরূপ ভূমিরূপকে ড্রামলিন বলে। কোন স্থানে একাধিক ড্রামলিন পাশাপাশি গঠিত হলে তাদের ডিমভর্তি ঝুড়ি -র মত মনে হয়। এজন্য ড্রামলিন অধ্যুষিত অঞ্চলকে ‘ডিমের ঝুড়ি’ ভূমিরূপ বলে।
উদাহরণ -আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডে এই ধরনের ভূমিরূপ দেখা যায়।
৯. আইস শেলফ বলতে কী বোঝো ?
উঃ - যে পুরু বরফের চাদর বা আস্তরণের একদিক ভূমিভাগের সঙ্গে সংযুক্ত এবং বাকি অংশ সমুদ্রে ভাসমান থাকে, সেই বরফের আস্তরণকে আইস শেলফ বলে। আইস শেলফ-এর সমুদ্রের দিকের প্রান্ত খুবই খাড়াই হয়।
উদাহরণ - আন্টার্কটিকার রস ও রনি আইস শেলফ।
১০. স্নাউট কী ?
উঃ - হিমবাহ যখন প্রবাহিত হয় তখন তার দুই পাশ অপেক্ষা মাঝখানের অংশ এগিয়ে যায়। কারণ, হিমবাহের মাঝখান -এর অংশ কেবল তলদেশ ঘর্ষণের জন্য বাধা পায়। অন্যদিকে, হিমবাহের দুইপাশ উপত্যকার পার্শবর্তী অংশ এবং তলদেশ উভয়ের দ্বারাই বাধাপ্রাপ্ত হয়। এজন্য হিমবাহের মাঝখানের অংশ একটু এগিয়ে যায়। একে দেখতে অনেকটা জিভের মতো মনে হয়, এদের স্নাউট বলে।
১১. নেভে, ফার্ন ও বরফ কী ?
উঃ - তুষার থেকে হিমবাহে রূপান্তরিত হওয়ার সময় তাকে কয়েকটি পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। ঘনত্ব অনুসারে তারা হল - ১. নেভে ২. ফির্ন ৩. বরফ
অতিসূক্ষ্ম ও হালকা তুষারকণা নেভে নামে পরিচিত। এর ঘনত্ব থাকে ০.০৬ থেকে ০.১৬ সেন্টিমিটার।
২. নেভে আর বরফের মাঝামাঝি অবস্থাকে ফির্ন বলে। এর ঘনত্ব হয় ০.৭২ থেকে ০.৯ সেন্টিমিটার।
৩. আর নেভের চাপে সমগ্র তুষারস্তূপ জমাট বেঁধে বরফের সৃষ্টি করে। বরফের ঘনত্ব ৩-৯ সেন্টিমিটারের বেশি হয়ে থাকে।
১২. ভার্ব কী ?
উঃ - বহিঃবিধৌত সমভূমি অংশের সূক্ষ্ম বালি হ্রদের নীচে জমা হয়। ওই সব সূক্ষ্ম বালিরাশি ভার্ব নামে পরিচিত।
বৈশিষ্ট্য : ১. ভার্বের মধ্যে গোলাকার দাগ থাকে।
২. আর ভার্বের মধ্যেকার দাগগুলি এক -একটা বছরকে চিহ্নিত করে।
১৩. নুনাটকস কাকে বলে ?
উঃ - মহাদেশীয় হিমবাহের প্রান্তভাগে বরফের স্তর তত পুরু থাকে না। ফলে অনেক সময় বরফের মধ্য হতে বরফমুক্ত পর্বতশিখর দ্বীপের ন্যায় অবস্থান করে। এরূপ বরফমুক্ত পর্বতশিখরকে এস্কিমো ভাষায় নুনাটক বলা হয়।
উদাহরণ : কুমেরু অঞ্চলে মাউন্ট তাকাহি এইরূপ এক নুনাটক।
১৪. হিমানী সম্প্রপাত কাকে বলে ?
উঃ -অনেক সময় ঢালের পার্থবেগুর ফলে চলন্ত হিমবাহের কিছু অংশ ভেঙে প্রবলবেগে নিচে এসে পড়ে। একে হিমানী সম্প্রপাত বলে। এর ফলে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায়। গ্রাম-জনপদ প্রভৃতি ধ্বংস হয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়। সাধারণত চারটি কারণে হিমানী সম্প্রপাত ঘটে। যথা -
i. মাধ্যাকর্ষণ বল
ii. ঢালের পাদদেশের ক্ষয়কার্য
iii. ভগ্ন শিলাস্তূপের অভ্যন্তরস্থ জলের চাপ এবং iv. ভূমিকম্প।
উদাহরণ : ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে দক্ষিণ আমেরিকার পেরুতে আন্দিজ পর্বত থেকে একটি ভয়ানক হিমানী সম্প্রপাত ঘটেছিল। এতে আনুমানিক ২১ লক্ষ ঘনমিটার বরফ, তুষার ও প্রস্তরখন্ডের ধস নেমেছিল। এটি আধুনিক যুগের বৃহত্তম হিমানী সম্প্রপাত।
৫. নদী উপত্যকা ও হিমবাহ উপত্যকার পার্থক্য লেখো ?
বিষয় :
উপত্যকার
অবস্থান
নদী উপত্যকা :
তুষারাবৃত অঞ্চল ছাড়া নদী উপত্যকা
ভূপৃষ্ঠের প্রায় সর্বত্রই দেখা যায়।
হিমবাহ উপত্যকা :
হিমবাহ উপত্যকা শুধু সুউচ্চ পার্বত্য
অঞ্চল ও শীতল মেরু অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ।
বিষয় :
উপত্যকার
আকৃতি
নদী উপত্যকা :
শুষ্ক বা অর্ধশুষ্ক অঞ্চলে পার্শ্বক্ষয়ের চেয়ে নিম্নক্ষয়ের মাত্রা বেশি হয় বলে ‘I’ আকৃতির এবং আদ্র বা আদ্রপ্রায় অঞ্চলে নিম্নক্ষয়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা পার্শ্বক্ষয়ও হতে থাকে বলে ‘V’ আকৃতির উপত্যকা সৃষ্টি হয়।
হিমবাহ উপত্যকা :
পার্বত্য অঞ্চলে যে উপত্যকার মধ্যে দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হয়, সেখানে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় হিমবাহ উপত্যকার তলদেশ ও পার্শ্বদেশ প্রায় সমানভাবে ক্ষয় ও মসৃণ হয় এবং এর ফলে উপত্যকার আকৃতি ইংরেজি ‘U’ অক্ষরের মতো হয়।
বিষয় : দৈর্ঘ্য
নদী উপত্যকা :
সাধারণত সুদীর্ঘ হয়।
হিমবাহ উপত্যকা : দৈর্ঘ্য বেশি হয় না।
বিষয় : বাঁক
নদী উপত্যকা : অধিকাংশ নদী উপত্যকা আঁকাবাঁকা হয়।
হিমবাহ উপত্যকা : হিমবাহ উপত্যকায় বাঁক বিশেষ থাকে না।
প্রকৃতি :
নদী উপত্যকা : নদীখাতের ঢাল, শিলাস্তরের গঠন ও নদীতে জলের পরিমানের ওপর নির্ভর করে নদী উপত্যকার প্রকৃতি।
হিমবাহ উপত্যকা : ভূমির ঢাল, হিমদ্রোনি বা হিমখাতে বরফের পরিমান ও শিলাস্তরের বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে হিমবাহ উপত্যকার প্রকৃতি।
১৫. ঝুলন্ত উপত্যকার নীচে জলপ্রপাত গড়ে ওঠে কেন ?
উঃ - গড়ে ওঠার কারণ :
1. ঝুলন্ত উপত্যকা খাড়া ঢাল সৃষ্টি করে। এই খাড়াঢালের মধ্য দিয়ে নদী প্রবাহিত হলে তা জলপ্রপাত সৃষ্টির সহায়ক হয়।
2. প্রধান হিমবাহ সুগভীর উপত্যকা সৃষ্টি করে। হিমবাহ সরে গেলে যদি তার ভিতর দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়, তাহলে তা জলপ্রপাত সৃষ্টির সহায়ক হয়।
3. ঝুলন্ত উপত্যকার মধ্য থেকে হিমবাহ খসে পড়লে তা নদী ও জলপ্রপাত সৃষ্টি করে।
উদাহরণ : উত্তর আমেরিকার ওসেমতিক নদী অববাহিকায় ভারনাল, নেভাদা প্রভৃতি ঝুলন্ত উপত্যকা মধ্যস্থিত জলপ্রপাত।
১৬. মহাদেশীয় হিমবাহ ও পার্বত্য উপত্যকা হিমবাহের পার্থক্য লেখো।
মহাদেশীয় হিমবাহ : এই হিমবাহ সুবিশাল মহাদেশ জুড়ে অবস্থান করে।
পার্বত্য উপত্যকা হিমবাহ : এটি উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে পার্বত্য উপত্যকার মধ্যে অবস্থান করে।
মহাদেশীয় হিমবাহ : আয়তনে সর্ববৃহৎ।
পার্বত্য উপত্যকা হিমবাহ : এই হিমবাহ আয়তনে তুলনামূলকভাবে ছোটো।
মহাদেশীয় হিমবাহ : হিমসোপান, নুনাটকম প্রভৃতি ভূমিরূপ সৃষ্টি করে।
পার্বত্য উপত্যকা হিমবাহ :বার্গস্রুন্ড, সিরাক, ক্রেডাস প্রভৃতি ভূমিরূপ সৃষ্টি করে।
মহাদেশীয় হিমবাহ : এই হিমবাহের গভীরতা খুব বেশি।
পার্বত্য উপত্যকা হিমবাহ : এই হিমবাহের গভীরতা তুলনামূলকভাবে কম।
মহাদেশীয় হিমবাহ : ল্যামবার্ট, রনি-ফিলচনার প্রভৃতি মহাদেশীয় হিমবাহ।
পার্বত্য উপত্যকা হিমবাহ : গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী, বলটারো প্রভৃতি পার্বত্য উপত্যকা হিমবাহ।
১৭. বার্গস্রুন্ড ও ক্রেভাস- এর মধ্যে পার্থক্য লেখো ?
ধারণা :
বার্গস্রুন্ড : হিমবাহ ও পর্বতের খাড়া ঢালের মধ্যে সৃষ্ট ফাঁক হল বার্গস্রুন্ড।
ক্রেভাস : হিমবাহের পৃষ্ঠদেশে সৃষ্ট ফাটল হল ক্রেভাস।
বিস্তৃতি :
বার্গস্রুন্ড : বার্গস্রুন্ড হিমবাহের পৃষ্ঠদেশ থেকে হিমবাহের তলদেশ পর্যন্ত প্রসারিত হয়।
ক্রেভাস : ক্রেভাস হিমবাহের গা বরাবর অবস্থান করে।
গঠন :
বার্গস্রুন্ড - বার্গস্রুন্ড উল্লম্বভাবে নখের আকারে অবস্থান করে।
ক্রেভাস- চলমান হিমবাহের সঙ্গে ক্রেভাস লম্বালম্বিভাবে বা আড়াআড়িভাবে অবস্থান করে।
সৃষ্টির কারন :
বার্গস্রুন্ড- করির মধ্যে হিমবাহের চলমান অংশ এবং মাথার দিকের পর্বতগাত্র সংলগ্ন স্থিতিশীল অংশের মধ্যে টানের পার্থক্যের জন্য এই ফাঁক বা ফাটল সৃষ্টি হয়।
ক্রেভাস- করির মধ্যে দিয়ে নামার সময় ঢালের মুখে এলে হিমবাহের পৃষ্ঠদেশে বা গায়ে টান পড়ে এবং তার ফলে ওই পৃষ্ঠদেশে চিড় বা ফাটলের সৃষ্টি হয়।
বার্গস্রুন্ডের গভীরতা অনেক বেশি।
ক্রেভাসের গভীরতা কম।
১৮. ফিয়র্ড ও ফিয়ার্ড-এর পার্থক্য লেখো।
বিষয় -ধারণা :
ফিয়র্ড : শীতপ্রধান অঞ্চলের উপকূলভাগে হিমবাহসৃষ্ট সুগভীর উপত্যকা সমুদ্রজলে ডুবে থাকলে তাকে ফিয়র্ড বলে।
ফিয়ার্ড : শীতপ্রধান অঞ্চলের উপকূলভাগে হিমবাহসৃষ্ট অগভীর উপত্যকা সমুদ্রজলে নিমজ্জিত হলে তাকে ফিয়ার্ড বলে।
বিষয় -গভীরতা
ফিয়র্ড - ফিয়র্ড খুব গভীর হয়।
ফিয়ার্ড- ফিয়ার্ডের গভীরতা কম হয়।
বিষয় -দৈর্ঘ্য
ফিয়র্ড - ফিয়র্ডের দৈর্ঘ্য বেশি হয়।
ফিয়ার্ড- ফিয়ার্ডের দৈর্ঘ্য কম হয়।
বিষয় -ঢাল
ফিয়র্ড - ফিয়র্ডের পার্শ্বদেশ খুব খাড়া হয়।
ফিয়ার্ড- ফিয়ার্ডের পার্শ্বদেশের ঢাল তুলনামূলকভাবে কম হয়।
১৯. রসে মতানে ও ড্রামলিনের পার্থক্য লেখো ?
রসে মতানে - রসে মতানে উঁচু ঢিবি সদৃশ ভূমিরূপ।
ড্রামলিন- ড্রামলিন ডিমভর্তি ঝুড়ি বা উল্টানো নৌকার মতো দেখতে হয়।
রসে মতানে - হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ।
ড্রামলিন- হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ।
রসে মতানে -রসে মতানেতে হিমবাহ প্রবাহের দিক মসৃণ ও বিপরীত দিক অমসৃণ ও অসমতল হয়।
ড্রামলিন- ড্রামলিনে হিমবাহ প্রবাহের দিক অমসৃণ ও বিপরীত দিক মসৃণ হয়।
রসে মতানে -রসে মতানে এককভাবে অবস্থান করে।
ড্রামলিন- ড্রামলিন সর্বদা ঝাঁকে ঝাঁকে অবস্থান করে।
২০. হিমরেখা সর্বদা একই উচ্চতায় থাকে না কেন ?
উঃ - হিমরেখার অবস্থান নিম্নোক্ত কারণে পরিবর্তনশীল :
1. অক্ষাংশ - উচ্চ অক্ষাংশে উষ্ণতা কমে ফলে হিমরেখার উচ্চতাও কমে।
2. উচ্চতা- উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা কমে ফলে হিমরেখার উচ্চতাও কমে।
3. ভূমির ঢাল - ভূমির ঢাল কম হলে হিমবাহের স্থায়িত্ব বাড়ে, হিমরেখার উচ্চতাও দীর্ঘদিন স্থিতিশীল থাকে।
4. সূর্যরশ্মির পতনকোণ - লম্ব সূর্যরশ্মি পতিত হলে উষ্ণতা বাড়ে ও হিমরেখার উচ্চতা বৃদ্ধি পায়।
এছাড়া , 5. ঋতুপরিবর্তন
6. বায়ুর গতিবেগ
7. স্থানীয় কারণও
এর ওপর প্রভাব ফেলে। এই কারণে নিরক্ষীয় অঞ্চলে 5500 মিটার, হিমালয় পর্বতে 4500 মিটার ও আলপ্স পর্বতে 2500 মিটার উচ্চতায় হিমরেখা অবস্থিত।
5 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর :
২. প্যাটারনস্টার হ্রদ কাকে বলে ?
উঃ - পর্বতের বিভিন্ন অংশের মধ্য দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার সময় ক্ষয়কার্যের পার্থক্য দেখা যায়। ফলে অনেক সময় হিমখাতের দুপাশে ধাপকাটা সিঁড়ির মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়। এদের হিমসিঁড়ি বা আলপ্স বলে। হিমসিঁড়ির মধ্যে অনেকসময় হিমবাহ গলা জল জমে হ্রদের সৃষ্টি হয়। এরূপ হ্রদকে প্যাটারনস্টার হ্রদ বলে।
প্রশ্নপত্র :-⅔
1. হিমরেখা কাকে বলে ?
উঃ - ভূপৃষ্ঠে যে সীমারেখার উপর সারাবছর তুষার জমে থাকে এবং যার নীচে তুষার গলে জলে পরিণত হয় তাকে হিমরেখা বলে।
বৈশিষ্ট্য -
I. হিমরেখার উচ্চতা সবসময় উষ্ণতা ও অক্ষাংশের ওপর নির্ভরশীল।
II. গ্রীষ্মকালে হিমরেখার উচ্চতা বৃদ্ধি পায় ও শীতকালে হ্রাস পায়।
III. নিম্ন অক্ষাংশ থেকে উচ্চ অক্ষাংশে হিমরেখার উচ্চতা ক্রমশ কমতে থাকে।
শ্রেণিবিভাগ -হিমরেখাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা -
i) স্থায়ী হিমরেখা - এই হিমরেখার উর্দ্ধে বরফ কখনও গলে না।
ii) অস্থায়ী হিমরেখা -ঋতুভেদে উষ্ণতার হ্রাসবৃদ্ধির জন্য হিমরেখার উচ্চতার হ্রাস বৃদ্ধি ঘটলে তাকে অস্থায়ী হিমরেখা বলে।
উদাহরণ - মেরু অঞ্চলে হিমরেখা সমুদ্রতলে অবস্থান করে এবং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে 4500-6000 মিটার উচ্চতায় অবস্থান করে।
2. পার্বত্য হিমবাহ বা উপত্যকা হিমবাহ বলতে কী বোঝ ?
উঃ - যেসব হিমবাহ সুউচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, সেইসব হিমবাহ পার্বত্য হিমবাহ বা উপত্যকা হিমবাহ নামে পরিচিত।
উদাহরণ - হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের অধিকাংশ এই শ্রেণির হিমবাহ। যেমন - কুমায়ুন -হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ, সিকিম -দার্জিলিং হিমালয়ের জেমু হিমবাহ প্রভৃতি।
3. মহাদেশীয় হিমবাহ বলতে কী বোঝ ?
উঃ - উচ্চভূমি -নিম্নভূমি নির্বিশেষে মহাদেশের বিস্তীর্ন অঞ্চল যখন বরফ ক্ষেত্র দ্বারা অথবা বরফের চাদর দ্বারা ঢাকা থাকে, তখন তাকে বলা হয় মহাদেশীয় হিমবাহ।
উদাহরণ - আন্টার্কটিকার ল্যাম্বার্ট পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশীয় হিমবাহ।
4. পাদদেশীয় হিমবাহ বলতে কী বোঝ ?
উঃ - হিমবাহ যখন পর্বতের পাদদেশে অবস্থান করে, তখন তাকে বলা হয় পর্বতের পাদদেশের হিমবাহ বা পাদদেশীয় হিমবাহ।
বৈশিষ্ট্য -i) পাদদেশীয় হিমবাহ দেখতে বদ্বীপের মতো। এই হিমবাহের অগ্রভাগ লোব নামে পরিচিত।
উদাহরণ - আলাস্কার মালাসপিনা হিমবাহ।
উপত্যকা হিমবাহের বৈশিষ্ট্য -
i) দৈর্ঘ্য কয়েক কিমি থেকে ২০০০ কিমি পর্যন্ত।
ii) গভীরতা কম
iii) গতিবেগ মহাদেশীয় হিমবাহের তুলনায় বেশি।
iv) বার্গস্রুন্ড ও ক্রেভাস দেখা যায়।
মহাদেশীয় হিমবাহের বৈশিষ্ট্য -
i) ব্যাপ্তি বিশাল এবং গভীরতা খুব বেশি
ii) গতি অত্যন্ত ধীর
iii) আকৃতি চ্যাপ্টা গম্বুজের মতো
iv) নুনাটাকস দেখা যায়।
v. এর থেকে হিমশৈলের সৃষ্টি হয়।
5. হিমশৈল বা আইসবার্গ (Iceberg) কী ?
উঃ - Iceberg একটি জাপানি শব্দ যার অর্থ হলো বরফের পাহাড় বা শৈল।
সুমেরু অঞ্চলে গ্রিনল্যান্ড এবং কুমেরু অঞ্চলে আন্টার্কটিকায় হিমরেখা সমুদ্রপৃষ্ঠে অবস্থিত হওয়ায় হিমবাহ সমুদ্রে এসে পড়ে। জলের ঊর্ধচাপে, বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোতের প্রভাবে হিমবাহের কিছু অংশ ভেঙে সমুদ্রে ভাসতে থাকে, এদের হিমশৈল বলে।
হিমশৈলের ৮৯ ভাগ জলের নীচে ডুবে থাকে মাত্র ১৯ ভাগ জলের উপরে ভেসে থাকে তাই অনেকসময় হিমশৈলের আঘাতে জাহাজডুবি হয়। বিখ্যাত টাইটনিক জাহাজ এরকম হিমশৈলের আঘাতে প্রথম যাত্রায় সমুদ্রে ডুবে যায়।
7. বোল্ডার ক্লে বা হিমকর্দ কাকে বলে ?
উঃ - পার্বত্য হিমবাহ বা উপত্যকা হিমবাহ পর্বতের পাদদেশে বা নিম্নভূমিতে সঞ্চয়কার্যের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ গড়ে তোলে এবং সেইসব ভূমিরূপকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। যেমন - হিমবাহ গলে যাওয়ার পর হিমবাহবাহিত বালি, কাদা ও পাথর একসঙ্গে সঞ্চিত হলে তাকে বোল্ডার ক্লে বা হিমকর্দ বলে।
বৈশিষ্ট্য -
i) বোল্ডার ক্লে পর্বতের পাদদেশে বা নিম্নভূমিতে গঠিত হয়।
ii) এটি হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ।
8. আইস শেলফ বলতে কী বোঝ ?
উঃ - যে পুরু বরফের চাদর বা আস্তরনের একদিক ভূমিভাগের সঙ্গে সংযুক্ত এবং বাকি অংশ সমুদ্রে ভাসমান থাকে, সেই বরফের আস্তরণকে আইস শেলফ বলে।
বৈশিষ্ট্য - i) আইস শেলফের সমুদ্র দিকের প্রান্ত খুব খাড়াই হয়।
উদাহরণ - আন্টার্কটিকায় রস ও রনি আইস শেলফ।
9. বরফ আস্তরণ বা আইস শিট কী ?
উঃ - মহাদেশীয় হিমবাহের আর এক নাম বরফ আস্তরণ বা আইস শিট
কারন - উত্তর মেরু এবং দক্ষিণ মেরুর বিস্তীর্ন অঞ্চল জুড়ে বরফের স্তূপ বা বরফক্ষেত্র আছে। যেহেতু বরফের এই স্তূপ পাত বা চাদরের মতো দুই মেরু অঞ্চল, বিশেষত উত্তর মেরুসংলগ্ন গ্রিনল্যান্ড এবং দক্ষিণ মেরুসংলগ্ন আন্টার্কটিকাকে আবৃত করে রেখেছে, তাই তাকে বরফ আস্তরণ বলা হয়ে থাকে।
10. প্যাটার্নস্টার হ্রদ কাকে বলে ?
উঃ - পর্বতের বিভিন্ন অংশের মধ্য দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ায় সময় ক্ষয়কার্যের পার্থক্য দেখা যায়। ফলে অনেক সময় হিমখাতের দুপাশে ধাপকাটা সিঁড়ির মতো অবস্থার সৃষ্টি হয় এদের হিমসিড়ি বা আল্পস বলে। হিমসিঁড়ির মধ্যে অনেক সময় হিমবাহ গলা জল জমে। ভূবিজ্ঞানী কটন 1942 খ্রিস্টাব্দে এইধরনের হ্রদগুলিকে প্যাটার্নস্টার হ্রদ বলে অভিহিত করেন।
11. স্নাউট কী ?
উঃ - হিমবাহের দুপাশ থেকে মাঝের অংশে বরফের পরিমাণ বেশি থাকে এবং মাঝে গতিবেগের পরিমাণ ও বেশি থাকে। হিমবাহের গতিপথে হিমবাহের সামনের আকৃতি দেখতে অনেকটা জিভের মতো। এরূপ অবস্থাকে স্নাউট বলে।
12. নেভে, ফার্ন ও বরফ কী ?
উঃ - তুষার থেকে হিমবাহে রূপান্তরিত হওয়ার তিনটি পর্যায় হল - যথাক্রমে নেভে, ফার্ন ও বরফ।
নেভে - উচ্চ পার্বত্য ভূমিতে বা শীতপ্রধান অঞ্চলে ব্যাপক তুষারপাত হয়। সদ্যপতিত তুষার অনেকটা হালকা পেঁজা তুলোর মতো হয়, একে বলে নেভে। এর ঘনত্ব প্রতি ঘন সেমিতে 0.16-0.6 গ্রাম।
ফার্ন - নেভের ওপর আরও তুষারপাত হলে নীচের তুষারের ঘনত্ব বেড়ে গিয়ে যে পদার্থের সৃষ্টি করে, তাকে বলে ফার্ন। ফার্নের দানাগুলির আকার 0.5-5 মিমি এবং ঘনত্ব প্রতিসেমিতে 0.4-0.9 গ্রাম হয়।
বরফ - ওপরের চাপে এই ফার্ন আরও জমাটবদ্ধ হলে তার ঘনত্ব বেড়ে প্রতি ঘন সেমিতে 0.9 গ্রামের বেশি হয়, তখন তাকে বরফ বলে। এই বরফই মাধ্যাকর্ষণের টানে ভূমির ঢাল অনুসারে নীচের দিকে নেমে হিমবাহ সৃষ্টি করে।
13. ভার্ব কী ?
উঃ - বহিঃধৌত সমভূমিতে সৃষ্ট কেটল হ্রদের তলায় স্তরে স্তরে সঞ্চিত পলিকে ভার্ব বলে।
14. নুনাটাকস কী ?
উঃ - মহাদেশীয় হিমবাহের প্রান্তভাগে বরফের স্তর তত পুরু থাকে না। ফলে অনেক সময় বরফের মধ্য হতে বরফমুক্ত পর্বতশিখর দ্বীপের ন্যায় অবস্থান করে। এরূপ বরফমুক্ত পর্বতশিখরকে এস্কিমো ভাষায় নুনাটাকস বলা হয়। কুমেরু অঞ্চলে মাউন্ট তাকাহি এইরূপ এক নুনাটাকস।
15. হিমানী সম্প্রপাত কী ?
উঃ - অনেক সময় ঢালের পার্থক্যের জন্য চলন্ত হিমবাহের কিছু অংশ ভেঙে প্রবল বেগে নীচে এসে পড়ে, একে হিমানী সম্প্রপাত বলে।
সৃষ্টির কারণ - বিভিন্ন কারনে হিমানী সম্প্রপাত ঘটতে পারে -
i) প্রবল মাধ্যাকর্ষণ বল।
ii) ঢালের পাদদেশীয় ক্ষয়কার্য।
iii) খাড়া ভূমিঢাল
iv) ভগ্ন শিলাস্তরের অভ্যন্তরে জলের চাপ।
v) ভূমিধ্বস
ফলাফল - হিমানী সম্প্রপাতের ফলে কখনো কখনো ভূমিকম্প হয়। এছাড়াও এর ফলে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায়, গ্রামজনপদ ইত্যাদি ধ্বংস হয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়।
উদাহরণ - 1962 খ্রিষ্টাব্দে দক্ষিণ আমেরিকার পেরুতে ভয়ঙ্কর হিমানী সম্প্রপাত হয়।
16) হিমবাহের শ্রেণিবিভাগ কর ?
উঃ - অবস্থানের উপর ভিত্তি করে হিমবাহ বিশারদ আলম্যান হিমবাহকে তিনটি ভাগে ভাগ করেন -
i) মহাদেশীয় হিমবাহ - উচ্চভূমি -নিম্নভূমি নির্বিশেষে মহাদেশের বিস্তীর্ন অঞ্চল যখন বরফ ক্ষেত্র দ্বারা ঢাকা থাকে, তখন তাকে বলা হয় মহাদেশীয় হিমবাহ।
উদাঃ - আন্টার্কটিকার ল্যাম্বার্ট পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশীয় হিমবাহ।
ii) পাদদেশীয় হিমবাহ - হিমবাহ যখন পর্বতের পাদদেশে অবস্থান করে, তখন তাকে বলা হয় পাদদেশীয় হিমবাহ।
বৈশিষ্ট্য - i) পাদদেশীয় হিমবাহ দেখতে বদ্বীপের মতো।
ii) এই হিমবাহের অগ্রভাগ লোব নামে পরিচিত।
উদাঃ - আলাস্কার মালাসপিনা হিমবাহ।
iii) পার্বত্য হিমবাহ - যেসব হিমবাহ সুউচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। সেইসব হিমবাহ পার্বত্য হিমবাহ নামে পরিচিত।
উদাঃ - হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলের অধিকাংশ এই শ্রেণীর হিমবাহ। যেমন - কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ, সিকিম -দার্জিলিং হিমালয়ের জেমু হিমবাহ।
17) পার্থক্য লেখো - নদী উপত্যকা ও হিমবাহ উপত্যকা।
নদী উপত্যকা | হিমবাহ উপত্যকা |
i) স্থলভাগের প্রায় সর্বত্রই নদী উপত্যকা দেখা যায়। | i) উচ্চতুষারাবৃত পার্বত্য ও মেরু অঞ্চলে হিমবাহ উপত্যকা দেখা যায়। |
ii) এই উপত্যকার আকৃতি ইংরেজি ‘v’ বা ‘I’ অক্ষরের মতো হয়। | ii) এই উপত্যকার আকৃতি ইংরেজি ‘v’ অক্ষরের মতো হয়।
|
iii) দীর্ঘ রেখাচিত্রের নদী উপত্যকা প্রথমে অমসৃণ ও পরে পর্যায়িত হয়। | iii) দীর্ঘ রেখাচিত্রের হিমদ্রোণী এবড়োখেবড়ো, সিঁড়ির মতো ধাপ যুক্ত হয়। |
iv) এই উপত্যকা বক্র বা সর্পিল হয়। | iv) এই উপত্যকা সরল -রৈখিক হয়। |
v) এই উপত্যকায় জলপ্রপাত, মন্থকূপ, নদীচর, বালুচর, দেখা যায়। | v) এই উপত্যকায় হিমসিঁড়ি, প্যাটার্নস্টার হ্রদ, রসে মতানে, ক্র্যাগ ও টেল, গ্র্যাবরেখা দেখা যায়। |
18. পার্থক্য লেখো - মহাদেশীয় হিমবাহ ও পার্বত্য উপত্যকা হিমবাহ।
মহাদেশীয় হিমবাহ | পার্বত্য উপত্যকা হিমবাহ |
i) এই হিমবাহ সুবিশাল মহাদেশ জুড়ে অবস্থান করে। | i) এটি উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে পার্বত্য উপত্যকার মধ্যে অবস্থান করে। |
ii)মহাদেশীয় হিমবাহ আয়তনে সর্ববৃহৎ। | ii) এই হিমবাহ আয়তনে তুলনামূলকভাবে ছোটো। |
iii)হিমসোপান, নুনাটাকস প্রভৃতি ভূমিরূপ সৃষ্টি করে। | iii) বার্গস্রুন্ড, সিরাক, ক্রেভাস প্রভৃতি ভূমিরূপ সৃষ্টি করে। |
iv) এই হিমবাহের গভীরতা খুব বেশি। | iv)এই হিমবাহের গভীরতা তুলনামূলকভাবে কম। |
v) ল্যাম্বার্ট, রনি, ফিলচনার প্রভৃতি মহাদেশীয় হিমবাহ। | v) গঙ্গোত্রী, যমুনেত্রী, বলটারো প্রভৃতি পার্বত্য উপত্যকা হিমবাহ। |
19. বার্গস্রুন্ড ও ক্রেভাস কী ?
উঃ - বার্গস্রুন্ড - উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল থেকে উপত্যকার মধ্য দিয়ে হিমবাহ নামার সময় হিমবাহ ও পর্বত গাত্রের মধ্যে যে ফাঁক দেখা যায়, তাকে বার্গস্রুন্ড বলে। এই ফাঁক বা ফাটল হিমবাহের পৃষ্ঠদেশ থেকে তলদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত।
ক্রেভাস- হিমবাহের ওপর সমান্তরাল ও আড়াআড়ি ফাটল একসাথে অবস্থান করলে তাকে ক্রেভাস বলে। অসম ঢালবিশিষ্ট উপত্যকার মধ্য দিয়ে বৈষম্যমূলক প্রবাহের জন্য এই ক্রেভাস সৃষ্টি হয়।
20. পার্থক্য লেখো - বার্গস্রুন্ড ও ক্রেভাস।
বার্গস্রুন্ড | ক্রেভাস |
i) হিমবাহ ও পর্বতের খাড়া ঢালের মধ্যে সৃষ্ট ফাঁক হলো বার্গস্রুন্ড। | i) হিমবাহের পৃষ্ঠদেশে সৃষ্ট ফাটল হলো ক্রেভাস। |
ii) বার্গস্রুন্ড হিমবাহের পৃষ্ঠদেশ থেকে হিমবাহের তলদেশ পর্যন্ত প্রসারিত হয়। | ii) ক্রেভাস হিমবাহের গা বরাবর অবস্থান করে। |
iii) বার্গস্রুন্ড উল্লম্বভাবে নখের আকারে অবস্থান করে। | iii) চলমান হিমবাহের সঙ্গে ক্রেভাস লম্বালম্বিভাবে বা আড়াআড়িভাবে অবস্থান করে। |
iv) করির মধ্যে হিমবাহের চলমান অংশ এবং মাথার দিকের পর্বত সংলগ্ন স্থিতিশীল অংশের মধ্যে টানের পার্থক্যর জন্য এই ফাঁক বা ফাটল সৃষ্টি হয়। | iv) করির মধ্য দিয়ে নামার সময় ঢালের মুখে এলে হিমবাহের পৃষ্ঠদেশ বা গায়ে টান পড়ে এবং তার ফলে ওই পৃষ্ঠদেশে চিড় বা ফাটলের সৃষ্টি হয়। |
v) বার্গস্রুন্ড গভীরতা অনেক বেশি। | v) ক্রেভাসের গভীরতা কম। |
21. পার্থক্য লেখো - ফিয়র্ড ও ফিয়ার্ড।
ফিয়র্ড | ফিয়ার্ড |
i) শীতপ্রধান অঞ্চলের উপকূল ভাগে হিমবাহসৃষ্ট সুগভীর উপত্যকা সমুদ্রজলে ডুবে থাকলে তাকে ফিয়র্ড বলে। | i) শীতপ্রধান অঞ্চলের উপকূলভাগে হিমবাহসৃষ্ট অগভীর উপত্যকা সমুদ্রজলে নিমজ্জিত হলে তাকে ফিয়ার্ড বলে। |
ii) ফিয়র্ড খুব গভীর হয়। | ii) ফিয়ার্ডের গভীরতা কম হয়। |
iii) ফিয়র্ডের দৈর্ঘ্য বেশি হয়। | iii) ফিয়ার্ডের দৈর্ঘ্য কম হয়। |
iv) ফিয়র্ডের পার্শ্বদেশ খুব খাড়া হয়। | iv) ফিয়ার্ডের পার্শ্বদেশের ঢাল তুলনামূলকভাবে কম হয়। |
22. পার্থক্য লেখো - রসেমতানে ও ড্রামলিন।
রসেমতানে | ড্রামলিন |
i) হিমবাহের ক্ষয়কার্যের মাধ্যমে সৃষ্ট উঁচু ঢিবির মতো দেখতে শিলাস্তূপ রসেমতানে নামে পরিচিত। | i)হিমবাহ ও জলধারার মিলিত সঞ্চয়কার্যের মাধ্যমে সৃষ্ট স্বল্পচ্চ ঢিবি বা টিলার মতো দেখতে ভূমিরূপ ড্রামলিন নামে পরিচিত। |
ii) উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে দেখা যায়। | ii) পর্বতের পাদদেশে বহিঃধৌত সমভূমিতে বা তার কাছাকাছি দেখা যায়। |
iii) রসেমতানের হিমবাহ প্রবাহের দিক মসৃণ ও ঢালু এবং বিপরীত দিক অমসৃণ ও খাড়াই হয়। | iii) ড্রামলিনের হিমবাহ প্রবাহের দিক অমসৃণ ও খাড়াই এবং বিপরীত দিক ঢালু হয়। |
23. পৃথিবীর বৃহত্তম সুপেয় জলের সঞ্চয় হিসেবে হিমবাহের গুরুত্ব লেখো।
উঃ - পৃথিবীর বৃহত্তম সুপেয় জলের সঞ্চয় হিসেবে হিমবাহ : USGS (United states Geological Survey) অনুসারে পৃথিবীর মোট জলের মাত্র 2.5 % হল মিষ্টি জল আর এই জলের 1.7% অর্থাৎ মোট মিষ্টি জলের 68.7% রয়েছে হিমবাহ ও বরফরূপে। এই হিমবাহ ও বরফ গলে নদীর সৃষ্টি হয় এবং নদীগুলি চিরপ্রবাহী হয়। এই জলই আমারা দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করি। ভারতের গঙ্গা, যমুনা, সিন্ধু ইত্যাদি হিমবাহগলা জলে পুষ্ট নদী। বিশেষজ্ঞদের ধারণা জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারনে আগামী দিনে পৃথিবীর যে সমস্যাটি সবচেয়ে ভয়াবহ আকার নেবে তা হলো পানীয় জলের সমস্যা। ভবিষ্যতে এই সমস্যা হয়তো অনেকটা মেটাতে পারে হিমবাহ।
24) সিরাক কী ?
উঃ - সিরাক - হিমবাহ ভেঙে গিয়ে তুষারপাতের সময় অনেকক্ষেত্রে হিমবাহের মধ্যে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়। এই খাদের পাশে হিমবাহের অবশিষ্ট বরফ জমা হয়ে চূড়ার মত অবস্থান করে। এইরূপ চূড়াকে সিরাক বলে।
হিমবাহের কাজ
১ নম্বরের প্রশ্ন-উত্তর :-
1.পৃথিবীর বৃহত্তম পাদদেশীয় হিমবাহের নাম লেখ ?
উঃ -পৃথিবীর বৃহত্তম পাদদেশীয় হিমবাহ হল আলাস্কার মালাসপিনা হিমবাহ।
2.পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশীয় হিমবাহের নাম লেখ ?
উঃ -পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশীয় হিমবাহ হল আন্টার্কটিকার ল্যাম্বার্ট হিমবাহ।
3.পৃথিবীর বৃহত্তম পার্বত্য হিমবাহের নাম লেখ ?
উঃ -পৃথিবীর বৃহত্তম পার্বত্য হিমবাহ হল আলাস্কার হুবার্ড হিমবাহ।
4.পৃথিবীর দ্রুততম হিমবাহের নাম লেখ ?
উঃ -পৃথিবীর দ্রুততম হিমবাহ হল গ্রিনল্যান্ডের জেকবস্ভ্যান।
5.ভারতের বৃহত্তম হিমবাহের নাম লেখ ?
উঃ -ভারতের বৃহত্তম হিমবাহ হল সিয়াচেন।
6.ভারতের কোথায় রসে মতানে ভূমিরূপ দেখা যায় ?
উঃ -কাশ্মীরের লিডারের উপত্যকায় রসে মতানে ভূমিরূপ দেখা যায়।
7.স্ক্যান্ডিনোভিয়ার ভাষায় সার্ক কী নামে পরিচিত ?
উঃ -স্ক্যান্ডিনোভিয়ার ভাষায় সার্ক কিদেল ও বোটন নামে পরিচিত।
8.টার্ন কী ?
উঃ -সার্ক থেকে হিমবাহ সরে গেলে এর বেসিনে অবশিষ্ট বরফ গলে গিয়ে যে হ্রদ সৃষ্টি হয়, তাকে করি হ্রদ বা টার্ন বলে।
9.পৃথিবীর বৃহত্তম ও গভীরতম সার্ক কোনটি ?
উঃ -পৃথিবীর বৃহত্তম ও গভীরতম সার্ক হল অ্য়ান্টাকটিকার ওয়ালকট সার্ক।
10.পৃথিবীর গভীরতম ফিয়র্ড কোনটি ?
উঃ -পৃথিবীর গভীরতম ফিয়র্ড হল নরওয়ের সোজনে ফিয়র্ড।
11.পৃথিবীর দীর্ঘতম ফিয়র্ড কোনটি ?
উঃ -পৃথিবীর দীর্ঘতম ফিয়র্ড হল গ্রিনল্যান্ডের স্কোর শবি সুন্ড ফিয়র্ড।
12.ভ্যালিট্রেন কী ?
উঃ -বহিঃবিধৌত সমভূমি নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন হলে তাকে ভ্যালিট্রেন বলে।
13.ভারতের কয়েকটি হিমবাহের নাম লেখ ?
উঃ -ভারতের কয়েকটি হিমবাহ হল -সিয়াচেন, বলটারো, হিসপার হিমবাহ।
14.র্্য়ান্তক্ল্যাফট কী ?
উঃ -হিমবাহ পর্বতগাত্র বেয়ে নামার সময় পর্বত গাত্রের সাথে হিমবাহের ঘর্ষণে সৃষ্ট তাপে পর্বতগাত্র ও হিমবাহের মধ্যে সৃষ্ট ফাঁককে র্্য়ান্তক্ল্যাফট বলে।
15.পৃথিবীর বৃহত্তম পিরামিড চূড়া কোনটি ?
উঃ -পৃথিবীর বৃহত্তম পিরামিড চূড়া হল -সুইজারল্যান্ডের আল্পসের ম্যাটারহর্ন।
16.ভারতের একটি পিরামিড চূড়ার উদাহরণ দাও ?
উঃ -ভারতের একটি পিরামিড চূড়া হল কারাকোরাম পিরামিড চূড়া।
17.কাকে ফিয়র্ডের দেশ বলা হয় ?
উঃ -নরওয়েকে ফিয়র্ডের দেশ বলা হয়।
18.ভারতের একটি ঝুলন্ত উপত্যকার নাম লেখ ?
উঃ -ভারতের একটি ঝুলন্ত উপত্যকার নাম হল -বদ্রীনাথের ঋষি গঙ্গা উপত্যকা।
19.ভার্ব কী ?
উঃ -কেটল হ্রদে সঞ্চিত পলিকে ভার্ব বলে।
20.বোল্ডার ক্লে বা টিলা কী ?
উঃ -হিমবাহ দ্বারা সঞ্চিত বিশাল আকৃতির প্রস্তরখন্ডকে আগামুক বলে। এবং বালি, কাদা ,প্রস্তরখন্ডের একত্র সঞ্চয়কে বোল্ডার ক্লে বলে।
5 নম্বরের প্রশ্ন-উত্তর :-
1.হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির চিত্রসহ বর্ণনা দাও।
উঃ -ভুপৃষ্ঠের ঢাল ধলে মাধ্যাকর্ষণের টানে অতি ধীর গতি সম্পন্ন পুরু বরফের স্তরকে হিমবাহ বলে।
হিমবাহকে বরফের নদীও বলা হয়। হিমবাহ অধ্যুষিত উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি নিয়ে আলোচনা করা হল।
(i) সার্ক বা করি : হিমবাহ ও তার সঙ্গে বাহিত শিলাখণ্ডের ঘর্ষনে হিমবাহ উপত্যকা একদিকে ক্ষয় পেয়ে খুব খাঁড়া হয় এবং মধ্যবর্তী অংশ গর্তের মতো গভীর হয়ে অনেকটা হাতল ছাড়া ডেক চেয়ারের মতো দেখতে হয়, এবং স্কটল্যান্ডের ভাষায় করি, ওয়েলস এর ভাষায় কুম, ফরাসি ভাষায় সার্ক, স্ক্যান্ডিনোভিয়ান ভাষায় বোটন ও কিদেল বলে।
বরফযুক্ত সার্কের তিনটি অংশ থাকে। -(ক)খাঁড়া মস্তক প্রাচীর (খ)বেসিন (গ)চৌকাঠ
করির মধ্যে অনেকসময় হিমবাহ গলা জল জমে করি হ্রদ গঠিত হয়, েকে টার্ন বলে।
উদাহরণ :আন্টার্কটিকার ওয়ালকোট সার্ক পৃথিবীর বৃহত্তম ও গভীরতম সার্ক।
(ii) এরেট বা হিমশিরা : দুটি করি পাশাপাশি গঠিত হলে, তাদের মধ্যবর্তী খাঁড়া পর্বত প্রাচীরটি ক্ষয়প্রাপ্ত ও সংকীর্ণ হয়ে শিরার আকারে অবস্থান করে, একে হিমশিরা বলে।
উদাহরণ -আন্টার্কটিকায় এরকম বহু এরেট বা হিমশিরা দেখা যায়।
(iii) পিরামিড চূড়া : কোনো পর্বতশৃঙ্গের চারিদিকে তিন চারটি করি পাশাপাশি অবস্থান করলে ক্ষয়ের ফলে ওই পর্বতশৃঙ্গকে অনেকটা পিরামিডের মতো দেখায়। একে পিরামিড চূড়া বলে।
আলপ্স পর্বতে এরকম পিরামিড চূড়াকে হর্ন বলে।
উদাহরণ -আল্পসের ম্যাটারহর্ন, হিমালয়ের নিলকন্ঠ প্রভৃতি পিরামিড চূড়ার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
(iv) ঝুলন্ত উপত্যকা : অনেকসময় প্রধান হিমবাহের উপত্যকার সাথে দুদিক থেকে বহু উপহিমবাহ এসে উপনদীর মতো মিলিত হয়, মূল হিমবাহের ক্ষয় ক্ষমতা বেশি হওয়ায় এই উপত্যকা বেশি গভীর হয়। অন্যদিকে উপহিমবাহের উপত্যকার গভীরতা মূল উপত্যকার চেয়ে অনেক কম। ফলে উপহিমবাহ উপত্যকা অনেকটা উঁচুতে অবস্থান করে। হিমবাহ অপসারিত হলে এই অগভীর খাতগুলিকে দেখে মনে হয়, যে এগুলি মূল হিমবাহ খাতে দুধারে ঝুলন্ত অবস্থায় আছে। একে ঝুলন্ত উপত্যকা বলে।
হিমবাহ গলে গেলে এইসব অগভীর খাত দিয়ে প্রবাহিত উপনদীগুলি জলপ্রপাত সৃষ্টি করে।
উদাহরণ -রোটাহ গিরিপথের কাছে এরূপ ঝুলন্ত উপত্যকা দেখা যায়।
(v) হিমদ্রোণী বা U আকৃতির উপত্যকা : পার্বত্য অঞ্চলে নদী উপত্যকা ধরে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার সময় একইসঙ্গে পার্শ্বক্ষয় এবং নিম্নক্ষয় করতে থাকে। ফলে উপত্যকাটি চওড়া হয়ে U আকৃতিবিশিষ্ট উপত্যকায় পরিণত হয়। উপত্যকার তলদেশ খুব চওড়া ও গভীর এবং পার্শ্বদেশ খুব খাঁড়া ও মসৃণ হয়। একে হিমদ্রোণী বলে।
উদাহরণ -হিমালয়ের রূপকুন্ড।
(vi) হিমসিঁড়ি : পর্বতের বিভিন্ন অংশের মধ্যে দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার সময় ক্ষয়কার্যের পার্থক্য দেখা যায়। ফলে অনেক সময়ে হিমঘাতের দুপাশ ধাপকাটা সিঁড়ির মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়। একে হিমসিঁড়ি বলে।
হিমসিঁড়ির তিনটি অংশ। যথা -(i)রাইজার , (ii)রিগেল (iii)ট্রেড
হিমসিঁড়ির মধ্যে অনেক সময় হিমবাহ গলা জমে হ্রদের সৃষ্টি হয়। এরূপ হ্রদকে প্যাটানন ষ্টার হ্রদ বলা হয়।
(vii) রসেমোতানে : হিমবাহের প্রবাহপথে কোনো কঠিন শিলা ঢিবির আকারে অবস্থান করলে হিমবাহের প্রবাহের দিকের শিলাখণ্ড অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে মসৃণ হয় এবং শিলাখণ্ডের বিপরীত দিকটি উৎপাটন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে অসমতল ও ফাটলযুক্ত অবস্থায় অবস্থান করে। এইরূপ ঢিবিকে রসেমোতানে বলে।
উদাহরণ -কাশ্মীরের ঝিলাম নদীর উপনদী লিডার উপত্যকায় রসেমোতানে দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য :-(i) রসেমোতানে একটি মাত্র শিলার উপর গঠিত হয়।
(ii) রসেমোতানের মসৃণ ঢালকে স্টস এবং অমসৃণ খাঁড়া ঢালকে লি বলে।
(iii) এই ভূমির উচ্চতা বেশি হয় কিন্তু দৈর্ঘ্য ও বিস্তৃতি কম হয়।
(viii) ক্র্যাগ এন্ড টেল : হিমবাহের গতিপথে কোনো কঠিন শিলাখণ্ডের পিছনে নরম শিলা থাকলে কঠিন শিলা পিছনের নরম শিলাকে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের হাত থেকে রক্ষা করে। এর ফলে কঠিন শিলা উঁচু ঢিবির মতো অবস্থান করে, একে ক্র্যাগ বলে। এর পিছনে অবস্থিত নরম শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত না হওয়ায় সরু লেজের মতো পাশের অঞ্চল থেকে উঁচু হয়ে অবস্থান করে, একে টেল বলে।
উদাহরণ -স্কটল্যান্ডের এডিন বোড়ায় একটি সুবৃহৎ ক্র্যাগ ও টেল আছে।
বৈশিষ্ট্য :-(i)ক্র্যাগ ও টেলের মধ্যে ক্র্যাগ অমসৃণ ও টেল মসৃণ হয়।
(ii) টেল 2Km পর্যন্ত দীর্ঘ হয়ে থাকে।
(ix) আবর্তরেখা : পার্বত্য অঞ্চলে নরম শিলাখণ্ডের মধ্যে দিয়ে হিমবাহ পপ্রবাহিত হওয়ার সময় অনেকক্ষেত্রে হিমঘাতের মধ্যে সুদীর্ঘ এবং সুগভীর গর্তের সৃষ্টি হয়, এরূপ গর্তকে আবর্তরেখা বলে।
উদাহরণ -কানাডার ম্যাকেনঞ্জি উপত্যকায় আবর্তরেখা দেখা যায়।
(x) কুঁজ বা হোয়েলব্যাক :পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়ের ফলে অনেকসময় দুধার মসৃণ অথচ খাঁড়া ঢালবিশিষ্ট ভূমির সৃষ্টি হয়, এদের কুঁজ বা হোয়েলব্যাক বলে।
উদাহরণ -স্কটল্যান্ডের জুরাসাউন্ড অঞ্চলে কুঁজ দেখা যায়।
(xi) ফিয়র্ড ও ফিয়ার্ড : উচ্চ অক্ষাংশে সমুদ্র উপকূল সংলগ্ন পার্বত্য ভূমিতে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট হওয়া আংশিক জলমগ্ন হিমবাহ উপত্যকাকে ফিয়র্ড বলে এবং ফিয়র্ড অপেক্ষাকৃত ছোটো এবং কম গভীর হলে তাকে ফিয়ার্ড বলে।
উদাহরণ -নরওয়ের সজনে বা সোভনে পৃথিবীর গভীরতা ও গ্রীনল্যান্ডের স্কোসোভি পৃথিবীর দীর্ঘতম ফিয়র্ড।
2. হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির চিত্রসহ বর্ণনা দাও।
উঃ -হিমবাহ চলার সময় ভূমির ঢালের পার্থক্য ঘটলে উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে কিছু কিছু সঞ্চয় করে। তবে হিমবাহের সঞ্চয়কাজ স্পষ্টভাবে লক্ষ করা যায় হিমবাহের প্রান্তদেশে। যেখানে হিমবাহ গলতে থাকে এবং হিমবাহের পশ্চাৎ অপসারণ ঘটে। হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলির নিম্নে আলোচনা করা হল -
(i) গ্রাবরেখা বা মরেন : হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার সময় বিভিন্ন ক্ষয়প্রাপ্ত নুড়ি, কাঁকড়, বালি প্রভৃতি হিমবাহের সঙ্গে বয়ে চলে। এইসব শিলাখণ্ডের কিছু অংশ হিমবাহের দুপাশে, সামনে ও তলদেশে সঞ্চিত হয়। সঞ্চিত এইসব শিলাখন্ডকে গ্রাবরেখা বা মরেন বলে।
অবস্থানের পার্থক্য অনুসারে বিভিন্ন প্রকার গ্রাবরেখা দেখতে পাওয়া যায় -
(ক) পার্শ্বগ্রাবরেখা :- হিমবাহের প্রবাহপথের দুপাশে হিমবাহের সাথে বাহিত পদার্থসমূহ সঞ্চিত হলে, তাকে পার্শ্ব গ্রাবরেখা বলে।
(খ ) প্রান্ত গ্রাবরেখা :- হিমবাহের প্রবাহপথের শেষপ্রান্তে হিমবাহ বাহিত পদার্থ সঞ্চিত হলে, তাকে প্রান্ত গ্রাবরেখা বলে।
(গ) মধ্য গ্রাবরেখা :- দুটি হিমবাহ পাশাপাশি মিলিত হলে, মাঝখানে সৃষ্টি হয়, মধ্য গ্রাবরেখা।
(ঘ ) ভূমি গ্রাবরেখা :- হিমবাহের তলদেশে গ্রাবরেখা সঞ্চিত হলে, তাকে ভূমি গ্রাবরেখা বলে।
আকৃতি ও প্রকৃতি অনুসারে গ্রাবরেখা চার ভাগে বিভক্ত যথা -
(ক) অবিন্যাস্ত গ্রাবরেখা :- হিমবাহের সামনে ইতস্তত বা বিক্ষিপ্তভাবে গ্রাবরেখা গড়ে উঠলে, তাকে অবিন্যাস্ত গ্রাবরেখা বলে।
(খ ) বলয়ধর্মী গ্রাবরেখা :- গ্রাবরেখা বলয় আকারে সৃষ্টি হলে, তাকে বলয়ধর্মী গ্রাবরেখা বলে।
(গ) রোজেন গ্রাবরেখা :- একটির ওপর অপর একটি গ্রাবরেখা থাকলে রোজেন গ্রাবরেখার সৃষ্টি হয়।
(ঘ ) স্তরায়িত গ্রাবরেখা :- হিমবাহ দ্বারা বাহিত পদার্থ সমুদ্র তলদেশে সঞ্চিত হলে, স্তরায়িত গ্রাবরেখার সৃষ্টি হয়।
উদাহরণ (গ্রাবরেখা ):-পূর্ব হিমালয়ে জেমু হিমবাহের শেষপ্রান্তে তিস্তা নদীর উচ্চ অববাহিকায় বিভিন্ন গ্রাবরেখা আছে।
( ii) ড্রামলিন : হিমবাহ বাহিত বালি, কাঁকড়, পাথরখন্ড, নুড়ি, কাদা একত্রে এমনভাবে সারিবদ্ধ টিলার আকারে সঞ্চিত হয় যে সেগুলিকে দেখতে অনেকটা উল্টানো নৌকা বা চামচের মতো লম্বাটে উপবৃত্তাকার হয়, এরকম ভূমিরূপকে ড্রামলিন বলে।
বৈশিষ্ট্য -(i)ড্রামলিনের উচ্চতা 6-60 মিটার পর্যন্ত হয় এবং দৈর্ঘ্য 2-3 মিটার পর্যন্ত হয়।
(ii)ড্রামলিনের পাদদেশ মসৃণ ও ডিম্বাকৃতি হয়।
(iii)ড্রামলিন অংশে হিমবাহ প্রবাহের দিক অমসৃণ এবং উল্টোদিক মসৃণ হয়।
(iv)অসংখ্য ড্রামলিন একসঙ্গে থাকলে ডিমের ঝুড়ির মতো দেখতে লাগে। তাই একে ‘ডিমের ঝুড়ি’ ভূমিরূপ বলে।
উদাহরণ -আমেরিকার উত্তর অঞ্চল, উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রভৃতি স্থানে ড্রামলিন দেখা যায়।
(iii) আগামুক বা ইরাটিক : হিমবাহ বাহিত বিভিন্ন আকৃতি শিলাখন্ড বিস্তীর্ন অঞ্চল জুড়ে একত্রে সঞ্চিত হয়। এদের মধ্যে বড়ো আকৃতির শিলাখন্ডকে আগামুক বলে। এই ধরণের সঞ্চিত শিলার সঙ্গে স্থানীয় শিলার কোনো সাদৃশ্য দেখা যায় না।
উদাহরণ -কাশ্মীরের পহেলগাম অঞ্চলে এই ধরণের আগামুক দেখা যায়।
(iv) এসকার : হিমবাহ বাহিত বিভিন্ন শিলাখন্ড নুড়ি,কাঁকড়, বালি প্রভৃতি জমে অনেকসময় আঁকাবাঁকা শৈলশিরার মতো ভূমিরূপ গঠন করে, একে এসকার বলে।
উদাহরণ -ফিনল্যান্ডের পুনকাহারয়ু এসকার এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
বৈশিষ্ট্য :-(i)এসকার গুলির উচ্চতা প্রায় 3-5 মিটার হয়।
(ii)এগুলি আঁকাবাঁকা ও সংকীর্ণ হয় এবং দৈর্ঘ্য কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত হয়।
(v) বৈহিঃধৌত সমভূমি বা আউট ওয়াস প্লেন : হিমবাহের সঙ্গে এবং প্রান্ত গ্রাবরেখা শেষ প্রান্তে যেখানে হিমবাহ গলে নদীর সৃষ্টি হয় সেইস্থানে হিমবাহ বাহিত বিভিন্ন পদার্থ সঞ্চিত হয়ে বিস্তীর্ন সমভূমি গঠন করে। এই ধরণের সমভূমিকে বৈহিঃধৌত সমভূমি বলে।
উদাহরণ -উত্তর আমেরিকার কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বৃহৎ হ্রদ অঞ্চলে বৈহিঃধৌত সমভূমি দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য :-(i)বহিঃধৌত সমভূমি হিমবাহ ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ।
(ii)বহিঃধৌত সমভূমিতে অনেকসময় কোনো গর্তে হিমবাহ গলা জল জমে হ্রদের সৃষ্টি হয়। এগুলি গরুর খুঁড়ের আকৃতির হওয়ায় এদের গোখুরাকৃতি হ্রদ বলে।
(vi) ভ্যালিট্রেন : আউট ওয়াস সমভূমি যখন নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়, তখন তাকে ভ্যালিট্রেন বলে।
(vii) কেম : হিমবাহের শেষপ্রান্তে যদি কোনো জলাভূমি বা হ্রদ থাকে, তাহলে তার মধ্যে হিমবাহ বাহিত কাঁকড়, পাথর, নুড়ি, কাদা প্রভৃতি স্তূপ আকারে সঞ্চিত হয়ে ত্রিকোণ আকার বদ্বীপের মতো ভূমিরূপ গড়ে ওঠে, এই ভূমিরূপকে বলা হয় কেম।
উদাহরণ -ব্রিটিশ দ্বীপুঞ্জের নরফেকের গ্ল্যাভেন উপত্যকায় কেম ও কেমমঞ্চ দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য-(i)হিমবাহ ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে এইরূপ ভূমিরূপ গড়ে ওঠে।
(ii)হিমবাহ উপত্যকার দুইপাশে কেম সৃষ্টি হলে, তাকে কেমমঞ্চ বলে।
(viii) কেটল : কোনো কোনো সময় বহিঃধৌত সমভূমিতে বিরাট বিরাট বরফের চাঁই নানা ধরণের অবক্ষেপের মধ্যে চাপা পড়ে থাকে যখন ওই বরফ গেলে যায়, তখন সেখানে বেশ বড়ো বড়ো গর্তের সৃষ্টি হয়। এই গর্তগুলি কেটল নামে পরিচিত।
পরবর্তীকালে ওইসব গর্তে হিমবাহ গলা জল জমে যে হ্রদের সৃষ্টি হয়, তাকে কেটল হ্রদ বলে।
উদাহরণ -স্কটল্যান্ডের উত্তরে ওকোনি দ্বীপে কেটল এবং কেটল হ্রদ রয়েছে।
(ix) নব : হিমবাহ বাহিত নুড়ি, কাঁকড়, পাথর প্রভৃতি হিমবাহ গলা জলধারার মাধ্যমে বহিঃধৌত সমভূমির ওপর ছোটো ছোটো টিলার আকারে সঞ্চিত হলে, সেই টিলাগুলিকে নব বলে।
উদাহরণ -আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের হ্রদ অঞ্চলে বহু নব আছে।
To get the premium content