- SCHOOL BOARDS
- WBBSE/WBCHSE
- CLASS 10
- GEOGRAPHY
- 1.4 : বায়ুর কাজ (ক্ষয়, অপসারণ ও সঞ্চয় ) দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ
- CHAPTER 1 BAYUR KAJ বায়ুর কাজ (বহির্জাত প্ৰক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ)
CHAPTER 1 BAYUR KAJ বায়ুর কাজ (বহির্জাত প্ৰক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ)
Language : Bengali
CHAPTER 1 বায়ুর কাজ
SAQ MARKS 2
1. পৃথিবীর মরু ও উপকূল অঞ্চলের বায়ুর প্রাধান্যের কারণগুলি :
পৃথিবীর মরু অঞ্চলে বায়ুর কাজের প্রাধান্যের কারণ গুলি হলো -
(i) বাধাহীন বায়ুপ্রবাহ : উন্মুক্ত সমুদ্র উপকূলে ও মরুভূমিতে বায়ু অবাধে বায়ু বাহিত পদার্থগুলিকে অনেকদূরে টেনে নিয়ে যায়।
(ii) উষ্ণ ও শুষ্ক বায়ুর উপস্থিতি : মরু অঞ্চলে বায়ুর আদ্রতা কম থাকার ফলে সেটি অত্যন্ত উষ্ণ হয়ে ওঠে এতে উপরিস্তরের বালিরাশি শুষ্ক ও হালকা হয়ে বহু দূরে উড়ে যায়।
(iii) ঝোড়ো বাতাসের প্রাধান্য : ঝোড়ো বাতাসের জোড় বেশি এতে বায়ু বাহিত বালিকণার আঘাতে যেমন শিলার ক্ষয় হয় তেমনি ক্ষয়িত পদার্থ বহুদূরে উড়ে ভূমিরূপ গঠন করে।
(iv) উদ্ভিদের স্বল্পতা : মরু অঞ্চলে গাছপালা বিশেষ না থাকায় ভূমি সবসময় অনাবৃত থাকে। ফলে বায়ু বাধাহীনভাবে প্রবল বেগে বইতে পারে।
(v) স্বল্প বৃষ্টিপাত : মরু অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই স্বল্প এবং বৃষ্টিপাতের তুলনায় বাষ্পীভবনের পরিমাণ বেশি হয়। তাই এই অঞ্চলে বায়ুর কাজের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়।
(vi) দিন ও রাত্রির উষ্ণতার পার্থক্য : মরু অঞ্চলে দিন ও রাত্রির উষ্ণতার পার্থক্য বা উষ্ণতার প্রসর অনেক বেশি ফলে এই অঞ্চলে যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। আবহবিকারের কারণে শিলা ভঙ্গুর হয় এবং বায়ুর দ্বারা বিভিন্ন ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়।
২. ইয়ারদাং ও জুগেন-র পার্থক্য -
ইয়ারদাং | জুগেন |
(i) ইয়ারদাং -এ পর্যায়ক্রমে কঠিন ও কোমল শিলাস্তর উল্লম্বভাবে অবস্থান করে। | (i) জুগেন-এ পর্যায়ক্রমে কঠিন ও কোমল শিলাস্তর অনুভুমিকভাবে অবস্থান করে। |
(ii) ইয়ারদাং রৈখিক খাড়া দেওয়াল যুক্ত মোরগের ঝুঁটির আকৃতি বিশিষ্ট হয়। | (ii) জুইগেন সমতল চূড়া বিশিষ্ট সারিবদ্ধ শিলাস্তম্ভ। |
(iii) জুইগেন অপেক্ষা ইয়ারদাং-এর উচ্চতা কম হয়। | (iii) ইয়ারদাং অপেক্ষা জুইগেনের উচ্চতা বেশি হয়। |
(iv) প্রধানত বায়ুর কার্যের ফলে সৃষ্টি হয়। | (iv) বায়ুর কার্যের ফলে সৃষ্টি হলেও উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতের প্রভাব থাকে। |
(v) ইয়ারদাং 6-7 মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। | (v) জুইগেন 42 থেকে 40 মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। |
(vi) ইয়ারদাং-এর বিস্তার বেশি প্রায় 70-400 মিটার পর্যন্ত হয়। | (vi) ইয়ারদাং অপেক্ষা জুইগেন -এর বিস্তার কম হয়। |
(vii) তুর্কিস্থান, ইরানের মরুভূমিতে ইয়ারদাং লক্ষ্য করা যায়। | (vii) কালাহারি এবং অস্ট্রেলিয়ার মরুভূমিতে জুইগেন লক্ষ্য করা যায়। |
4. আর্গ কাকে বলে ?
পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রকারের মরুভুমি দেখতে পাওয়া যায়। যেমন - শিলাময়, বালিময় ইত্যাদি। এর মধ্যে বিস্তীর্ন বালুকাময় মরুভূমিকে সাহারায় আর্গ বলে। এশিয়ায় এরই নাম কুম।
উদাহরণ - সৌদি আরবের রাব -আল -খালি একটি সুবিশাল আর্গ।
5. হামাদা কাকে বলে ?
শিলাদ্বারা গঠিত মরুভূমিকে হামাদা বলে। সাধারণত কোনো মরুভূমিতে বায়ুর অপসারণ প্রক্রিয়ায় বালিকণা প্রায় সম্পূর্ণরূপে অপসারিত হলে সেখানে একটি শিলাগঠিত বন্ধুর ভূমিরূপ, উন্মুক্ত হয়ে পড়ে এবং কালক্রমে বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে তা প্রায় সমতল ভূমিতে পরিণত হয়। এই সমতল মরুভূমিকে সাহারা মরুভূমির অন্তর্গত আলজেরিয়ায় হামাদা বলে।
6. ধান্দ কাকে বলে ?
প্রবল বায়ু প্রবাহ মরু অঞ্চলের আলগা বালুকণা ও শিলাচূর্ণকে এক জায়গা থেকে অন্যত্র উড়িয়ে নিয়ে যায়। এই প্রক্রিয়ার নাম অপসারণ। এই অপসারণের ফলে ক্ষয় প্রবণ স্থানে ভূমির উচ্চতা কমে গিয়ে কড়াইয়ের মতো অবনত স্থান বা খাদ তৈরি হয় থাকে অপসারণ গর্ত বলে। রাজস্থানের থর মরু অঞ্চলে এই অপসারণ গর্তগুলি স্থানীয়ভাবে ধান্দ নামে পরিচিত।
7.
8. ওয়াদি কী ?
ওয়াদি একটি আরবি শব্দ। যার অর্থ শুষ্ক উপত্যকা। মরুভূমির শুষ্ক নদীখাতকে ওয়াদি বলে। মরুভূমিতে কখনো কখনো প্রবল বৃষ্টিপাত হলে সাময়িকভাবে এই নদীগুলি জলপূর্ণ হয়ে ওঠে। থর মরুভূমিতে ওয়াদিকে নালা বলে।
উদাহরণ -সৌদি আরবের আল -বাটন একটি বিখ্যাত ওয়াদি।
9. গাসি কী ?
মরু অঞ্চলে কোনো কোনো সময় সিফ বালিয়াড়ি গুলি একে অপরের সমান্তরালে গড়ে ওঠে। সেক্ষেত্রে দুটি সিফ বালিয়াড়ির মাঝখানের লম্বা ফাটল অংশ বা করিডর গুলি সাধারণত বালিবিহীন থাকে এবং প্রস্তরখন্ডে পূর্ণ বা শিলাদ্বারা গঠিত হয়। এইসব করিডরকে সাহারায় গাসি বলে।
10. নিডিল কী ?
11. ধ্রিয়ান কি ?
মরু অঞ্চলে বায়ু প্রবাহের দিক বা গতি পরিবর্তনের কারণে বেশিরভাগ বালিয়াড়ি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরে। এজন্য এদের নাম চলমান বালিয়াড়ি। রাজস্থানের মরু অঞ্চলে এই ধরণের অস্থায়ী বালিয়াড়ি বলে।
বৈশিষ্ট্য - (i) এগুলি উন্মুক্ত মরুভূমিতে গঠিত হয়।
(ii) বায়ুপ্রবাহের দিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এগুলির দিক ও বিস্তার পরিবর্তিত হয়।
12. ব্লো আউট কী ?
মরু অঞ্চলে বায়ুর অপসারণ কার্যের ফলে আলগা বালিরাশি সরে গিয়ে গঠিত বিভিন্ন আকার ও আয়তনের ছোটো বড়ো গর্ত বা অবনত ভূমিকে মরুখাত বা অপসারণ গর্ত বা ব্লো আউট বলে।
উদাহরণ - আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানা থেকে টেকসাস পর্যন্ত কয়েক ফুট থেকে কয়েকশো ফুট গভীর অসংখ্য ব্লো আউট দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য - (i) এগুলি সাধারণ বালির সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত অঞ্চলে দেখা যায়।
(ii) অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রাকার গর্তগুলিকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাফেলো গর্ত এবং বৃহৎ গর্তগুলিকে মঙ্গোলিয়ায় প্যাংকিয়াং গর্ত বলে।
13.মোনাডনক ও ইনসেলবার্জ-র পার্থক্য -
মোনাডনক | ইনসেলবার্জ |
(i) সমপ্রায় ভূমির মাঝে অবস্থিত কঠিন শিলা গঠিত অনুচ্চ টিলা বা পাহাড় গুলো মোনাডনক। | (i) মরুভূমির মাঝে দ্বীপের মতো বিচ্ছিন্ন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন শিলা গঠিত অনুচ্চ টিলাগুলিকে বলা হয় ইনসেলবার্জ। |
(ii) এটি নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত হয়। | (ii) এটি বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত হয়। |
(iii) মোনাডনক আদ্র অঞ্চলে গঠিত হয়। | (iii) ইনসেলবার্জ শুষ্ক মরু অঞ্চলে গঠিত হয়। |
(iv) এটি দেখতে অনেকটা ওল্টানো গামলার মতো হয়। | (iv) এর শিখর দেশ দেখতে কিছুটা গোলাকার হলেও পার্শ্বদেশ খারাই হয়। |
14.মেসা ও বিউট-র পার্থক্য -
মেসা | বিউট |
(i) স্পেনীয় শব্দ মেসা কথার অর্থ টেবিল। | (i) ফরাসি শব্দ বিউট কথার অর্থ ক্ষুদ্র পাহাড় বা ঢিবি। |
(ii) মালভুমি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে মেসা সৃষ্টি হয়। | (ii) মেসা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বিউট সৃষ্টি হয়। |
(iii) এগুলি আকারে বৃহৎ হয় | (iii) এগুলি আকারে ছোটো হয় |
(iv) মেসার পার্শ্বদেশ মালভূমির মতো খাড়াই হয়। | (iv) বিউটের পার্শ্বদেশ অপেক্ষাকৃত কম খাড়াই হয়। |
(v) মেসার শীর্ষদেশ সমতল হয়। | (v) বিউটের শীর্ষদেশ কিছুটা অসমতল হয়। |
15. বার্খান ও সিফ-র পার্থক্য-
বার্খান | সিফ |
(i) মরু অঞ্চলে বায়ুর প্রবাহপথে আড়াআড়ি ভাবে গঠিত বালিয়াড়িকে বার্খান বলে। | (i) মরু অঞ্চলে বায়ুর প্রবাহপথের সমান্তরালভাবে গঠিত বালিয়ারিকে সিফ বলে। |
(ii) বার্খান একটি তুর্কি শব্দ। যার অর্থ কিরঘিজ স্তেপ অঞ্চলের বালিয়াড়ি। | (ii) সিফ একটি আরবি শব্দ। যার অর্থ সোজা তরবারি। |
(iii) বার্খান দেখতে অর্ধচন্দ্রাকৃতির মতো হয়। | (iii) সিফ শৈলশিরার মতো দেখতে হয়। |
(iv) বার্খানের সামনের দিক উত্তল এবং পিছনের দিক অবতল এবং দু দিকে শিঙ -এর অবস্থান থাকে | (iv) সিফ বালিয়াড়ির শীর্ষভাগ তীক্ষ্ণ করাতের মতো ও অগ্রভাগ সূচালো হয়। |
(v) বার্খান গুলির দৈর্ঘ্য ৫০ - ২০০ মিটার প্রস্থ ৩০ - ১৫০ মিটার হয়। | (v) সিফ -এর দৈর্ঘ্য ৫০ -২০০ কিলোমিটার হয়। |
(vi) বার্খান এর উচ্চতা 10- 90 মিটার হতে পারে। | (vi) সিফ এর উচ্চতা 100 - 200 মিটার পর্যন্ত হতে পারে। |
(vii) মরু পর্যটন হেরিন বার্খানের নামকরণ করেন। | (vii) ভূমিরূপ বিজ্ঞানী ব্যাগনল্ড সিফ বালিয়াড়ির নামকরণ করেন। |
16. প্লায়া কী ?
প্লায়া একটি স্পেনীয় শব্দ যার অর্থ লবনাক্ত হ্রদ। মরু অঞ্চলের লবনাক্ত জলের হ্রদগুলিকে প্লায়া বলে। সাধারণত মরু অঞ্চলে হঠাৎ মুষলধারে বৃষ্টি হলে চারপাশের উচ্চভূমি থেকে মধ্যভাগের নিম্নভূমিতে বা উপত্যকায় লবনাক্ত জলের অগভীর হ্রদ বা প্লায়া সৃষ্টি হয়।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমভাগে এবং মেক্সিকোতে এই প্লায়া হ্রদকে বোলসন বলা হয়। এছাড়া প্লায়া অস্ট্রেলিয়ায় প্যান, আফ্রিকায় শটস এবং সৌদি আরবে সবখা নামে পরিচিত।
উদাহরণ -রাজস্থানের সম্বর বা পুস্কর হ্রদ প্লায়ার উদাহরণ। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের লা -প্লায়া পৃথিবীর বৃহত্তম প্লায়া হ্রদ।
17. পেডিমেন্ট ও বাজাদা পার্থক্য লেখো।
পেডিমেন্ট | বাজাদা |
(i) মরু অঞ্চলে বায়ু ও জনধারার সম্মিলিত কার্যের ফলে সৃষ্ট কঠিন শিলা গঠিত পর্বত পর্যন্ত প্রসারিত ঢালকে পেডিমেন্ট বলে। | (i) মরু অঞ্চলে জলধারা গঠিত পলল ব্যাজনী একত্রিত হয়ে বাজাদা গঠিত হয়। |
(ii) পেডিমেন্টের Pedi কথার অর্থ পাদদেশ এবং Mont শব্দের অর্থ পাহাড় বা পর্বত। | (ii) বাজাদা শব্দটি এসেছে স্প্যানিশ শব্দ - বাহাদা থেকে যার অর্থ পাশাপাশি সৃষ্ট একাধিক পলল পাথরে গঠিত সমভূমি বিশেষ। |
(iii) পেডিমেন্ট মৃদু ঢালযুক্ত সমতলক্ষেত্র। | (iii) বাজাদা পেডিমেন্ট অপেক্ষা স্বল্প ঢালযুক্ত সমভূমি বা সমপ্রায় ভূমি। |
(iv) পেডিমেন্ট সাধারণ ক্ষয়কার্যের মাধ্যমে গড়ে ওঠে। | (iv) বাজাদা প্রধানত সঞ্চয়কার্যের ফলে গড়ে ওঠে। |
(v) পেডিমেন্টের একদিকে থাকে ইনসেলবার্জ এবং অন্যদিকে থাকে বাজাদা। | (v) বাজাদার একদিকে থাকে পেডিমেন্ট এবং অন্যদিকে থাকে প্লায়া। |
(vi) সাহারা এবং আটাকামা মরুভূমিতে পেডিমেন্ট দেখা যায়। | (vi) ভারতের থর মরুভূমির জয়সলমীরে বাজাদা দেখা যায়। |
18. গ্রেট গ্রীন ওয়াল কাকে বলে ?
উত্তর আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির অন্তর্গত আলজিরিয়া, টিউনেসিয়া, মরক্কো, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, মালি, চাদ প্রভৃতি ১১ টি দেশে মরুকরণ বেড়ে চলেছে। সাহারা মরুভূমির দক্ষিণ দিকে দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। সাহারা এই সম্প্রসারণ প্রতিরোধের জন্য পূর্বে জিবুতি থেকে পশ্চিমে সেনেগাল পর্যন্ত দীর্ঘ বৃক্ষ সমন্বিত সবুজ প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে একে গ্রেট গ্রীন ওয়াল বলে। পূর্ব -পশ্চিমে এর দৈর্ঘ্য 7775 কিলোমিটার এবং উত্তর -দক্ষিণে এর বিস্তৃতি প্রায় 15 কিমি।
19. ‘CAZRI’-কী ?
CAZRI - এর পুরো কথা হলো -Central Arid Zone R Institute.
ভারতের মরু সম্প্রসারণ প্রতিরোধের জন্য এবং শুষ্ক মরু অঞ্চলের মৃত্তিকা জলবায়ু সংক্রান্ত গবেষণার জন্য এই সংস্থা কাজ করে। এর সদর দপ্তর রাজস্থানের যোধপুরে অবস্থিত।
20. এয়োলিয়াস মরুভুমি কাকে বলে ?
গ্রিক বায়ু দেবতার এয়োলিয়াস তার নামানুসারে বায়ু প্রবাহের সঙ্গে যুক্ত বা বায়ুর কার্যের ফলে গঠিত সবধরনের ভূমিরূপকে এয়োলিয়ান ভূমিরূপ বলা হয়। যেমন - জিউগেন, ইনসেলবার্জ, ইয়ারদাং, লোয়েস সমভূমি ইত্যাদি।
21. উত্তর এবং দক্ষিণ গোলার্ধের দুটি করে উষ্ণ মরুভূমির নাম লেখো।
উত্তর গোলার্ধের দুটি উষ্ণ মরুভুমি - গোবি, রাব -আল -খালি, টাকলামাকান ইত্যাদি।
দক্ষিণ গোলার্ধের দুটি উষ্ণ মরুভুমি - কালাহারি, আটাকামা, নামিব ইত্যাদি।
2/3 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর :
টীকা :
1. i. বারখান :
ধারণা -প্রবাহমান বায়ুর গতিপথের সঙ্গে আড়াআড়িভাবে একেবারে আধখানা চাঁদের মতো যেসব বালিয়াড়ি গড়ে ওঠে তাকে বারখান বলে।
বৈশিষ্ট্য -i. বারখান প্রকৃতপক্ষে তির্যক বালিয়াড়ির একটা রূপ।
ii. উচ্চতা 15 থেকে 30 মিটার পর্যন্ত হতে পারে।
iii. এগুলি সাধারণত চলমান হয়।
ii. সিফ বালিয়াড়ি :
ধারণা - আরবি শব্দ ‘সিফ’-এর অর্থ তরবারি। বায়ুপ্রবাহের সমান্তরালে সৃষ্ট সুদীর্ঘ ও সংকীর্ণ শৈলশিরার মতো বালিয়াড়িকে সিফ বালিয়াড়ি বলে।
বৈশিষ্ট্য - i. এগুলি সমান্তরাল ও সুদীর্ঘ হয়।
ii. প্রস্থ মোটামুটি উচ্চতার 6 গুণ।
iii. বালিয়াড়ির শীর্ষদেশ তীক্ষ্ণ করাতের মতো হয়।
iii. লোয়েস সমভূমি :
ধারণা - মরুভূমির খুব সূক্ষ্ম বালুকণা ও পলিকণা বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে বহুদূর পর্যন্ত উড়ে গিয়ে সঞ্চিত হলে তাকে লোয়েস বলে।
এভাবে বিস্তৃত অবনত এলাকায় লোয়েস সঞ্চিত হয়ে যখন সমভূমি সৃষ্টি করে তাকে লোয়েস সমভূমি বলে।
উদাহরণ : উত্তর চিনের গোবি মরুভূমির বালি হোয়াংহো নদীর অববাহিকায় সঞ্চিত হয়ে লোয়েস সমভূমি সৃষ্টি করেছে।
iv. পেডিমেন্ট ও বাজাদা :
পেডিমেন্ট ধারণা - মরু অঞ্চলের পর্বতের পাদদেশে সৃষ্ট মরু সমপ্রায়ভূমির উপর মূলত ক্ষণস্থায়ী নদী ছড়ানো জলধারা ও কিছুটা বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে সেখানে যে সামান্য ঢালু প্রস্তরগঠিত ভূমিভাগের সৃষ্টি হয়, তাকে পেডিমেন্ট বলে।
উদাহরণ : সাহারার উত্তর-পশ্চিমে আটলাস পর্বতের পাদদেশে পেডিমেন্ট দেখা যায়।
বাজাদা এর ধারণা - সাধারণত মরু অঞ্চলের পর্বতের পাদদেশে যে সামান্য ঢাল বিশিষ্ট শিলাময় ভূমি বা পেডিমেন্ট থাকে, তার নীচে বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে পলি সঞ্চিত হয়ে এক সমতলক্ষেত্র গঠিত হয় তাকে বাজাদা বলে।
বৈশিষ্ট্য - i. এর ঢাল 1 থেকে 10 মিটার পর্যন্ত হয়।
ii. পলি, কাদা, নুড়ি ইত্যাদি সঞ্চিত হয়ে বাজাদা গঠিত হয়।
উদাহরণ -আটলাস পর্বতের পাদদেশে বাজাদা অবস্থিত।
ওয়াদি :
ধারণা - মরু অঞ্চলের ক্ষীণকায়, অনিত্যবহ ও ক্ষণস্থায়ী প্রকৃতির নদীগুলোকে ওয়াদি বলে।
বৈশিষ্ট্য : i. খাত প্রায় থাকে না বললেই চলে।
ii. প্রবল বৃষ্টিপাতের সময় অন্য সময় শুষ্ক থাকে।
উদাহরণ - সৌদি আরবের আল বাটন একটি বিখ্যাত ওয়াদি।
vi. হামাদা
ধারণা - শিলা দ্বারা গঠিত মরুভূমিকে হামাদা বলে। সাধারণত কোনো মরুভূমিতে বায়ুর অপসারণ প্রক্রিয়ায় বালিকণা প্রায় সম্পূর্ণরূপে অপসারিত হলে সেখানে একটি শিলাগঠিত বন্ধুর ভূমি উন্মুক্ত হয়ে পড়ে এবং কালক্রমে বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে তা প্রায় সমতলভূমিতে পরিণত হয়। এই সমতলভূমিকে সাহারা মরুভূমির অন্তর্গত আলজেরিয়ায় হামাদা বলে।
vii. মরূদ্যান :
ধারণা - অনেক সময় মরু অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে বিরাট এলাকাজুড়ে বালি অপসারিত হতে হতে অবনত অংশটির গভীরতা ভূগর্ভের জলস্তর পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এর ফলে সেখানে তখন সহজেই জলের সন্ধান পাওয়া যায় এবং নানাধরনের গাছ জন্মায়, এইভাবে ধু-ধু মরুভূমির মাঝে গাছপালায় ঢাকা যে সবুজ ভূমিটি গড়ে ওঠে, তাকে মরূদ্যান বলে।
viii. ধ্রিয়ান
সংজ্ঞা : মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের দিক বা গতি পরিবর্তনের কারণে বেশিরভাগ বালিয়াড়িই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরে সরে যায়। এজন্য এদের নাম চলমান বালিয়াড়ি। রাজস্থানের মরু অঞ্চলের এই ধরণের অস্থায়ী বালিয়াড়িকে ধ্রিয়ান বলে।
বৈশিষ্ট্য - i. এগুলি উন্মুক্ত মরুভূমিতে গঠিত হয়।
ii. বায়ুপ্রবাহের দিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এগুলির দিক ও বিস্তার পরিবর্তিত হয়।
ix. মরুখাত বা ব্লোআউট
সংজ্ঞা : মরু অঞ্চলে বায়ুর অপসারণ কার্যের ফলে আলগা বালিরাশি সরে গিয়ে গঠিত বিভিন্ন আকার ও আয়তনে ছোট বড়ো গর্ত বা অবনত ভূমিকে মরুখাত বলে।
বৈশিষ্ট্য -i. এগুলি সাধারণত বালিয়াড়ি অথবা বালির সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত অঞ্চলে দেখা যায়।
ii. বায়ুর অপসারণসৃষ্ট অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রাকার গর্তগুলিকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে বাফেলো গর্ত এবং বৃহৎ গর্তগুলিকে মঙ্গোলিয়ায় পগংকিয়াং গর্ত বলে।
x. আর্গ
সংজ্ঞা - পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রকারের মরুভূমি দেখতে পাওয়া যায়। যেমন- শিলাময়, বালিময় ইত্যাদি। এর মধ্যে বিস্তীর্ন বালিঢাকা মরুভূমিকে সাহারায় আর্গ বলে এবং এশিয়ায় এরই নাম কুম।
উদাহরণ - সৌদি আরবের রুব আল খালি একটি সুবিশাল আর্গ।
xi. অডাডোব
পরিচিতি : উত্তর আমেরিকার মিসিসিপি-মিসৌরি নদীর উপত্যকায় গড়ে ওঠা লোয়েস সমভূমিকে স্থানীয় ভাষায় অডাডোব বলে।
xii. ধান্দ
ধারণা - প্রবল বায়ুপ্রবাহ মরু অঞ্চলের আলগা বালুকণা ও শিলাচূর্ণকে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় উড়িয়ে নিয়ে যায়। এই প্রক্রিয়ার নাম অপসারণ। এই অপসারণের ফলে ক্ষয়প্রবণ স্থানে ভূমির উচ্চতা কমে গিয়ে কড়াইয়ের মতো অবনত স্থান বা খাদ তৈরি হয় তাকে অপসারণ গর্ত বলে।
রাজস্থানের থর মরু অঞ্চলে এই ধরণের যেসব অপসারণ গর্ত আছে, সেগুলির স্থানীয় নাম হল ধান্দ।
xiii. গ্রেট গ্রিন ওয়াল
ধারণা : আফ্রিকা মহাদেশের সমগ্র উত্তর ভাগ জুড়ে থাকা পৃথিবীর বৃহত্তম উষ্ণ মরুভূমি সাহারার সম্প্রসারণ প্রতিরোধের জন্য মরুভূমিটির দক্ষিণ সীমা বরাবর যে একটি সবুজ উদ্ভিদের প্রাচীর গড়ে তোলা হয়েছে, তারই নাম হল গ্রেট গ্রিন ওয়াল।
xiv. CAZRI
পরিচিতি : CAZRI- র পুরো কথাটি হল Central Arid Zone Research Institute.
ভারতে থর মরু অঞ্চলের সম্প্রসারণ প্রতিরোধের জন্য এই সংস্থাটি কাজ করে এবং এর সদর দপ্তর রাজস্থানের যোদপুরে অবস্থিত।
2. মরুকরণ কাকে বলে ?
উঃ - ধারণা - ধারাবাহিকভাবে মরুভূমির সম্প্রসারণ তথা আয়তন বৃদ্ধিকে বাংলায় মরুকরণ বলে।
অন্যভাবে বলা যায়, কোনো স্থানে ভূমির জৈবিক ক্ষমতা হ্রাস পেলে বা ধ্বংস হলে সেখানে ভূমিভাগের যে চূড়ান্ত অবনমন ঘটে অর্থাৎ মরুসদৃশ অবস্থা সৃষ্টি হয়, তাকে মরুকরণ বলে।
মরুকরণের কারণ - সাধারণতঃ মরুভূমিসংলগ্ন অঞ্চলে ধুলোবালির ঝড়, তীব্রগতির বায়ুপ্রবাহ, অতিরিক্ত বাষ্পীভবন, কৃষিভূমি ও তৃণভূমিতে বালিয়াড়ি গড়ে ওঠা খরা ভূমিক্ষয় প্রকৃতির মাধ্যমে মরুকরণ ঘটে।
3. মরুবিস্তার বলতে কি বোঝো ?
উঃ -ধারণা - মরুভূমির পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহ বা মরুসংলগ্ন অঞ্চলে মরুভূমির প্রসার ঘটলে, তাকে মরুবিস্তার বলা হয়।
মরুবিস্তারের কারণ - সাধারণত মরুভূমির আলগা বালুকারাশি প্রবল বায়ুপ্রবাহে বা মরুঝড়ের মাধ্যমে বাহিত হয়ে সংলগ্ন এলাকাসমূহে পতিত হলে ওইসব ভূমি ক্রমশ বালিতে ঢাকা পড়ে যায় এবং তার ফলে উর্বরতা হারিয়ে তা মরুভূমিতে পরিণত হয়। এইভাবেই রাজস্থানের থর মরুভূমির পূর্বদিকে বেশ কিছুটা বিস্তার বা সম্প্রসারণ ঘটেছে।
4. রেগ বা সেরির কাকে বলে ?
ধারণা - মরু অঞ্চলে গোলাকার শিলা, নুড়ি এবং কোনাকার শিলাখন্ড দিয়ে গঠিত ভূমিকে ডেজার্ট ফ্লোব বলে। দীর্ঘদিন ধরে বায়ুর অপসারণ প্রক্রিয়ায় ভূমি থেকে বালি সরে গেলে ডেজার্ট পেডিমেন্ট গঠিত হয়। এই জাতীয় ভূমিরূপকে পশ্চিম সাহারায় রেগ ও পূর্ব সাহারায় সেরির বলে।
5. গাসি কাকে বলে ?
সংজ্ঞা : মরু অঞ্চলে কোনো কোনো সময় সিফ বালিয়াড়িগুলি একে অপরের সমান্তরালে গড়ে ওঠে, সেক্ষেত্রে দুটি সিফ বালিয়াড়ির মাঝখানের লম্বা ফাটল অংশ বা করিডরগুলি সাধারণত বালি বিহীন থাকে এবং প্রস্তর খন্ডে পূর্ন বা শিলাদ্বারা গঠিত হয়, এইসব করিডরকে সাহারায় গাসি বলে।
5 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর :
1. বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলির চিত্রসহ বর্ননা দাও।
উঃ - বায়ুর ক্ষয়কার্যের প্রভাব সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায় শুষ্ক বা মরু অঞ্চলে। বায়ু প্রধানত তিনটি পদ্ধতিতে ক্ষয়কার্য করে। এগুলি হল অবঘর্ষ, অপসারণ ও ঘর্ষণ। বায়ুর এই ক্ষয়কার্যের ফলে কতকগুলি বৈশিষ্টপূর্ন ভূমিরূপ গড়ে ওঠে। যেমন - গৌর, জিউগেন, ইয়ারদাং, ইনসেলবার্জ, অপসারণ গর্ত প্রভৃতি। নিম্নে বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত প্রধান ভূমিরূপগুলির বর্ননা দেওয়া হল।
৩. এওলিয়ান ভূমিরূপ কাকে বলে ?
গ্রিক বায়ুদেবতার নাম এওলিয়াস।তাঁর নামানুসারে সাধারণভাবে বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে যুক্ত বা বায়ুপ্রবাহের দ্বারা সংঘটিত সব ধরনের কাজকে একত্রে এওলিয়ান বলে , প্রকৃতপক্ষে বায়ুপ্রবাহ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বহির্জাত প্রাকৃতিক শক্তি। এটি ক্ষয়সাধন, বহন, অধঃক্ষেপন বা সঞ্চয়কাজের মাধ্যমে মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলে এবং ক্ষেত্রবিশেষে সমুদ্রোপকূলে ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটিয়ে যে নুতন ভূমিরূপ গড়ে তোলে, তাকেই এওলিয়ান ভূমিরূপ বলে।
উদাহরণ -কয়েকটি উল্লেখযোগ্য এওলিয়ান ভূমিরূপ হল -জিউগেন, ইয়ারদাং, ইনসেলবার্জ, লোয়েস সমভূমি, বালিয়াড়ি প্রভৃতি।
৪. বার্খান বালিয়াড়ি ও সিফ বালিয়াড়ির পার্থক্য লেখো।
বার্খান
মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহপথে আড়াআড়ি বালিয়াড়িকে বারখান বলে।
বার্খান একটি তুর্কী শব্দ, যার অর্থ কিরঘিজ স্তেপ অঞ্চলের বালিয়াড়ি।
মরু পর্যটক হেডিন এর নাম দেন।
অর্ধচন্দ্রাকৃতি হয়।
সম্মুখভাবে উত্তল ও পশ্চাদভাগ অবতল ও দুদিকে শিং-এর অবস্থান থাকে।
বারখানগুলি দৈর্ঘ্যে ৫০-২০০ মি. হতে পারে, প্রস্থে ৩০-১৫০ মি. হয়।
১০-৩০ মি.
বারখান ভেঙে সিফ বালিয়াড়ি গঠন করে।
সিফ বালিয়াড়ি
মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহপথের সমান্তরালে সজ্জিত বালিয়াড়িকে সিফ বালিয়াড়ি বলে।
সিফ একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ সোজা তরবারি।
ভূমিরূপ বিজ্ঞানী বাগনল্ড এর নাম দেন।
শৈলশিরার মতো দেখতে হয়।
শীর্ষভাগ তীক্ষ্ণ করাতের মতো ও অগ্রভাগ সূচালো হয়।
সিফ এর দৈর্ঘ্য ৫০-২০০ কিমি পর্যন্ত হতে পারে।
১০-২০০ মি.
সিফ থেকে বার্খান সৃষ্টি করে না।
৫. পৃথিবীর কোথায় কোথায় মরুভূমি দেখা যায় ?
উঃ - পৃথিবীর মোট স্থলভাগের প্রায় 13 ভাগ বা 30 ভাগ হল মরুভূমির অন্তর্গত। এগুলি রয়েছে নিম্ন অক্ষাংশে বা ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে এবং মধ্য অক্ষাংশে বা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে।
1. নিম্ন অক্ষাংশের মরুভূমি - পৃথিবীর উভয় গোলার্ধের প্রধানত 20૦-30૦ অক্ষাংশের মধ্যে মহাদেশের পশ্চিমদিকে সবচেয়ে বেশি মরুভূমি গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে - i. আফ্রিকার সাহারা ও কালাহারি ii. এশিয়ার আরব মরুভূমি এবং ভারত পাকিস্তানের থর মরুভূমি iii. উত্তর আমেরিকার সোনেরান iv. দক্ষিণ আমেরিকার আটাকামা v. অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম অস্ট্রেলীয় মরুভুমি উল্লেখযোগ্য।
2. মধ্য অক্ষাংশের মরুভূমি - i. এশিয়ার গোবি, তাকলামাকান ও তুর্কিস্তানের মরুভূমি ii. উত্তর আমেরিকার মোহাভি ও কলেরাডো মরুভূমি iii. দক্ষিণ আমেরিকার প্যাটাগোনিয়া মরুভুমি প্রভৃতি মধ্য অক্ষাংশের উল্লেখযোগ্য মরুভুমি।
চিত্রসহ বায়ুর সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ গুলির পরিচয় দাও।
উঃ - বায়ুর গতিপথে কোনো ঝোপঝাড়, বড়ো শিলাখন্ড বা কোনো উঁচুভূমি অবস্থান করলে বায়ুবাহিত বিভিন্ন বালুকণা তাতে বাধা পেয়ে ওই স্থানে সঞ্চিত হয়, একে বায়ুর সঞ্চয়কাজ বলে।
বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে প্রধানত দুই ধরণের ভূমিরূপ গঠিত হয় -
(ক) বালিয়ারি (খ ) লোয়েস সমভূমি
বালিয়ারি
বায়ু প্রবাহপথে কোনো স্থানে বাধা পেলে যে উঁচু ও দীর্ঘ ঢিবিয়ের আকারে বালির স্তুুপ গঠন করে, তাকে বালিয়ারি বলে।
শ্রেণিবিভাগ - বিখ্যাত বিজ্ঞানী ব্যাগনল্ড বালিয়ারিকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন।
যথা -(i)তির্যক বালিয়ারি (ii) অনুদৈর্ঘ্য বালিয়ারি
তির্যক বালিয়ারি : যেসব বালিয়ারি বায়ুর গতির সঙ্গে আড়াআড়ি ভাবে গড়ে ওঠে, তাকে তির্যক বালিয়ারি বলে।
একে তিনভাগে ভাগ করা হয়। যথা -(i)বারখান (ii)অ্যাকলে বালিয়ারি (iii) রোডস্ বালিয়ারি
(i)বারখান: বায়ু যেদিক থেকে প্রবাহিত হয় তার আড়াআড়িভাবে যেসব বালিয়ারি গঠিত হয়, তাকে তির্যক বালিয়ারি বলে।
যেসব তির্যক বালিয়ারি দেখতে অনেকটা আধখানা চাঁদের মতো হয়, তাকে বারখান বলে।
বারখান একটি তুর্কি শব্দ; এর অর্থ হল কিরগিজ স্তেপ অঞ্চলের বালিয়ারি।
উদাহরণ : সাহারা মরুভূমিতে অনেক বারখান দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য :-(i)বারখানের বায়ুপ্রবাহের দিকটা উত্তল ও পেছনের দিকটা অবতল।
(ii)বারখানের দু-প্রান্তে দুটি শিংএর মতো শিরা দেখা যায়।
(iii)বারখান সাধারণত অস্থায়ী হয়।
(iv)মরুদ্যান অঞ্চলের নিকট বারখান সাধারণত স্থায়ী হয়।
(v)বারখান- এর উচ্চতা সাধারণত 15-30 মিটার পর্যন্ত হয়। এক একটি বারখান প্রায় 5-200 মি. স্থান জুরে অবস্থান করে।
(ii) অ্যাকলে বালিয়ারি : একাধিক বারখান পরস্পর পাশাপাশি অবস্থান করার ফলে যে আঁকাবাকা ও সারিবদ্ধ শৈলশিরার মতো বালিয়ারি শ্রেণির সৃষ্টি হয়, তাদের একত্রে অ্যাকলে বালিয়ারি বলা হয়।
এই বালিয়ারির বাঁকের সামনের অংশকে লিংগুওয়েড বলে। এবং পেছনের অংশকে বারখানওয়েড বলে।
উদাহরণ -সাহারা মরুভূমিতে অ্য়াকলে বালিয়ারি দেখা যায়।
(iii) রোডস্ বালিয়ারি: যেসব তির্যক বালিয়ারি দেখতে অনেকটা পিরামিডের মতো, সেই বালিয়ারিকে রোডস্ বালিয়ারি বলে।
বিভিন্ন দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হলে বারখান গুলি রোডস্ বালিয়ারিতে পরিণত হয়।
উদাহরণ -সাহারা মরুভূমিতে রোডস্ বালিয়ারি দেখা যায়।
অনুদৈর্ঘ্য বালিয়ারি :আরবি শব্দ ‘সিফ্’- কথার অর্থ সোজা তরবারি, বায়ুর গতির সঙ্গে সমান্তরালে যেসব বালিয়ারি গঠিত হয়, তাদের অনুদৈর্ঘ্য বালিয়ারি বা সিফ্ বলে। এদের মধ্যে যেসব বালিয়ারি খুব লম্বা বা সরু তাদের সিফ্ বালিয়ারি বলে।
উদাহরণ -ভারতের থর, অস্ট্রেলিয়া ও কালাহারি মরুভূমিতে সিফ্ বালিয়ারি দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য :-(i) সিফ্ বালিয়ারি গুলি পরস্পরের সমান্তরালে অবস্থান করে।
(ii)ভূবিজ্ঞানী ব্যাগনল্ড -এর মতে বারখান গুলি ক্রমশ ভেঙে সিফ্ বালিয়ারি পরিণত হয়।
(iii) সিফ্ বালিয়ারি লম্বায় কয়েক কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।
(iv)এদের উচ্চতা অনেকসময় 100m. এর বেশি হয়।
(v)দুটি সিফ্ বালিয়ারির মধ্যবর্তী অংশকে কোরিডর বলে।
অন্যান্য বালিয়ারি : উল্লেখিত দুই প্রধান বালিয়ারি ছাড়াও উৎপত্তি, আকার ও অবস্থান অনুসারে আরো অনেক ধরণের বালিয়ারি মরুভূমিতে দেখা যায়। -
(i)মস্তক বালিয়ারি : কোনো শিলাখন্ডে বায়ু বাধা পেলে শিলাখণ্ডের সামনে বা প্রতিবাত অংশে যে বালিয়ারির সৃষ্টি হয়, তাকে মস্তক বালিয়ারি বলে।
(ii)পুচ্ছ বালিয়ারি :বায়ুপ্রবাহ শিলাখন্ডে বাধা পেলে শিলাখণ্ডের অনুবাত বা বিপরীত অংশে লেজের আকারে যে বালিয়ারি গঠিত হয়, তাকে পুচ্ছ বালিয়ারি বলে।
(iii)অগ্রবর্তী বালিয়ারি : মস্তক বালিয়ারির সামনে ঘূর্ণির সৃষ্টি হয়ে, যে বালিয়ারি সৃষ্টি হয়, তাকে অগ্রবর্তী বালিয়ারি বলে।
(iv)পার্শ্বস্থ বালিয়ারি : শিলাখণ্ডের উভয়দিকে বালুকণা সঞ্চিত হয়ে, যে বালিয়ারির সৃষ্টি হয়, তাকে পার্শ্বস্থ বালিয়ারি বলে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এরূপ বালিয়ারিকে ওয়েক বালিয়ারিও বলা হয়।
(v)নক্ষত্র বালিয়ারি :বিভিন্ন দিক থেকে আসা বাতাসের মাধ্যমে প্রস্তর খণ্ড, গাছপালা প্রভৃতির বিভিন্ন দিকে বালিয়ারি সৃষ্টি হলে, তাকে নক্ষত্র বালিয়ারি বলে।
(vi)অস্থায়ী বা চলমান বালিয়ারি : প্রবল বায়ুপ্রবাহের প্রভাবে অনেকসময় মরু অঞ্চলে বিভিন্ন বালিয়ারিকে সরে সরে সঞ্চিত হতে দেখা যায়, এদের চলমান বালিয়ারি বলে।
রাজস্থানের মরুস্থলিত চলমান বালিয়ারিকে ধ্রিয়ান বলে।
(vii)দ্রাস বালিয়ারি বা হোয়েল ব্যাক বালিয়ারি :তির্যক বালিয়ারি অনেকসময় তিমির পিঠের মতো আকৃতিতে পরিণত হয়, এদের দ্রাস বালিয়ারি বা হোয়েল ব্যাক বালিয়ারি বলে।
(viii)অধিবৃত্তীয় বালিয়ারি : বায়ুর অবনমনের ফলে সৃষ্ট গর্তের দুপাশে অনেকসময় চামচের গর্তের মতো অধিবৃত্তের আকারে বালিয়ারি সৃষ্টি হয়, তাকে অধিবৃত্তীয় বালিয়ারি বলে।
লোয়েস সমভূমি :
লোয়েস শব্দের অর্থ স্থানচ্যূত বস্তু। লোয়েস শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন ভন রিক্টোফেন। প্রবল বায়ুপ্রবাহের প্রভাবে অতিসুক্ষ্ম বালুকণা যখন বহুদূর স্থানে বাহিত হয় ও সঞ্চিত হয়, তখন যে ভূমিরূপ গঠন করে, তাকে লোয়েস সমভূমি বলে।
এইপ্রকার ভূমিরূপকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাডোব ও মধ্য ইউরোপে লিমন বলে।
উদাহরণ -গোবি মরুভূমির হলুদ রঙের বালুরাশি বহুদূরে চিনে হোয়াং-হো অববাহিকায় সঞ্চিত হয়ে বিস্তৃর্ণ হোয়াং-টু লোয়েস সমভূমির সৃষ্টি করেছে।
বৈশিষ্ট্য :(i)লোয়েস সমভূমি দীর্ঘ সময় ধরে সৃষ্টি হয়।
(ii)লোয়েস সমভূমির গভীরতা কয়েকমিটার থেকে কয়েকশো মিটার পর্যন্ত হয়।
(iii)সঞ্চিত লোয়েস প্রবেশ্য ও উর্বর হয়।
(iv)লোয়েস স্তরবিহীন হয়।
বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলির চিত্রসহ বর্ণনা দাও।
বায়ুর ক্ষয়কার্যের প্রভাব সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায় শুষ্ক বা মরু অঞ্চলে।বায়ু প্রধানত তিনটি পদ্ধতিতে ক্ষয়কার্য করে। এগুলি হল অবঘর্ষ, অপসারণ ও ঘর্ষণ। বায়ুর এই ক্ষয়কার্যের ফলে কতকগুলি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ভূমিরূপ গড়ে ওঠে। যেমন -গৌর, জিউগেন, ইয়ারদাং, ইনসেলবার্জ, অপসারণ গর্ত প্রভৃতি। নিম্নে বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত প্রধান ভূমিরূপগুলির বর্ণনা দেওয়া হল।
(i) গৌর -মরু অঞ্চলে কোনো বৃহৎ শিলাখণ্ডের নীচের অংশ কোমল শিলাস্তর ও উপরের অংশ কঠিন শিলাস্তর দ্বারা গঠিত হলে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ার দ্বারা নিচের কোমল শিলা দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সরু হয়ে যায়। ফলে ওপরের অংশ ব্যাঙের ছাতার মতো চওড়া ও চ্যাপ্টা হয়ে অবস্থান করে, তাকে গৌর বলে।
বৈশিষ্ট্য - (i) এগুলি দেখতে ব্যাঙের ছাতার মতো হয় বলে একে মাশরুম রক বলে।
(ii) মরুভূমির মাঝে অবশিষ্ট টিলার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
(iii) এগুলিকে সাহারায় গারা, জার্মানিতে পিলজ্ফেলসেন এবং আমেরিকা ও কানাডায় হুডু্স্ বলে।
উদাহরণ - সাহারা মরুভূমিতে গৌর আকৃতির অনেক শিলাস্তুুপ দেখা যায়।
(ii) জিউগেন -মরু অঞ্চলে আড়াআড়িভাবে কোমল ও কঠিন শিলা ওপর নীচে অবস্থান করলে প্রবল বায়ুপ্রবাহের আঘাতে কোমল শিলা বেশি ও কঠিন শিলা অল্প ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এর ফলে শিলার ওপরের অংশ চওড়া ও চ্যাপ্টা এবং নীচের অংশ সরু হয়ে এক ধরনের মূর্তি গঠন করে, এদের জিউগেন বলে।
উদাহরণ - আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সোনেরান মরুভূমিতে এরূপ জিউগেন দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য - (i)জিউগেন 3-30 মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়।
(ii) জিউগেন -এর উপরিভাগ চ্যাপ্টা ও সমতল হয়।
(iii) ইয়ারদাং -মরু অঞ্চলে কঠিন ও কোমল শিলাস্তর লম্বালম্বিভাবে অবস্থান করলে অবঘর্ষের প্রভাবে কোমল শিলাস্তর দ্রুত ক্ষয়ে যায় ফলে কঠিন শিলাস্তর পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে টিলার আকারে দাঁড়িয়ে থাকে, এদের ইয়ারদাং বলে।
উদাহরণ -আরবের মরুভূমিতে এরূপ ইয়ারদাং দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য-(i) ইয়ারদাং-এর গড় উচ্চতা 6 মিটার।
(ii) ইয়ারদাং- এর প্রস্থ 4-40 মিটার পর্যন্ত হয়।
(iii) ইয়ারদাংকে দেখতে মোরগের ঝুঁটির মতো হয় বলে একে কবস্-কম্ব-রিজ বলে।
(iv) এদের শীর্ষদেশ সূচালো হয়।
(iv) ইনসেলবার্জ -মরু অঞ্চলের কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে ক্ষয়ের ফলে প্রায় সমতলভূমিতে পরিণত হয়, এরূপ সমতল অঞ্চলে অপেক্ষাকৃত কঠিন শিলাস্তর অনেকসময় অনুচ্চ টিলার আকারে বিচ্ছিন্নভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, একে ইনসেলবার্জ বলে।
উদাহরণ -দক্ষিণ আফ্রিকার কালাহারি ও অস্ট্রেলিয়ার মরুভূমি এবং ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমির বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে এরূপ ইনসেলবার্জ দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য -
(i)ইনসেলবার্জ সাধারণত আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলায় গঠিত হয়।
(ii)ইনসেলবার্জের উচ্চতা সাধারণত 30-300 মিটার পর্যন্ত হয়।
(iii)গম্বুজ আকার ইনসেলবার্জকে বোর্ন-হার্ড বলা হয় এবং একসঙ্গে অনেক বড়ো বড়ো ইনসেলবার্জ থাকলে তাকে কপিজ্ বলে।
(v) মেসা ও বাটে :- স্পেনীয় শব্দ মেসা কথার অর্থ টেবিল। মরু অঞ্চলে কোনো মালভূমি দীর্ঘদিন ক্ষয়ের ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে টেবিলের মতো সমতল আকৃতিযুক্ত হয়, এদের মেসা বলে।
ফরাসি শব্দ বাটে কথার অর্থ ঢিবি। মেসাগুলি ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যখন ক্ষুদ্রাকার ঢিবির আকারে অবস্থান করে, তখন তাদের বাটে বলে।
উদাহরণ -আফ্রিকার কালাহারি মরুভূমিতে এবং অস্ট্রেলিয়ার মরুভূমিতে মেসা ও বাটে দেখা যায়।
(vi) অপসারণ গর্ত : মরু অঞ্চলে বালুকারাশি বৃষ্টি ও উদ্ভিদের অভাবে শুষ্ক ও শিথীল অবস্থায় থাকে বলে তীব্র বাতাসের আঘাতে কখনো কখনো বিশাল এলাকাজুড়ে বালি,পলি অপসারিত হয়ে ছোট বড়ো গর্তের সৃষ্টি হয় একে অপসারণ গর্ত বা ব্লোআউট বলে।
উদাহরণ - মিশরের কাতার পৃথিবীর বৃহত্তম অপসারন গর্ত। এই অপসারণ গর্তকে মঙ্গোলিয়াতে প্যাংকিয়াং হোলো, থর মরুভূমিতে ধান্দ এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে বাফেলো গর্ত বলে।
(vii) ভেন্টিফ্যাক্ট ও ড্রাইকান্টার : মরু অঞ্চলে একটি নির্দিষ্ট দিক থেকে সারা বছর প্রবল বেগে বায়ু প্রবাহিত হলে, বায়ুপ্রবাহের দিকে শিলা ক্রমাগত ক্ষয় পেয়ে শিলা মসৃণ ও সুচালো হয়। শিলার অন্যদিক গুলো অমসৃণ থেকে যায় এরূপ ব্রাজিল নাটের মতো দেখতে একদিক সূঁচালো মসৃণ শিলাকে,ভেন্টিফ্যাক্ট বলে।
যেসব মরু অঞ্চলে বিভিন্ন দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয় সেখানে শিলার বিভিন্ন দিক ক্ষয় পেয়ে মসৃণ হয়, এরূপ বিভিন্ন দিকে মসৃন শিলাকে ড্রাইকান্টার বলে।
উদাহরণ -সাহারা এবং কালাহারি মরুভূমিতে ভেনিফ্যাক্ট ও ড্রাইকান্টার দেখা যায়।
প্রশ্নমান -5
3) বায়ু ও জলাধারার মিলিতকার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির পরিচয় দাও।
মরু অঞ্চলে বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না। তবে আকস্মিক যখনই বৃষ্টিপাত হয় তা অত্যন্তই প্রবল হয় এবং বন্যা সৃষ্টি করে। সাময়িক এই হঠাৎ বন্যা বায়ুর সঙ্গে মিলিতভাবে ভূমিরূপের কিছু কিছু পরিবর্তন ঘটায়। নিম্নে মরু অঞ্চলে বায়ু এবং জলধারার কার্যের ফলে গঠিত প্রধান কয়েকটি ভূমিরূপ সম্পর্কে আলোচনা করা হল -
i) ওয়াদি - আরবি শব্দ “ওয়াদি” কথার অর্থ শুষ্ক উপত্যকা। মরুভূমির ক্ষণস্থায়ী শুষ্ক নদীখাতকে ওয়াদি বলা হয়।
উৎপত্তি - বালি এবং পাথরে পূর্ণ মরু অঞ্চলে জলনিকাশের ব্যবস্থা থাকে না। ফলে প্রবল মুষলধারে বৃষ্টিপাত হলে জলনিকাশের জন্য বালির ওপর কিছু অস্থায়ী নদীর সৃষ্টি হয়। পরে জল নেমে গেলে ওইগুলি শুষ্কখাত হিসেবে পড়ে থাকে। এগুলি ওয়াদি নামে পরিচিত।
বৈশিষ্ট্য -
i) এই ওয়াদিগুলি স্বল্প দৈর্ঘ্যের হয়।
ii) প্রায় সারাবছরই নদীখাতগুলি শুষ্ক।
iii) এগুলি উচ্চভূমি থেকে প্লায়া পর্যন্ত বিস্তৃত।
উদাহরণ - আরব মরুভুমি, সোনারান মরুভূমিতে ওয়াদি দেখা যায়।
ii) পেডিমেন্ট - Pedi শব্দের অর্থ পাদদেশ এবং Mont কথার অর্থ পাহাড় বা পর্বত। 1882 খ্রিস্টাব্দে ভূতত্ত্ববিদ গিলবার্ট “পেডিমেন্ট” শব্দটি ব্যবহার করেন। তাঁর মতে শুষ্ক মরু অঞ্চলে পাহাড়ের পাদদেশে শিলাময় মৃদু ভূমিঢালকে পেডিমেন্ট বলে।
উৎপত্তি - আবহবিকার, বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে পর্বতের পাদদেশীয় অংশে বা ইনসেলবার্জের পাদদেশে প্রায় সমতল বা মৃদু ঢাল বিশিষ্ট ভূমিভাগের সৃষ্টি হয়। একে পেডিমেন্ট বলে।
বৈশিষ্ট্য -
i) পেডিমেন্টের ঢাল 1০-10০ এর মধ্যে থাকে।
ii) পেডিমেন্টের ওপর ছোটো ছোটো শিলা খন্ড, বালি, পলি ইত্যাদি থাকতে পারে।
iii) পেডিমেন্ট অনেকসময় অবতল আকৃতির হয়।
উদাহরণ - উত্তর আফ্রিকার আটলাস পর্বতের পাদদেশে পেডিমেন্ট দেখা যায়।
iii) বাজাদা - বাজাদা শব্দটি এসেছে স্প্যানিশ শব্দ বায়াদা থেকে যার অর্থ পাশাপাশি সৃষ্ট একাধিক পললপাথরের সমভূমি বিশেষ।
উৎপত্তি -পেডিমেন্টের উপর দিয়ে প্রবাহিত জলের সঙ্গে বয়ে আসা নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি পেডিমেন্টের পাদদেশে সঞ্চিত হয়ে ত্রিকোণাকার একাধিক পললব্যাজনি সৃষ্টি করে।
এই পললব্যাজনী গুলি পরস্পর যুক্ত হয়ে যে পললভূমি সৃষ্টি করে তাকে বাজাদা বলে।
বৈশিষ্ট্য -i) বাজাদার ঢাল খুব কম হয় বা শুন্য হতে পারে।
ii) এটি একটি সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ।
iii) দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চয়ের ফলে এই ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়।
উদাহরণ - সাহারা মরুভূমিতে বাজাদা দেখা যায়।
iv) প্লায়া - প্লায়া একটি স্পেনীয় শব্দ যার অর্থ লবনাক্ত হ্রদ। মরু অঞ্চলের লবনাক্ত জলের হ্রদগুলিকে প্লায়া বলা হয়। সাধারণত মরু অঞ্চলে হঠাৎ মুষলধারে বৃষ্টি হলে চারপাশের উচ্চভূমি থেকে মধ্যভাগের নিম্নভূমিতে বা উপত্যকায় লবনাক্ত জলের হ্রদ বা প্লায়া সৃষ্টি হয়।
আমেরিকা যুক্তরাষ্টের পশ্চিমভাগে এবং মেক্সিকোতে এই হ্রদকে বোলসন বলা হয়। এছাড়া প্লায়া অস্ট্রেলিয়ায় প্যান, আফ্রিকায় শর্টস, এবং সৌদি আরবে সবখা নামে পরিচিত।
উদাহরণ - রাজস্থানের সম্বর বা পুস্কর হ্রদ প্লায়ার উদাহরণ। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের লা -প্লায়া পৃথিবীর বৃহত্তম প্লায়া হ্রদ।
To get the premium content